বাংলাদেশসহ আশপাশের অন্যান্য দেশে আশ্রয় খুঁজে ফেরা রোহিঙ্গারা দীর্ঘকাল ধরে ভোগান্তিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। তবে, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজ দেশে ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য অনিরাপদ বলে জানিয়েছে তারা। পাশাপাশি, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

আজ শুক্রবার (২৫ আগস্ট) ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পূর্তি উপলক্ষে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়েছে, যা নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে দূতাবাস। এটি পরে নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও শেয়ার করে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। 

‘গণহত্যার ষষ্ঠ বার্ষিকী’ শীর্ষক বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর মিয়ারমার সেনাবাহিনীর সহিংসতা, ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যাভিযানের ছয় বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে বহনযোগ্য অল্পকিছু জিনিস নিয়ে পালাতে বাধ্য করেছিল দেশটির শাসকরা। বাংলাদেশের জনগণ সহানুভূতি এবং মানবতার হাত বাড়িয়ে তাদের স্বাগত জানিয়েছিল। প্রায় ১০ লাখ উদ্বাস্তুর প্রতি আতিথেয়তা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশের জনগণ। আমরা এই উদারতার প্রশংসা করি।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে তার এই প্রচেষ্টায় সমর্থন জানাতে সমবেত হয়েছিল। আমেরিকার জনগণ ২০১৭ সাল থেকে এই অঞ্চল জুড়ে উদ্ভূত মানবিক সংকটের প্রতিক্রিয়ায় ২১০ কোটিরও বেশি মার্কিন ডলার সহায়তা দিয়ে বেশি অবদান রেখেছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ১৭০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের এই সমর্থন অবিচল রয়েছে।

বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে আশ্রয় খুঁজে ফেরা রোহিঙ্গারা দীর্ঘকাল ধরে ভুগছে। মর্যাদার সঙ্গে, নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাওয়া, স্বপরিবারে শান্তিতে বাস করা এবং অর্থ ও উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ পাওয়া তাদের অধিকার। সেই লক্ষ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি, আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতের সমর্থনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার, নৃশংস অপরাধীদের জন্য জবাবদিহিতা এবং সংকটের সমাধান খুঁজে পেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মিয়ানমারের অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানায়। আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে সর্বোত্তম চর্চা, ধ্যান-ধারণা এবং সংস্থান বিনিময়ে উন্মুখ।

বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া অনিরাপদ জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, তাই আমরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে পুনর্বাসনের মাধ্যমে দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার সর্বাঙ্গীণ সমাধানে অবদান রাখছি। আন্তর্জাতিক পুনর্বাসনপ্রক্রিয়ায় অবদান রাখা অন্য দেশগুলোর উদারতাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আশা করি, পুনর্বাসন দেওয়া দেশগুলোর বাইরেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় যোগ দেবে। ২০০৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ এই অঞ্চল থেকে প্রায় ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে স্বাগত জানিয়েছে।