হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান নিহত

ইসরায়েলি হামলায় ইরানের অভিজাত ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এর প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন। দেশটির একাধিক রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। শুক্রবার (১৩ জুন) স্থানীয় সময় সকালে নিহত হন তিনি। খবর সিএনএনের।
আইআরজিসি ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি দেশের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন তদারকি, অভ্যন্তরীণ ভিন্নমত দমন ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ইরানের সামরিক অভিযান পরিচালনা করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তথ্য অনুসারে, ১৯৬০ সালে জন্মগ্রহণকারী সালামি ২০১৯ সাল থেকে এই গোপন সংস্থার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। আইআরজিসির প্রধান হিসেবে তিনি সরাসরি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে রিপোর্ট করতেন। দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন।
সালামি গত বছরের এপ্রিল ও অক্টোবরে ইসরায়েলে ইরানের প্রথম সরাসরি হামলার সময় আইআরজিসির নেতৃত্বে ছিলেন। গত জানুয়ারিতে তিনি আইআরজিসি-অনুমোদিত মিডিয়ায় একটি ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা পরিদর্শন করতে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। এই স্থাপনাটি নতুন বিশেষ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছিল বলে আধা-সরকারি ইরানি সংবাদমাধ্যম মেহের নিউজ জানিয়েছে।
আইআরজিসি হলো ইরানি সামরিক বাহিনীর একটি অভিজাত শাখা, যা ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন ও ইরাকে বিভিন্ন প্রক্সি গোষ্ঠীকে সমর্থন করে। আইআরজিসি কেবল ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক প্রতিষ্ঠানই নয়, এটি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং অর্থনীতিতেও গভীর প্রভাব বিস্তার করে, যার স্বার্থ নির্মাণ, টেলিযোগাযোগ, অটো এবং জ্বালানি শিল্পের বাইরেও বিস্তৃত।
উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দিবাগত রাতের শেষভাগে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। হামলার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে তাদের সামরিক অভিযান ‘যতদিন প্রয়োজন’ ততদিন চলবে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ এই হামলাকে ‘আগাম প্রতিরোধমূলক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা ইসরায়েল রাষ্ট্র ও এর বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ভবিষ্যৎ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার আশঙ্কা থেকে চালানো হয়েছে।

এই হামলার পর তেহরানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান চলাচল স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলজুড়ে ‘বিশেষ জরুরি অবস্থা’ জারি করা হয়েছে।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্র ‘জড়িত নয়’। তিনি ইরানকে এই অঞ্চলে আমেরিকান ঘাঁটিতে যেকোনো হামলার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ওয়াশিংটন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করার পরপরই ইরানে এই হামলা চালানো হয়েছে।