ভারতের সঙ্গে সংঘাতের পর পাকিস্তান কেন রকেট কমান্ড গঠন করল?

পাকিস্তানের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নতুন সামরিক কাঠামো— আর্মি রকেট ফোর্স কমান্ড (এআরএফসি) গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। তার দাবি, এই বাহিনী “আধুনিক প্রযুক্তি ও বহুমুখী আক্রমণ ক্ষমতা” দিয়ে শত্রুকে প্রতিহত করতে সক্ষম হবে।
শাহবাজ শরিফ বলেন, এটি পাকিস্তানের প্রচলিত যুদ্ধক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে। শাহবাজ শরিফ সরাসরি নাম উল্লেখ না করলেও পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক ভাষায় ‘শত্রু’ বলতে বোঝানো হয় প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে। খবর আল জাজিরার।
পাকিস্তানের এই ঘোষণার এক সপ্তাহ পর ভারত তার অগ্নি–৫ ব্যালিস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা চালায়, যার পাল্লা ৫ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত। যদিও বিশ্লেষকরা মনে করেন, পাকিস্তানের নতুন বাহিনী গঠন ভারতের ওই পরীক্ষার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নয়।
তবে এর আগে গত মে মাসে চার দিনের এক সংঘাতে দুই দেশই একে অপরের সামরিক ঘাঁটিতে বিমান হামলা, মিসাইল ও ড্রোন আক্রমণ চালায়। এই লড়াই পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা কৌশলের বেশ কিছু ঘাটতি উন্মোচন করে। বিশেষ করে, দীর্ঘদিন ধরে যে পারমাণবিক প্রতিরোধনীতির ওপর পাকিস্তান নির্ভর করে এসেছে, সেটি সীমিত সংঘাতে কার্যকর হয়নি।
আর্মি রকেট ফোর্স কমান্ড কী?
এআরএফসি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি নতুন শাখা, যা প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীকে এক ছাতার নিচে আনবে।
পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানস ডিভিশন (এসপিডি) এবং সিদ্ধান্ত নেয় ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি (এনসিএ)।
কিন্তু এআরএফসি নিয়ন্ত্রণ করবে জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স (জিএইচকিউ) এবং কেবল প্রচলিত বা অ-পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র পরিচালনায় নিয়োজিত থাকবে।
প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা নাঈম সালিক জানান, এই বাহিনী মূলত ফাতেহ–১ (পাল্লা ১৪০ কি.মি.) ও ফাতেহ–২ (২৫০–৪০০ কি.মি.) সহ স্বল্প ও মধ্যপাল্লার গাইডেড রকেট ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করবে। এগুলো ইতোমধ্যেই মে মাসের সংঘাতে ব্যবহার হয়েছে।
কেন প্রয়োজন হলো নতুন বাহিনী?
বিশ্লেষকদের মতে, এটি হঠাৎ কোনো সিদ্ধান্ত নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি সামরিক কৌশলের অংশ।
ভারতের দ্রুতগতির মিসাইল ও “প্রথম আঘাতের নীতি” পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
পাকিস্তান এতদিন পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নির্ভর করলেও সাম্প্রতিক সংঘাতগুলো দেখিয়েছে যে, প্রচলিত শক্তি বাড়ানো জরুরি।
এআরএফসি পাকিস্তানকে গভীর পাল্টা আঘাত চালানোর ক্ষমতা দেবে, যা পারমাণবিক সীমারেখা অতিক্রম না করেও কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম।
সাম্প্রতিক সংঘাতের শিক্ষা
মে মাসের যুদ্ধে পাকিস্তান দাবি করেছিল যে তারা ভারতের কয়েকটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। অপরদিকে ভারত ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল দিয়ে পাকিস্তানের ভোলারি বিমানঘাঁটিসহ একাধিক স্থাপনায় হামলা চালায়।
পাকিস্তান তখন তার বাবর ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করতে পারেনি, কারণ এটি পারমাণবিক কৌশলের জন্য সংরক্ষিত এবং প্রচলিত যুদ্ধে ব্যবহারের অনুমতি নেই।

এ কারণেই পাকিস্তান বুঝতে পেরেছে—শুধু পারমাণবিক প্রতিরোধ যথেষ্ট নয়। এখন প্রচলিত মিসাইল বাহিনী তৈরি করে ভারতের বাড়তে থাকা সামরিক সক্ষমতার মোকাবিলা করা জরুরি।