লোপার প্রিয় বন্ধু সালমান শাহ

আজ বন্ধু দিবস। বন্ধু দিবসে শুভেচ্ছাবার্তা, উপহার দেওয়া-নেওয়া তো চলছে। যাঁদের প্রিয় বন্ধু পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, তাঁদের অনেকের মন খারাপ। জনপ্রিয় উপস্থাপক আশফাহ হক লোপার প্রিয় বন্ধু তাঁর স্বামী এবং রাজনৈতিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাহী বি চৌধুরী। মাহী বি চৌধুরী ও আশফাহ হক লোপার বন্ধুত্ব অনেক নিবিড়। অবসরে একসঙ্গে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াতে তাঁরা অনেক পছন্দ করেন। পছন্দ করেন একসঙ্গে পছন্দের জিনিসপত্র কিনতে। সম্পর্কের এত বছর পরও তাঁদের বন্ধুত্ব অটুট। লোপা যখন কলেজে পড়তেন, তখন তাঁর প্রিয় বন্ধু ছিলেন চিত্রনায়ক সালমান শাহ। বন্ধু দিবসে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে সালমান শাহকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন লোপা।
আমাদের পরিবারের বন্ধু
সালমান শাহ। ওর আসল নাম ইমন। আমরা ওকে ইমন বলেই ডাকতাম। সালমান শাহ আমার ছোট বোন শম্পার বন্ধু ছিল। শম্পার সঙ্গে ও আমাদের বাসায় আসত। শম্পা আর আমার বয়সের দূরত্ব খুব বেশি নয়। আমরা অনেক ভালো বন্ধু। ধীরে ধীরে সালমান শাহর সঙ্গে আমার ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়। শুধু আমাদের নয়, এমনকি আমাদের মা-বাবার সঙ্গে ওর ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। প্রায় প্রতিদিন বিকেলে আমাদের বাসায় সালমান শাহ নাশতা করত। আমরা সবাই একসঙ্গে চা খেতাম আর অনেক আড্ডা দিতাম।
সালমান শাহর সঙ্গে গল্প
ওর সঙ্গে আমার অনেক গল্প হতো। ও আমাকে নানাভাবে রাগাত। আমাকে ক্ষেপিয়ে তোলার মধ্যে একটা সুন্দর আর্ট ছিল। ইমন প্রায়ই বলত, ‘দোস্ত, আমি তো নায়ক হতে চাই।’ এটা শোনার পর আমরা ওকে ক্ষেপাতাম। ও যেহেতু দেখতে সুন্দর ছিল, তাই আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল, ইমন একদিন সত্যি সত্যি নায়ক হবে।
কেমন ছিল সালমান শাহ
সালমান শাহর অনেক স্বপ্ন ছিল। মনে মনে উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করত। ওর মধ্যে একটা নায়ক নায়ক ভাবও ছিল। সবার সঙ্গে মজা করতে এবং হাসাতে অনেক পছন্দ করত। ও অনেক চঞ্চল ছিল। এক জায়গায় বসে থাকার মতো ছেলে ও ছিল না। সোজাকথা, ও স্থির ছিল না। মানুষ হিসেবে অনেক ভালো ছিল। আর একটা কথা না বললেই নয়, তা হলো সালমান শাহ ছিল অনেক অভিমানী ও আবেগী।
বন্ধু দিবসের উপহার
আমাদের সময় বন্ধু দিবসে উপহার দেওয়া-নেওয়া কম হতো। তবে আমার প্রতিটি জন্মদিনে সালমান শাহ ফুল নিয়ে আসত। ফুল ওর ভীষণ প্রিয় ছিল। আমরা ফুচকা খেতে খুব পছন্দ করতাম। তখন তো ঢাকায় সেই অর্থে খাবারের কোনো ভালো দোকান ছিল না। আমরা মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি এলাকায় ঘুরে বেড়াতাম আর ফুচকা-আইসক্রিম খেতাম।
সালমান শাহর প্রথম ছবি মুক্তির পর
আমরা সবাই মিলে হলে গিয়ে ছবিটা দেখেছি। ও তখন বেশ ভাব নিয়ে আমাদের বলত, ‘দোস্ত, এখন আমি নায়ক।’ ওর নায়িকা মৌসুমীও আমাদের অনেক ভালো বন্ধু ছিল। আমরা সবাই মিলে অনেক মজা করতাম। তার পর ধীরে ধীরে ও চলচ্চিত্রের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তখন আমাদের দেখা একটু কম হতো।
সালমান শাহর মৃত্যুসংবাদ শোনার পর
এ বিষয়ে এখনো আমার কথা বলতে ইচ্ছা করে না। আমি তখনো নির্বাক ছিলাম, এখনো আছি। ওর মৃত্যুসংবাদ শোনার পর আমি ওকে দেখতে যাইনি। অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, ওর সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখটাই আমার ফ্রেমে বন্দি থাকুক। ওর মৃত্যুর কিছুদিন পর আমার বোন অবশ্য ওদের বাসায় গিয়েছিল। আমি তখনো যাইনি।