মন খারাপ মানেই কি বিষণ্ণতা?

অনেকেই বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে বিষণ্ণতা বিষয়টি আসলে কী? এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৮০তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. ফারজানা রহমান। বর্তমানে তিনি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকিয়াট্রি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : একটি সময় ছিল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হতো ‘বিষণ্ণতা একটি রোগ’। আসলে বিষণ্ণতা মানেই কি রোগ? বা রোগ যদি ধরেও থাকেন কোন পর্যায়ে গেলে একে রোগ বলা হয়?
উত্তর : বিষণ্ণতা আসলে একটি অনুভূতির নাম। যদি কেউ কখনো খারাপ খবর শোনে, প্রিয়জনের মধ্যে যদি দীর্ঘমেয়াদি অসুখ থাকে, যেকোনো কারণে হোক প্রত্যাশা যদি পূরণ না হয়, মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতা বা হতাশার জন্ম হতেই পারে। কিন্তু যদি কেউ ক্রমাগত দুই সপ্তাহের বেশি বা দিনের অধিকাংশ সময় যদি ক্রমাগত মন খারাপ থাকে, কোনো কিছু ভালো না লাগে, যে বিষয়গুলো আগে তার আনন্দের উৎস হতো, সেখান থেকে যদি সে আনন্দ গ্রহণ করতে না পারে- এই বিষয়টি যদি দুই সপ্তাহের বেশি অতিক্রম হয়, তাহলে আমরা বলব সে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত।
প্রশ্ন : একজন মানুষের বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার কারণগুলো কী।
উত্তর : আসলে একটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিষণ্ণতার সঙ্গে কিন্তু পারিপার্শ্বিকতা ও জিনগত বিষয় দুটো রয়েছে। দুটোই একটি মিথস্ক্রিয়ার ফল এটি। সাধারণত দেখা যায় যাদের মধ্যে পারিবারিক ইতিহাস আছে, বাবা-মা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন কারো না কারো মধ্যে বিষণ্ণতা আছে এবং যাদের যাপিত জীবন একটু ঝুঁকিপূর্ণ-হয়তো কোনো কারণে কারো ক্রমাগতভাবে পরীক্ষার ফল খারাপ হচ্ছে অথবা বেকারত্ব অথবা বাবা-মায়ের দাম্পত্য জীবনে হতাশা, নিজেদের দাম্পত্য জীবনে হতাশা অথবা ছোটবেলা থেকে সে এমন একটি দাম্পত্য জীবনের মধ্যে বড় হয়েছে, বাবা-মায়ের সম্পর্ক যেখানে ভালো ছিল না বা সহিংসতা-এই বিষয়গুলো যাদের মধ্যে থাকে তাদের বিষণ্ণতা হতে পারে। আবার যেসব শিশু কিশোর-কিশোরী ক্রমাগত মানসিক বা শারীরিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, আবার কখনো কখনো যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, ক্রমাগত যাদের জীবনে এই বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতিগুলো থাকে-সহিংসতা, যৌতুকবিষয়ক নির্বাচন বা বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে যাদের প্রতিনিয়ত, তাদের মধ্যে বিভিন্ন মিথস্ক্রিয়তার কারণে বিষণ্ণতা দেখা যেতে পারে।