পাকিস্তানে পৃথক অভিযানে নয় সন্ত্রাসী নিহত : আইএসপিআর

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) প্রদেশে তিনটি পৃথক অভিযানে ভারত-সমর্থিত নয়জন ‘খারিজি’ সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার (২৫ মে) এসব অভিযান পরিচালনা করা হয়। খবর ডনের।
আইএসপিআরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেরা ইসমাইল খান জেলায় ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসীদের উপস্থিতির তথ্যের ভিত্তিতে একটি গোয়েন্দা তথ্যনির্ভর অভিযান (আইবিও) চালানো হয়। “সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসীদের অবস্থান লক্ষ্য করে সফলভাবে হামলা চালায়। তীব্র গোলাগুলির পর চারজন ভারত-সমর্থিত খারিজিকে নরকে পাঠানো হয়েছে।”
এরপর ট্যাঙ্ক জেলায় আরেকটি গোয়েন্দা তথ্যনির্ভর অভিযান চালিয়ে আরও দুইজন সন্ত্রাসীকে হত্যা করে বাহিনী।
তৃতীয় অভিযানটি হয় খাইবার জেলার বাঘ এলাকায়, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আরও তিনজন সন্ত্রাসীকে ‘নির্মূল’ করেন।
আইএসপিআর আরও জানায়, নিহত সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা ওই এলাকাগুলোতে একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, “অঞ্চলজুড়ে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে নির্মূল করতে সেনাবাহিনী পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশ্রুতির সঙ্গে কাজ করছে।”
এদিকে, অভিযানের পর প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি নিরাপত্তা বাহিনীর দক্ষতা ও সফলতার প্রশংসা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্বের ফলে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় যারা সাধারণ মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি করছে, তাদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। সরকার ও বাহিনী সন্ত্রাসবাদকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
রাষ্ট্রপতি জারদারি বলেন, “ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর সফল অভিযান প্রশংসনীয়। সন্ত্রাসবিরোধী এই লড়াই চলবে যতক্ষণ না এ হুমকি সম্পূর্ণভাবে নির্মূল হয়।”
এর আগে গত সপ্তাহে খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানে পৃথক অভিযানে আরও ১২ জন ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসী নিহত হয়। ওই অভিযানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুই সদস্য নিহত হন।
গত মাসে আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ভারত তার “সম্পদ” ব্যবহার করে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা তীব্র করেছে এবং এ বিষয়ে পাকিস্তানের কাছে “অসংশয়যোগ্য প্রমাণ” রয়েছে।
তিনি বলেন, “পেহেলগামের ঘটনার পর ভারতের সামরিক নেতৃত্ব বেলুচিস্তান ও অন্যান্য অঞ্চলের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সক্রিয় করতে নির্দেশ দেয়, যার লক্ষ্য পাকিস্তানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি।”
পাকিস্তানে ২০২২ সালের নভেম্বরে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে কেপি ও বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে গেছে।

তবে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে বলে জানায় পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (পিআইসিএসএস)। মার্চের তুলনায় এপ্রিল মাসে সন্ত্রাসী হামলা ও প্রাণহানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসে।
এছাড়া গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স ২০২৫-এ পাকিস্তান দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে, যেখানে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা ৪৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮১ জনে।