বিষণ্ণতা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

বিষণ্ণতা একটি মানসিক ব্যাধি। এর চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। নয়তো ব্যক্তির উৎপাদনশীলতা নষ্ট হয়ে যায়। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৮০তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. ফারজানা রহমান। বর্তমানে তিনি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : একজন মানুষ যেন বিষণ্ণতায় আক্রান্ত না হন এর জন্য আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : প্রথমে যদি বিষণ্ণতার লক্ষণগুলো নিয়ে ভাবি, ক্রমাগত মন খারাপ করে থাকা, একটা খুব বহির্মুখী একটা মানুষ হঠাৎ করে অন্তর্মুখী হয়ে গেল, সে সব কিছুতে নিজেকে ক্রমাগত দোষারোপ করছে, আমার অনেক দোষ হয়ে গেছে, আমার অনেক ভুল হয়ে গেছে, আমার কোনো আশা নেই, সারাক্ষণই ক্রমাগত বিরক্ত হচ্ছে, যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনীহা, মনোযোগ দিতে অনীহা, তার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, কখনো কখনো সে আত্মহত্যার কথাও বলে যে আমার বেঁচে থেকে লাভ নেই। আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। এই লক্ষণগুলো। অথবা ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া। খাওয়ার রুচি বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া অথবা নিদ্রাহীনতা অথবা বেশি ঘুম। এই সব বিষয়গুলো যদি কেউ তাদের সন্তানের মধ্যে লক্ষ করে এবং তাদের প্রিয়জনদের মধ্যে লক্ষ করে, তাদের পরিবারের মানুষের মধ্যে বা সহকর্মীদের মধ্যে দেখি তাহলে কিন্তু এগুলো কতগুলো সতর্কসংকেত। ওই মুহূর্তেই তাকে কোনো একজন মনোরোগ চিকিৎসক অথবা তাদের নিকটে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রশ্ন : অনেকে মনে করেন আমি যদি মানসিক রোগ বা বিষণ্ণতার জন্য ওষুধ খাওয়া শুরু করি, তাহলে কি সারা জীবন খেতে হবে? এখান থেকে উঠে আসতে পারব কি না? ওষুধের প্রতি নির্ভরতা তৈরি হয়ে যাবে কি না? সে ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ, আর কখন ওষুধের দিকে যেতে হবে- আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : একটা কথা আমি অবশ্যই জানিয়ে রাখতে চাই, বিষণ্ণতা হলে কিন্তু মস্তিষ্কের বিভিন্ন রকম রসের মাত্রা কমে যায়। এ জন্যই কিন্তু আমরা সাধারণত ওষুধ চিকিৎসাপত্রে দিয়ে থাকি। এখন বিভিন্ন ধরনের ওষুধ আছে যেগুলো বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে কাজ করে এবং তারা সরাসরি মস্তিষ্কের যে রাসায়নিক পদার্থগুলো আছে, সেগুলোর ওপর কাজ করে। একটি সময় ছিল সত্যি যখন বিষণ্ণতায় আক্রান্তদের যে ওষুধগুলো দেওয়া হতো, তাতে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল।
এখন কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত অনেক ধরনের ওষুধ রয়েছে। অনেক আধুনিক ওষুধ রয়েছে যেগুলো একেবারেই ঘুম ঘুম ভাব আনে না, নেশাগ্রস্ত করে না, সেগুলো আসলে রোগীদের খুব দ্রুত বিষণ্ণতা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া। আমরা কিন্তু সেই রোগীর আর অন্য কোনো অসুখ আছে কি না সেটি দেখি, কারণ আমরা জানি যে অন্য কোনো অসুখের সঙ্গেও বিষণ্ণতা আসতে পারে, কাজেই সেই রোগগুলোর যদি চিকিৎসা করা হয়, তাহলে বিষণ্ণতা সেরে যায়।
প্রশ্ন : যে কারণে তিনি বিষণ্ণ হয়ে পড়ছেন, ওই কারণটাও দূর করার জন্য নিশ্চয়ই মনোযোগ দেবেন?
উত্তর : সেই কারণটাও দূর করা খুব জরুরি। আমরা ওই রোগীর ইতিহাস নিই। যদি তার পারিবারিক ইতিহাস থাকে, সেই ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত দুই বছর বলি নয়তো সাধারণত ছয় থেকে সাত মাস নিয়মিত বিষণ্ণতাবিরোধী ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে তিনি সম্পূর্ণ বিষণ্ণতা থেকে মুক্ত হবেন। আর এর পাশাপাশি ছাড়া ক্রমাগত ঝুঁকি আছে যাদের, বিষণ্ণতার কারণ এগুলোর জন্য কিন্তু ওষুধের পাশাপাশি কাউন্সেলিং, সাইকোথেরাপি, কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি এগুলো খুব কার্যকর ভূমিকা রাখে।