ড্যানি সিডাকের মুখোমুখি
‘আমরা এমনিতেই এখন মৃত্যুশয্যায় আছি’

ড্যানি সিডাক আশি ও নব্বই দশকের অন্যতম খলনায়ক। শুধু অভিনয় নয়, তিনি প্রযোজনা করেছেন, ছবি পরিচালনাও করেছেন। ড্যানি চলচ্চিত্রে আসেন শহীদুল ইসলাম খোকনের হাত ধরে। ১৯৮৪ সালে ‘লড়াকু’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তাঁর অভিষেক ঘটে। মার্শাল আর্ট অভিনেতা রুবেলের বিপরীতে অভিনয়ের জন্য খলনায়ক চরিত্রেও একজন মার্শাল আর্ট জানা অভিনেতার প্রয়োজন ছিল, ড্যানি সিডাক সেই প্রয়োজন পূরণ করেছেন। খলচরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি নায়ক হিসেবে একাধিক ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান। বর্তমানে তৈরি করছেন ‘কাসার থালা রুপালি চাঁদ’ শিরোনামের একটি ছবি। প্রযোজনা করতে চান আরো নতুন ছবি। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে দুদকের নজরদারিও চান তিনি। সম্প্রতি নিজের চলচ্চিত্র ভাবনা নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
প্রশ্ন : এখন কী নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
ড্যানি সিডাক : এই মুহূর্তে ‘প্রতিশোধের আগুন’ শিরোনামে একটি ছবিতে অভিনয় করছি। পূবাইলে ছবির শুটিং চলছে। এছাড়া কয়েকদিন আগে আমার পরিচালিত ‘কাসার থালা রুপালী চাঁদ’ ছবির এডিটিং শেষ করলাম। কিছু প্যাচ ওয়ার্ক বাকি আছে। আগামী মাসেই তা করার চিন্তা রয়েছে।
প্রশ্ন : এক সময় আপনি ‘সুপার ম্যান’, ‘বনের রাজা টারজান’ শিরোনামে ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। এই ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্রে কীভাবে আপনার আগ্রহ তৈরি হলো?
সিডাক : আমি বাংলাদেশে চলচ্চিত্রে কাজ করলেও সবসময় লক্ষ করতাম হলিউড, বলিউড কী করছে। সেখানকার ছবিতে আমি লক্ষ করতাম আমরা যেসব বিষয় নিয়ে ছবি নির্মাণ করি তারচেয়ে আলাদা ধরনের কিছু বিষয় থাকত সেগুলোতে। দর্শক বাড়তি আগ্রহ নিয়ে দেখত। বিষয়গুলো আমাকে টানত। কিন্তু আমাদের সময় সুপারম্যান ছবির একটি শট নেওয়াটাও অনেক কষ্টের ছিল। তারপরও আমি আমার মতো চেষ্টা করেছি এবং সফল হয়েছি, তখনকার সময় বনের রাজা টারজান বা সুপারম্যান ছবিগুলো কিন্তু ভালো ব্যবসা করেছে। আমি বিশ্বাস করি এখন এই সময়ে নির্মাণ করলে তাও ভালো ব্যবসা করবে।
প্রশ্ন : এখন চলচ্চিত্র প্রযোজনা করছেন না কেন?
সিডাক : আসলে চলচ্চিত্র একবার যে করেছে সে জীবনে কোনো দিনই চলচ্চিত্র ছাড়তে পারবে না। আমিও নিজেকে চলচ্চিত্রের মানুষ হিসেবেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আর মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ছবি নির্মাণ করতে চাই। এত দিন চলচ্চিত্র নির্মাণ করার কোনো পরিবেশ ছিল না, তাই করা হয়নি। এখন আবার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে- তাই নতুন করে আবারও ভাবছি। গল্প রেডি করছি। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি চলচ্চিত্র শুরু করব এবং তা হবে সুপার হিরো ধরনের ছবি। আগে অনেক কিছুই চিন্তা করেছি কিন্তু করতে পারিনি। এখন যে প্রযুক্তি এসেছে তাতে করে সব কিছুই করা সম্ভব, অনেক কাজই এখন টেবিলে বসে করা যায়।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের এখনকার চলচ্চিত্র নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
সিডাক : আমি আসলে চলচ্চিত্র নিয়ে সব সময়ই আশাবাদী। মাঝে কিছুদিন আমাদের সিনেমা হল নিয়ে যে অরাজকতা ছিল তা কাটতে শুরু করেছে। সরকার এরই মধ্যে সিনেমা হলের জন্য টাকা বরাদ্দ করেছে। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হয়ে যাবে। সেখানে ই-টিকেটিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। যে কারণে আমাদের সিনেমা হলের সমস্যা দূর হবে। আর সিনেমা হল যদি আমাদের থাকে তাহলে আমার মতো অনেক প্রযোজক আছেন, যাঁরা আবারও চলচ্চিত্র শুরু করবেন। আশা করি সেই দিন আর দূরে নয়।
প্রশ্ন : সিনেমা হলের পাশাপাশি ফিল্মসিটির উন্নয়ন হচ্ছে। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
সিডাক : ফিল্ম সিটি বা সিনেমা হলের জন্য সরকারের যা বরাদ্দ আছে তা সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে হবে। এর আগেও শুনেছি সরকার এফডিসিকে টাকা দিয়েছে কিন্তু এফডিসি তা কাজে লাগাতে পারেনি। অনেকেই টাকা আত্মসাৎ করেছে, আবার অনেকেই টাকা ফেরত দিয়েছে। সবার মনে রাখতে হবে এখন চলচ্চিত্রের অনেক খারাপ একটা সময়, এই সময় সবার উচিত চলচ্চিত্রের পাশে দাঁড়ানো। সিনেমা হলের জন্য যে টাকা বরাদ্দ হয়েছে তা যদি সঠিক ভাবে কাজে না লাগানো হয়, তাহলে আমাদের চলচ্চিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। ফিল্ম সিটিতে কিছুদিন আগে প্রায় ২০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। আমি সেখানে গিয়েছি, দেখেছি, আমার মনে হয় না সেখানে এত টাকা ব্যবহার করা হয়েছে। আমার মনে হয় চলচ্চিত্রের এই বরাদ্দ ও কাজের বিষয়গুলোর দিকে দুদক নজরদারি করলে আমাদের চলচ্চিত্র বেঁচে যাবে। কারণ আমরা এমনিতেই এখন মৃত্যুশয্যায় আছি।
আরেকটা বিষয় বলতে চাই। শুনেছি ফিল্ম সিটির জন্য আরো ৫০০ কোটি টাকার একটা বরাদ্দ আসতে পারে। এই বিষয়ে আমি সরকারের প্রতি অনুরোধ রাখব, আপনারা ফিল্ম সিটির জন্য এত টাকা দেবেন না। এই টাকা দিয়ে এফডিসির তত্ত্বাবধানে ২০০ সিনেমা হল করে দিন। আমরা প্রয়োজনে দেশের বাইরে থেকে শুটিং করে সিনেমা বানাব। আসলে যদি দোকানই না থাকে তা হলে আমরা কারখানার পরিবেশ তৈরি করে কী হবে? কারখানায় উৎপাদন করে তা তো নদীতে ফেলে দিতে হবে।