হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে সফল হবে লেবানন?

লেবাননের সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে, এই সিদ্ধান্তকে হিজবুল্লাহ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে, যা দেশটিতে নতুন করে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের পর এই পদক্ষেপ এসেছে, যেখানে প্রায় চার হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। গ্রুপটি এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালামের সরকার ইসরায়েলি শত্রুকে প্রতিরোধ করার জন্য লেবাননের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি গুরুতর পাপ করেছে। এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষা করে।
তবে, এই সরাসরি প্রত্যাখ্যান সত্ত্বেও হিজবুল্লাহ এখনো কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, এটি তাদের কৌশলগত পরিবর্তন বা যুদ্ধের কারণে দুর্বল সামরিক ক্ষমতার ফল হতে পারে। তাদের প্রয়াত নেতা হাসান নাসরুল্লাহর আমলে এমন পদক্ষেপ গৃহযুদ্ধের কারণ হতে পারত। হিজবুল্লাহর এমপি আলী মোকদাদ এই সিদ্ধান্তকে ‘কাগজে কালি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন, আরেক এমপি মোহাম্মদ রাদ এই পদক্ষেপকে ‘আত্মহত্যার’ সঙ্গে তুলনা করেছেন।
হিজবুল্লাহর প্রধান সমর্থক ইরান এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার প্রচেষ্টা সফল হবে না, কারণ প্রতিরোধের শক্তি নিজেদের মাঠে প্রমাণ করেছে তারা।
এর জবাবে লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ রাগি আরাঘচির মন্তব্যকে ‘দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান ও নিন্দা’ করেছেন এবং এটিকে লেবাননের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অগ্রহণযোগ্য হস্তক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইসরায়েলের যুদ্ধের পর তেহরান থেকে লেবাননে বিমান চলাচল বন্ধ ও সিরিয়ায় স্থলপথ অকার্যকর হওয়ায় হিজবুল্লাহকে ইরানের সমর্থনের ক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে।
নিরস্ত্রীকরণ আদৌ সফল হবে কিনা তা এখনো অনিশ্চিত। মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সালাম মার্কিন প্রস্তাবের ‘উদ্দেশ্য’ অনুমোদন করেছেন। এর ফলে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। হিজবুল্লাহ-বিরোধী রাজনীতিবিদরা এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন।

তবে, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, সরকার ইসরায়েলি আক্রমণ থেকে তাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি হিজবুল্লাহর একটি অস্ত্র স্থাপনা পরিদর্শনের সময় ছয় লেবানিজ সৈন্য নিহত হওয়ার পর উত্তেজনা আরও বেড়েছে।