লেবাননে ইসরায়েলের বিমান হামলায় বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ও বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামলার আগে ওই ব্যাংকের শাখাগুলোর এলাকার বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। যার ফলে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

গত রোববার রাতে বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে বিমান হামলায় ইউএনএফপিএর (ইউএন পপুলেশন ফান্ড) নারী ও মেয়েদের জন্য তৈরি করা একটি নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রসহ একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে বৈরুত, বেকা ও মাউন্ট লেবাননে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র এবং ভ্রাম্যমাণ প্রসূতি সেবাকেন্দ্রসহ ইউএনএফপিএর ১০টি পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে।

লেবাননের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত অক্টোবর থেকে হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল সংঘাতে দুই হাজার ৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ১১ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি। সংঘাতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ও বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ১২ লাখ মানুষ।

লেবাননজুড়ে জাতিসংঘ ও তার মানবিক সহযোগীরা সহায়তা অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছে ওসিএইচএ।

গতকাল সোমবার জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ও ওসিএইচএর সহায়তায় বালবেক প্রদেশের জাবুলে শহরে ছয় ট্রাক ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যায়। গত সেপ্টেম্বরের পর লেবাননে এই প্রথম ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে। রেডি-টু-ইট খাবারের পাশাপাশি দুই মাসের জন্য ১০০০ লোকের জন্য পর্যাপ্ত খাবার নিয়ে যায় এই ট্রাকগুলো।

এ ছাড়া জাবুলে শহরের তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে পানির বোতল, তোশক, কম্বল, প্রাথমিক চিকিৎসা ও হাইজিন কিটসহ অন্যান্য সামগ্রী দিয়েছে ইউনিসেফ।

লেবাননে প্রায় এক হাজার ১০০ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে প্রায় এক লাখ ৯২ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ইতোমধ্যে ৯০০টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় ক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ওসিএইচএ।

বৈরুত ও মাউন্ট লেবাননে সবচেয়ে বেশি বাস্তুচ্যুতির ঘটেছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানায়, গত এক বছরে লেবাননের অভ্যন্তরে আট লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

এদিকে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, লেবানন থেকে চার লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে এবং ১৭ হাজার মানুষ ইরাকে গিয়েছে।