সেলিম ভাই তিনটি শর্ত দিয়েছিলেন : পরী মণি

‘স্বপ্নজাল ছবির শুটিংয়ের সময় নয়টা ছবির সাইনিং মানি আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।’ এনটিভি অনলাইনকে সাক্ষাৎকার দেয়ার এক পর্যায়ে কথাটি বলেছেন দেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরী মণি। গিয়াসউদ্দীন সেলিম পরিচালিত বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনার ‘স্বপ্নজাল’ ছবিটি মুক্তি পাবে আগামী ৬ এপ্রিল। ছবিতে কাজের অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন পরী। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নাইস নূর।
এনটিভি অনলাইন : ‘স্বপ্নজাল’ ছবির শুটিংয়ের আগে প্রস্তুতি কেমন ছিল?
পরী মণি : প্রস্তুতি কেমন ছিল এটা এখন আমার মনে করতে হবে। কারণ অনেক বেশি প্রস্তুতি ছিল। সেলিম ভাইয়ের সাথে এফডিসিতে আমার প্রথম দেখা হয়। তখন আমি একটা ছবির শুটিং করছিলাম। মেকআপ রুমে বসেই সেলিম ভাইয়ের সাথে প্রথম কথা বলি। আমার চুলে তখন হালকা একটা কালার দেয়া ছিল।আমাকে দেখে সেলিম ভাই তিনটি শর্ত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, চুলে কোন কালার থাকা যাবে না। কালো চুল থাকতে হবে। তোমার কোন ঝামেলা নেই তো। উত্তরে আমি বলেছিলাম, না কোন ঝামেলা নেই। এরপর তিনি বলেছিলেন তোমার কি থিয়েটার করা কিংবা দেখা হয়েছিল? সত্যি বলতে আমি থিয়েটার করিওনি, এমনকি দেখিওনি। কিন্তু ভাইয়াকে আমি বলেছিলাম, চেষ্টা করব।
সর্বশেষ ভাইয়া বলেছিলেন, শুটিংয়ে তোমার মেক আপ থাকবে না। তোমাকে নন গ্ল্যামার দেখানো হবে। তুমি রাজি আছো? আমি বুঝে কিংবা না বুঝেই হোক তখন আমি তাঁর সব কথায় হ্যাঁ বলে গিয়েছিলাম।
এনটিভি অনলাইন: শুনেছিলাম সিনেমার শুটিংয়ে নিজেকে প্রথম কিছুদিন মানিয়ে নিতে পারেননি। এর পেছনে কারণ কী ছিল?
পরী মণি : এটা সত্যি শুটিংয়ের প্রথম দুই দিন মানিয়ে নিতে পারিনি অনেক কিছু। শুটিং ইউনিটে একজনও ছিল না, যাকে আমি আগে থেকে চিনতাম। আমার কাছে নতুন একটা টিম। তাঁদের অনেক কথাই আমি বুঝতে পারিনি। এফডিসিতে যে সিনেমাগুলো হয় তাঁদের কথাবার্তার ধরণ ভিন্ন থাকে। সিনেম্যাটিক পরিবেশ এফিডিসিতে আলাদা। প্রচুর আওয়াজ থাকে।
অন্যদিকে, স্বপ্নজাল ছবির ইউনিট অনেক কুল ছিল। প্রথম দুই দিন যা শুটিং হয়েছিল সবকিছু আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গিয়েছিল।এমনকি আমি আমার চরিত্র, পরিচালক, পুরো ইউনিট কারো সাথেই নিজেকে যুক্ত করতে পারি নি।
এনটিভি অনলাইন : এরপরে শুটিং শেষ করলেন কিভাবে?
পরী মণি : দুই দিন শুটিংয়ের পরে অনেক কান্নাকাটি করে সেলিম ভাইকে বলেছিলাম , ‘আমি বাড়ি যাব।আমি শুটিং করতে পারছি না।’ ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ করে আমার কথা শুনেছিলেন। তারপর আমাকে বলেছিলেন, কালকের দিনটা শুটিং করো, যদি কাল না পারো তাহলে আমি তোমাকে নিজেই গিয়ে বাড়িতে দিয়ে আসব।
ঠিক পরের দিন সকালে সবকিছু উল্টে পাল্টে গিয়েছিল। সেদিন ইউনিটের সবার সঙ্গে খুব ভালো সময় কেটেছিল। সকালে ঘুম ভাঙ্গার পরে মেক-আপ আর্টিস্ট রবিন ভাই বলেছিলেন, ‘এই শুভ্রা কেমন আছো?’ কিছুক্ষণ শুটিং করার পর আমি আবিস্কার করেছিলাম, মনের অজান্তে পরীকে আমি হারিয়ে ফেলেছি। আমি শুভ্রা হয়ে গিয়েছি। ছবিতে শুভ্রার শুভ্র একটা জীবন। যাইহোক ধীরে ধীরে শুটিং ইউনিট অনেক আপন হয়ে গিয়েছিল।
এনটিভি অনলাইন : ছবির থিয়েটারে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
পরী মণি : আমার কাছে সেলিম ভাই ম্যাজিকের মতো। উনি সামনে দাঁড়িয়ে যা বুঝিয়ে দিতেন আমি তাই করতাম। তাই মঞ্চে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকলেও ভালোভাবে কাজ করেছি।
এনটিভি অনলাইন : নাচে-গানে ভরপুর ছবিতে বেশি অভিনয় করছেন। ‘স্বপ্নজাল’ ছবির মতো আরও ছবি করার ইচ্ছে কি আছে?
পরী মণি : সত্যিই কি স্বপ্নজাল আরও একটা হবে! এই ছবিতে অভিনয়ের পরে একটা চাহিদা তৈরী হয়েছে আমার। এখন দেখা যাক কী হয়! এখনো শুভ্রাতেই ডুবে আছি আমি।
এনটিভি অনলাইন : শুনেছি ‘স্বপ্নজাল’ ছবির শুটিংয়ের সময় অনেক ছবির সাইনিং মানি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এখন সেই সব ছবি না করার আফসোস কি আছে?
পরী মণি : এটা একদম সত্যি কথা ‘স্বপ্নজাল’ ছবির শুটিংয়ের সময় নয়টা ছবির সাইনিং মানি আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। আমি তখন এতটুকু কষ্ট পাইনি যে অ্যাকাউন্ট থেকে এতগুলো টাকা চলে যাবে বরং অনেক আনন্দ লেগেছিল।
এনটিভি অনলাইন : গিয়াসউদ্দীন সেলিমের ‘মনপুরা’ছবিটি কি আপনি দেখেছিলেন?
পরী মণি : যখন সিনেমাটি দেখেছি তখন সিনেমা খুব বেশি আমি বুঝতাম না। সিনেমাটি দেখে পরীর জন্য মায়া লেগেছিল। ফারহানা মিলি ছবিতে পরী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।