গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিল হামাস

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস জানিয়েছে, তারা কাতার ও মিসরের মধ্যস্ততায় উত্থাপিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। যদিও ইসরায়েল বলেছে, প্রস্তাবটি তাদের দাবি পূরণ করে না। খবর আলজাজিরার।
সোমবার (৬ মে) হামাস তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে জানায়, ‘হামাস আন্দোলনের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি ও মিসরের গোয়েন্দা বিভাগের মন্ত্রী আব্বাস কামেলকে টেলিফোনে জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে তাদের প্রস্তাব হামাস গ্রহণ করেছে।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, প্রস্তাবিত চুক্তিতে ইসরায়েলের দাবি পূরণ হয়নি এবং দেশটি আলোচনাকারীদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে। নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক্সে এক পোস্টে জানায়, ‘যদিও হামাসের প্রস্তাবটি ইসরায়েলের প্রয়োজনীয়তা থেকে অনেক দূরে, তবুও গ্রহণযোগ্য শর্তে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে মধ্যস্থতাকারীদের কাছে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে।’
গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় প্রবেশ করেছে ইসরায়েলি ট্যাংক। একজন ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও একজন মিসরীয় কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) এ তথ্য জানিয়েছেন। এ ছাড়া গাজা সীমান্ত কর্তৃপক্ষের একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি ট্যাংকের উপস্থিতিতে গাজায় সাহায্য সরবরাহের প্রধান পথ রাফা ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মিসরীয় কর্মকর্তা এপিকে বলেন, অঞ্চলটিতে অভিযান সীমিত পরিসরে হবে বলে মনে হচ্ছে। ওই কর্মকর্তার পাশাপাশি আল-আকসা টিভি বলেছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মিসরকে জানিয়েছে, তাদের বাহিনী অভিযান শেষ করার পরে প্রত্যাহার করা হবে।
রাফায় ট্যাংক অনুপ্রবেশের বিষয়ে অবশ্য মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
এপি জানিয়েছে, রাফার মিসরীয় প্রান্তে নিয়োজিত ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও মিসরীয় কর্মকর্তা তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য জানিয়েছেন। কারণ তাদের গণমধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি নেই।
এদিকে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বোমাবর্ষণে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানায়, রাফার পশ্চিমাঞ্চল তাল আস-সুলতান এলাকায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বোমা হামলায় পাঁচজন নিহত এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছে। এ ছাড়া পশ্চিম রাফায় অপর একটি বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে এক শিশুসহ অন্তত তিনজনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
এদিকে ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম প্যালেস্টাইন ইনফরমেশন সেন্টারের খবরে বলা হয়, রাফার পূর্বাঞ্চলে একটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় চারজন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর ছোড়া বোমা গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহটির আল-জাইনা এলাকার একটি বাড়িতে আঘাত হানে। এতে আল-হামস পরিবারের সদস্যরা থাকতেন।
এ ছাড়া আলজাজিরার প্রতিবেদক জানান, রাফার পশ্চিমাঞ্চলে একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনজন নিহত হয়েছে। এতে আল-দারবি পরিবারের সদস্যরা থাকতেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী স্থল ও আকাশ থেকে রাফায় অবিরাম বোমাবর্ষণ করছে। শহরটিতে হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করছে বলে দাবি তাদের।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী লিফলেটের মাধ্যমে রাফায় বড় ধরনের আক্রমণ শুরুর ঘোষণা দিয়ে সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এরপর থেকে ফিলিস্তিনিরা রাফা ছেড়ে যেতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। রাফাকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে পালিয়ে এসে প্রায় ১৫ লাখ ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিল।