গাজা দখলের পরিকল্পনায় ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার অনুমোদন

পুরো গাজা উপত্যকা দখলের পরিকল্পনা করছে ইসরায়েলি সেনারা। দেশটির নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান আরও বিস্তৃত করার একটি পরিকল্পনা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করা হয়েছে। যেখানে গাজা দখল করে এর ভূখণ্ড ধরে রাখার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ইসরায়েলি এক কর্মকর্তার বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই তথ্য নিশ্চিত করে।
ওই কর্মকর্তা জানান, এই পরিকল্পনার মধ্যে গাজা উপত্যকা দখল, অঞ্চল ধরে রাখা, গাজার বেসামরিক জনগণকে তাদের নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণে স্থানান্তর করা, হামাসকে মানবিক সরবরাহ বিতরণে বাধা দেওয়া এবং হামাসের বিরুদ্ধে জোরালো হামলা চালানো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে নির্মূল ও অবশিষ্ট জিম্মিদের উদ্ধারের জন্য মন্ত্রিসভা একটি ‘জোরালো অভিযান’ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য গাজার ২১ লাখ ‘জনগণকে তাদের সুরক্ষার জন্য’ দক্ষিণাঞ্চলে স্থানান্তর করা হবে। যদিও ঠিক কতটা ভূখণ্ড ইসরায়েলি সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে আসবে, সে বিষয়ে তিনি স্পষ্ট কোনো তথ্য দেননি। তবে জোর দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘তারা (সেনারা গাজায়) প্রবেশ করবে, বের হবে না।’
এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রিসভা নীতিগতভাবে বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে গাজায় ত্রাণ সরবরাহের একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের আরোপিত দুই মাসের অবরোধের কারণে গাজায় তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। তবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেছেন, এটি মৌলিক মানবিক নীতিমালার লঙ্ঘন এবং তারা এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করবে না।
অন্যদিকে, হামাসের একজন কর্মকর্তা ইসরায়েলের এই ‘চাপ ও ব্ল্যাকমেল’ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইসরায়েলের এই অভিযান সম্প্রসারণের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের খাদ্য সরবরাহে সহায়তা করার তার পূর্বের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তবে যুক্তরাজ্য স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের সম্প্রসারণকে সমর্থন করে না। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইসরায়েলের প্রতি সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে ও ফিলিস্তিনি জনগণের ‘আরও হতাহত ও দুর্ভোগ’ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
গত ১৮ মার্চ দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েল পুনরায় এই অভিযান শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গত রোববার সন্ধ্যায় গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসেছিল।
এরপর সোমবার সকালে গণমাধ্যমকে অবহিত করা এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রীরা সর্বসম্মতিক্রমে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামিরের প্রস্তাবিত গাজায় ‘হামাসকে পরাজিত করা এবং জিম্মিদের ফেরত আনার’ পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন।

ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, অভিযানের প্রথম পর্যায়ে গাজার অতিরিক্ত এলাকা দখল এবং ইসরায়েল কর্তৃক নির্ধারিত ‘বাফার জোনের’ পরিধি বাড়ানো হবে। এর মূল লক্ষ্য হলো, নতুন যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তির বিষয়ে হামাসের সঙ্গে আলোচনায় ইসরায়েলকে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়া।
তবে একজন সিনিয়র ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১৩ থেকে ১৬ মে মধ্যপ্রাচ্য সফরের আগে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে না। তিনি এই সময়কালকে হামাসের জন্য একটি নতুন যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার ‘সুযোগের জানালা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন