মানবিক সহায়তা হ্রাসের ফলে শিশুমৃত্যু হার বাড়বে : জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক সহায়তা হ্রাস শিশুমৃত্যু হার মোকাবিলায় কয়েক দশকের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিতে পারে, এমন কি অগ্রগতির এই ধারা উল্টে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। গতকাল সোমবার (২৪ মার্চ) এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল-ইউনিসেফ। আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যদিও ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এককভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে এমন এক সময়ে এ তথ্য উঠে এসেছে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ৪২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের পূর্ববর্তী বার্ষিক বাজেটসহ আমেরিকার প্রধান বিদেশি সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি কর্তৃক পরিচালিত বেশিরভাগ কর্মসূচি বাতিল করে দিয়েছে।
ইউনিসেফের স্বাস্থ্য বিষয়ক সহযোগী পরিচালক ফৌজিয়া শফিক এএফপিকে বলেন, ‘আমরা যে পরিস্থিতি দেখছি তাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অত বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।’
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, ‘যেসব দেশে শিশুমৃত্যুর হার ইতোমধ্যেই সর্বোচ্চ, যেমন সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়া, সেখানে সাহায্যের অর্থ হ্রাসের পরিণতি সবচেয়ে খারাপ হবে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সহজভাবে বলতে গেলে জীবন রক্ষাকারী পরিষেবাগুলোর জন্য যদি সহায়তা অব্যাহত না থাকে, তাহলে অনেক দেশ নবজাতক এবং শিশু মৃত্যুর হারের পুনরুত্থান হতে পারে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুহার হ্রাস অব্যাহত ছিল, সে সময় ৪৮ লাখ মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছিল। যার মধ্যে এক মাসের কম বয়সী দুই দশমিক তিন মিলিয়ন নবজাতক শিশুও ছিল।
২০২২ সালে প্রথমবারের মতো এই ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ লাখের নিচে নেমে আসে এবং নতুন রেকর্ড সর্বনিম্ন দুই হাজার সালের পর ৫২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু ইউনিসেফের স্বাস্থ্যবিষয়ক সহযোগী শফিক জোর দিয়ে বলেন, ‘৪৮ লাখ মানে অনেক বেশি।’
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রতিরোধযোগ্য শিশু মৃত্যুর হার রেকর্ড সর্বনিম্নে নামিয়ে আনা একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। কিন্তু সঠিক নীতিগত পছন্দ এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ছাড়া, আমরা এই কষ্টার্জিত অর্জনগুলোকে বিপরীত করার ঝুঁকিতে আছি।’
ক্যাথেরিন রাসেল আরও বলেন, ‘আমরা এটি ঘটতে দিতে পারি না।’
তহবিল হ্রাসের ফলে কিছু নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যেই অনুভূত হচ্ছে। যেমন স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর ঘাটতি, ক্লিনিক বন্ধ, টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হওয়া এবং ম্যালেরিয়া চিকিৎসার মতো প্রয়োজনীয় সরবরাহের অভাব।
শফিক উদাহরণস্বরূপ বলেন, ইথিওপিয়া ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু দেশটি রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা, বিছানার জন্য কীটনাশক-চিকিৎসা নেট এবং রোগবাহক মশার বিরুদ্ধে স্প্রে অভিযানের জন্য তহবিলের তীব্র ঘাটতির মুখোমুখি হচ্ছে।
একই সংস্থাগুলোর একটি পৃথক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মৃত শিশুর জন্মের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। যারা গর্ভাবস্থার ২৮ সপ্তাহ পরে, প্রসবের আগে বা প্রসবের সময় মারা যায়। ২০২৩ সালে মোট প্রায় ১৯ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
দ্বিতীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি মহিলা মৃত সন্তান প্রসবের হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা ভোগ করেন।
গর্ভাবস্থা ও প্রসবের সময় সঠিক যত্নের মাধ্যমে এই মৃত্যুগুলোর অনেকগুলো এড়ানো যেতে পারে, যেমন শারীরিক বা মানসিকভাবে দুর্বল শিশুদের অকাল জন্ম এবং নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার মতো প্রতিরোধযোগ্য রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে ছোট শিশুদের মৃত্যুও অনেকাংশে এড়ানো যেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ডা. টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস বলেন, ‘ম্যালেরিয়া মোকাবিলা থেকে শুরু করে মৃত শিশুর জন্ম রোধ এবং ক্ষুদ্রতম শিশুদের জন্য প্রমাণ-ভিত্তিক যত্ন নিশ্চিত করে আমরা লাখ লাখ পরিবারের জন্য একটি পার্থক্য বয়ে আনতে পারি।’