জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসারে দেশে প্রতি বছর ১২ হাজার নারীর মৃত্যু

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. সারোয়ার বারী বলেছেন, দুঃখজনক হলেও সত্য দেশে প্রতি বছর প্রায় ২১ হাজার নারী স্তন ও জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং মারা যান প্রায় ১২ হাজার নারী।
আজ রোববার (২৫ মে) জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচির উদ্যোগে আয়োজিত প্রকল্পের তথ্য ও বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ডা. সারোয়ার বারী। বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচির আওতায় প্রকল্পের তথ্য, বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল, প্রকল্পের বিস্তার, অগ্রগতি, সফলতা, সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা জনসমক্ষে উপস্থাপন করা হয়।
স্বাস্থ্য সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী বলেন, ‘আমরা চাই মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে। চিকিৎসা যেন মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে, সেজন্য আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য শিক্ষা, যেমন মেডিকেল ও নার্সিং শিক্ষার মান উন্নয়নেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
ডা. সারোয়ার বারী আরও বলেন, ‘চিকিৎসার খরচ দিন দিন বেড়ে চলেছে, যা অনেক সময় মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই এই ব্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। আগেভাগেই রোগ শনাক্ত করা গেলে সহজে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়, ফলে চিকিৎসার খরচও কমে যায়। আজকের অনুষ্ঠানের মূল বিষয় স্ক্রিনিং এবং শুধুই স্ক্রিনিং নয়, এর পাশাপাশি চিকিৎসাও প্রদান করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে যেমন চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস পায়, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের আগেভাগেই সেবা দেওয়া সম্ভব হয়।’
নারীদের চিকিৎসা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রতি বছর দেশে প্রায় ১৩ হাজার নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং মারা যান প্রায় সাত হাজার নারী। একইভাবে, জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত হন প্রায় আট হাজার নারী এবং মারা যান প্রায় পাঁচ হাজার। তবে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে এ দুই ধরনের ক্যানসারের প্রকোপ ও মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা সম্ভব। আমাদের দেশে অনেক নারী যখন হাসপাতালে আসেন, তখন তারা ক্যানসারের অনেক উন্নত পর্যায়ে থাকেন। তখন চিকিৎসা যেমন কঠিন হয়ে যায়, তেমনি ব্যয়বহুলও হয়। তাই এই প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু স্ক্রিনিং নয়, চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছে এবং একটি কার্যকর অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে, যা প্রকল্পের অন্যতম বড় সফলতা।’
ডা. সারোয়ার বারী আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় দেশে প্রায় ৬০০ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং সেবা চালু রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬০ লাখ নারী স্ক্রিনিংয়ের আওতায় এসেছে, তবে আমাদের লক্ষ্য তিন কোটি নারীকে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা। এটি একটি দীর্ঘ পথ, যা এখনও অনেকটাই বাকি। তাই শুধু প্রকল্পের মাধ্যমে নয়, এই কার্যক্রমকে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবার মধ্যেই এটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএমআরসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব (চিকিৎসা শিক্ষা) ডা. নূরে আলম সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার। স্বাগত বক্তব্য দেন বিএমইউর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ। বাংলাদেশে জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং ও প্রতিরোধ কার্যক্রম বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক (ইপিসিবিসিএসপি) অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা।