স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতার বিরোধিতা করার আহ্বান জানালেন শি

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পশ্চিমা-নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে আয়োজিত সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে আঞ্চলিক নেতাদের 'স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা'র বিরোধিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন। খবর আলজাজিরার।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন শীর্ষ সম্মেলনের অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে শি জিনপিং বলেন, বিশ্ব ব্যবস্থা 'বিশৃঙ্খল এবং পরস্পর সংযুক্ত' হয়ে ওঠায় এসসিও সদস্য রাষ্ট্রগুলো ক্রমবর্ধমান জটিল নিরাপত্তা ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
শি জিনপিং বলেন, পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, কঠিন সময় সত্ত্বেও আমরা সাংহাই চেতনার অনুশীলন করে সাফল্য অর্জন করেছি। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের দিকে তাকালে দেখা যাবে, বিশ্ব যখন অস্থিরতা ও রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের অবশ্যই সাংহাই চেতনা অনুসরণ করে চলতে হবে, বাস্তবে থেকে কাজ করতে হবে, সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং সংস্থাটির কার্যকারিতা আরও ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে।
বৈশ্বিক ‘সমতা ও সুশৃঙ্খল বহুমুখীতা'র আহ্বান জানিয়ে শি জিনপিং বলেন, এসসিও জোটের উচিত একটি ‘আরও ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থা’ তৈরির জন্য কাজ করা।
চীনের নেতা বলেন, বেইজিং এই বছর সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দুই বিলিয়ন ইউয়ান (২৮০ মিলিয়ন ডলার) সহায়তা দেবে এবং একটি এসসিও ব্যাংকিং কনসোর্টিয়ামকে আরও ১০ বিলিয়ন ইউয়ান (১.৪ বিলিয়ন ডলার) ঋণ দেবে।
শি জিনপিং বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুবিধার মাত্রা উন্নত করতে আমাদের বিশাল বাজারের সুবিধা নেওয়া উচিত।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এবং বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোসহ ২০ জনেরও বেশি বিশ্বনেতা চীনের উত্তরের শহর তিয়ানজিনে রোববার শুরু হওয়া দুই দিনের এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
শীর্ষ সম্মেলনে বক্তৃতাকালে রুশ নেতা পুতিন জোটটির ‘প্রকৃত বহুমুখিতা’ পুনরুজ্জীবিত করার প্রশংসা করেন এবং মস্কোর ইউক্রেন আগ্রাসনের পক্ষে তার অবস্থান তুলে ধরেন। পুতিন বলেন, ‘এই সংকট রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলার কারণে শুরু হয়নি, বরং ইউক্রেনের একটি অভ্যুত্থানের ফল ছিল, যাতে পশ্চিমা দেশগুলো সমর্থন ও উস্কানি দিয়েছিল। সংকটের দ্বিতীয় কারণ হলো ইউক্রেনকে ন্যাটোতে টেনে আনার জন্য পশ্চিমাদেরনিরলস প্রচেষ্টা।’
দিনের শুরুর দিকে, জোটের ১০ সদস্য রাষ্ট্রের নেতারা অনুষ্ঠানস্থলে একটি লাল গালিচায় গ্রুপ ছবির জন্য পোজ দেন। শি, পুতিন এবং মোদিকে তাদের অনুবাদকদের সঙ্গে এ সময় আলাপ করতে দেখা যায়।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, একটি আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরুর আগে পুতিন এবং মোদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাঁজোয়া গাড়িতে প্রায় এক ঘণ্টা মুখোমুখি কথা বলেছেন।
২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত এসসিও শুরুতে ছয়টি ইউরেশীয় দেশের একটি জোট হিসেবে শুরু হয়েছিল - চীন, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, রাশিয়া, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান - কিন্তু তখন থেকে এটি ১০টি স্থায়ী সদস্য এবং ১৬টি সংলাপ ও পর্যবেক্ষক দেশে সম্প্রসারিত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে প্রচার করতে এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের জন্য এই সম্মেলন ব্যবহার করতে চাইছেন।