ভারতে জন্ম হলেও ভারতীয় নন, নাগরিকত্বের জন্য লড়ছেন ‘রাষ্ট্রহীন’ রবীন্দ্রন

ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে শ্রীলঙ্কান শরণার্থী বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া বাহিসন রবীন্দ্রন সবসময় বিশ্বাস করতেন তিনি একজন ভারতীয়। পড়াশোনা করেছেন ভারতে, চাকরিও করেছেন সেখানেই। এমনকি ভারতীয় পাসপোর্টও ছিল তার হাতে। কিন্তু এ বছর এপ্রিল মাসে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলে জীবনে নেমে আসে এক বিরাট ধাক্কা।
পুলিশ জানায়, তার পাসপোর্ট অবৈধ, কারণ তিনি ‘জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক’ নন। ১৯৯১ সালে জন্ম নেওয়া রবীন্দ্রনের বাবা-মা ১৯৯০ সালে গৃহযুদ্ধের সময় শ্রীলঙ্কা থেকে ভারতে পালিয়ে আসেন। খবর বিবিসির।
১৯৮৭ সালের আগে ভারতে জন্ম নিলেই নাগরিকত্ব পাওয়া যেত। কিন্তু ওই বছরের জুলাইয়ের পর জন্ম নেওয়া সন্তানদের জন্য অন্তত একজন অভিভাবকের ভারতীয় নাগরিকত্ব থাকা বাধ্যতামূলক হয়। সেই নিয়মে পড়েছেন রবীন্দ্রন।
চেন্নাইয়ের মাদ্রাজ হাইকোর্টে তিনি জানিয়েছেন, এই আইনের ব্যাপারে তিনি কখনও জানতেন না এবং নিজের শ্রীলঙ্কান শিকড়ও কখনও গোপন করেননি। নিয়ম জানার পর তিনি দ্রুত নাগরিকত্বের জন্য ‘ন্যাচারালাইজেশন প্রক্রিয়ায়’ আবেদন করেছেন।
কিন্তু এখন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘রাষ্ট্রহীন’। তার ঘটনা তুলে ধরেছে ভারতের হাজারো শ্রীলঙ্কান তামিল শরণার্থীর দুর্দশা, যাদের অনেকেই এখনও নাগরিকত্ব সংকটে ভুগছেন।
তামিলনাড়ু সরকার বলছে, বর্তমানে শুধু ওই রাজ্যেই ৯০ হাজারের বেশি শ্রীলঙ্কান শরণার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ২২ হাজার শিশু ১৯৮৭ সালের পর ভারতে জন্ম নিয়েছে।
ভারত ১৯৫১ সালের জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশন কিংবা ১৯৬৭ সালের প্রোটোকলের সদস্য নয়। ফলে শ্রীলঙ্কান শরণার্থীদের ভারত অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দেখে। আবার ২০১৯ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা অমুসলিম সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ দিলেও শ্রীলঙ্কার তামিলদের অন্তর্ভুক্ত করেনি।
২০২২ সালে প্রথমবারের মতো এক শ্রীলঙ্কান তামিল, কে নলিনী ভারতীয় নাগরিকত্ব পান। তারপর থেকে আরও কয়েকজনকে নাগরিকত্ব দেওয়া হলেও সংখ্যাটি এখনও খুবই সীমিত।
সম্প্রতি নতুন পাসপোর্টে স্ত্রী’র নাম যোগ করার আবেদন করলে তার নাগরিকত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়। পুলিশ যাচাই করে নতুন পাসপোর্ট দিলেও বিদেশি নাগরিক নিবন্ধন দপ্তর (এফআরআরও) তার শ্রীলঙ্কান শিকড়ের বিষয়টি সামনে আনে।
এরপর গত মাসে তাকে প্রতারণা, জালিয়াতি ও অবৈধভাবে ভারতীয় পাসপোর্ট রাখার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৫ দিন জেলে কাটানোর পর তিনি জামিনে মুক্তি পান।
বর্তমানে তিনি মাদ্রাজ হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন। আদালত আগামী ৮ অক্টোবর পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিতে নির্দেশ দিয়েছে।

রবীন্দ্রন বলেন, “এতদিন কেউ আমাকে বলেনি আমি ভারতীয় নই। যখন প্রথম শুনলাম আমি ‘রাষ্ট্রহীন’, তখন মেনে নিতে পারিনি।”
এখন তার ভরসা কেবল আদালত। তিনি আশা করছেন, ভারত তাকে নিজের সন্তান হিসেবেই গ্রহণ করবে।