লিভাপুলের ইতিহাস বইয়ে নতুন অধ্যায়ের নাম ‘রিও এনগুমোয়া’

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ মানেই সাসপেন্স আর থ্রিলের জয়গান। নানা গল্পের পসরা সাজিয়ে বসে তর্কসাপেক্ষে ফুটবল দুনিয়ার সবচেয়ে সেরা ঘরোয়া লিগটি। চলতি মৌসুমেও তৈরি হয়েছে গল্প। সোমবার (২৫ আগস্ট) দিনগত রাতেই যেমন সেই গল্পে নতুন এক অধ্যায় যোগ করলেন রিও এনগুমোয়া।
সোমবার রাতে ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান এনগুমোয়া। লিভাপুলের জয় ছাপিয়ে যাকে নিয়ে এখন আলোচনা সবচেয়ে বেশি। অলরেডদের ৭৩ নম্বর জার্সিপরা এই কিশোর পায়ের জাদুতে স্থান করে নিয়েছেন ভক্তদের মনে। বয়স তার সবে ১৬! তবে তার উত্থানের গল্পটা কিন্তু ভিন্ন।
লিভারপুলের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক রাঙানো এনগুয়ামো উঠে এসেছেন চেলসির একাডেমি থেকে। ব্লুজরা হয়তো এখন আফসোস করতে পারেন। কেননা তাদের এই তরুণ প্রতিভা যে স্ট্যমফোর্ড ব্রিজের পরিবর্তে মাতিয়ে রাখবেন অ্যনফিল্ড।
নিউহামে বেড়ে ওঠা এনগুমোয়া মাত্র আট বছর বয়স যোগ দেন চেলসিতে। লন্ডনের ছেলে যে ঘরের মাঠেই বেড়ে উঠবেন এমনটাই স্বাভাবিক ছিল। সেই হিসেবে ব্লুজদের কোভহ্যাম ট্রেনিং গ্রাউন্ডে ২০১৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তার পরিচর্যা চলেছে। এমনকি একাডেমির সবাইও জানতেন তার বিশেষ প্রতিভা সম্পর্কে। লিভারপুল যে তাকে ছিনিয়ে এনে ভুল করেনি তার প্রমাণ দিয়েছেন গেল ম্যাচে।

চেলসির সাবেক অধিনায়ক জন টেরি এনগুমোয়াকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ‘এনগুমোয়া হবেন সেরা পর্যায়ের ফুটবলার’। তিনি সেটি হবেন কি না, তা সময় বলবে। শুরুতে অবশ্য পাবেন লেটার মার্ক। তবে চেলসির হয়ে নয়, লিভারপুলের জার্সিতেই ক্যারিয়ার গড়তে চলেছেন এনগুমোয়া। তার চেলসি ছাড়ার পর স্ট্যামফোর্ড জুড়ে ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই আগুনে তিনি ঘি ঢেলেছেন আরো একবার।
কী ঘটেছে আসলে? এত হইচই কেন? সেন্ট জেমস পার্কে নিউক্যাসলের বিপক্ষে নির্ধারিত সময়ের খেলা তখনও ২-২ গোলে ড্র। খেলায় যোগ করা হলো অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময়। মাঠে নামানো হল এনগুমোয়াকে। মাঠে নামার ৪ মিনিটের মাথায় মোহাম্মদ সালাহর নিচু করে বাড়ানো বল ডমিনিক সোবসলাই ডামি করে ছেড়ে দিলে ডান পায়ের নিখুঁত এক শটে পোস্টের ডান কোণা দিয়ে জালে জড়ান। আর এতেই ক্লাবের হয়ে ইতহাসের পাতায় নাম লেখান এনগুমোয়া, বনে যান অলরেডদের হয়ে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা। রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে নিউক্যাসেলের সঙ্গে ৩-২ গোলের জয় পায় লিভারপুলও।
ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৭ দলের খেলোয়াড় কিশোর এনগুমোয়া। গোল করার দিন তার বয়স ছিল ১৬ বছর ৩৬১ দিন। প্রিমিয়ার লিগে ১৬ বছর বয়সে গোল করা দ্বিতীয় খেলোয়াড় এখন তিনি। এনগুমোয়ার আগে সর্বশেষ ২০০২ সালে এভারটনের হয়ে আর্সেনালের বিপক্ষে ১৬ বছর ৩৬০ দিন বয়সে এই কীর্তি গড়েছিলেন ওয়েইন রুনি। বয়সের হিসাবে রুনির চেয়ে মাত্র এক দিন বেশি বয়সে লিভারপুলের হয়ে জয়সূচক গোল করেছেন এনগুমোয়া।

এছাড়া এনগুমোয় প্রিমিয়ার লিগের চতুর্থ সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা। তার চেয়ে কম বয়সে প্রিমিয়ার লিগে গোল করেছেন জেমস ভন (১৬ বছর ২৭০ দিন), জেমস মিলনার (১৬ বছর ৩৫৬ দিন) এবং ওয়েন রুনি (১৬ বছর ৩৬০ দিন)।
এমন এক কীর্তি গড়ার পর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন এনগুমোয়া। ম্যাচ শেষে এই ফরোয়ার্ড বলেন, ‘আমি দারুণ রোমাঞ্চিত। গোল করতে পেরে, বিশেষ করে জয়সূচক গোল দিতে পেরে খুব খুশি। এটা দারুণ একটা মুহূর্ত, বিশেষ অনুভূতি। আমি নিঃসন্দেহে খুবই খুশি। মাঠে নামতে হবে এবং ম্যাচে প্রভাব ফেলতে হবে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে আমি সেটা করতে পেরেছি। এটা সত্যিই গর্বের একটা মুহূর্ত ছিল।’