কালুর খাবারে তারকাদের তৃপ্তি

নায়করাজ রাজ্জাক চিংড়ি খেতে খুব ভালোবাসেন, সাথে কিছু সবজি, মাছের মধ্যে কাজলী ও পাবদা মাছ পছন্দ করেন। শাবনুর হাঁসের মাংস খেতে ভালোবাসেন কিন্তু ঝাল থাকতে হবে বেশি। মৌসুমী দেশি মোরগ, গরুর কালো ভুনা পছন্দ করেন। দেশি মাছ সবই খান তিনি। ওদিকে নায়ক বাপ্পী সাদা সবজি খেতে ভালোবাসেন। মিজু আহমেদ আর প্রয়াত নায়ক মান্না এক সেটে থাকলে সেদিন মাছের মাথা খাওয়ার ধুম পড়ে যেত। আর খলনায়ক চরিত্রের জন্য বিখ্যাত মিশা সওদাগর তো মসলা দিয়ে তরকারি একদমই খান না। দেশি মোরগ আর সাদা সবজি তাঁর প্রিয় খাবার। অন্যদিকে, নায়িকা মাহিয়া মাহীর বেশি ঝালের ভর্তা ও প্লেটভর্তি সবজি হলে আর কিছুর দরকার হয় না। কে কী খেতে ভালোবাসেন এভাবেই সেসবের বিবরণ দিচ্ছিলেন এফডিসির খাবার সরবরাহকারী কালু গাজী। তাঁকে অবশ্য সবাই ‘খাওয়াওলা’ বলেই চেনে। চলচ্চিত্র, টিভি ও বিজ্ঞাপনের শুটিং স্পটে যারা খাবার সরবরাহ করেন, তাঁদেরই একজন মোহাম্মদ কালু গাজী। তিনি এনটিভি অনলাইনকে জানালেন তারকাদের নানা পছন্দের খাবারের কথা।
প্রশ্ন : এই ব্যবসায় কীভাবে জড়ালেন?
উত্তর : মোহাম্মদ স্বপন গাজী আমার বড় ভাই। তিনি এফডিসিতে খাবার দিতেন, তখন থেকে আমি ভাইয়ের সাথে এই কাজ করি। ১৬ বছর থেকেই খাবার নিয়ে বিভিন্ন লোকেশনে যেতে হতো। ২০০৫ সালে বড় ভাই মারা গেলে একাই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। মিডিয়াতে কালুর খাবার বললেই সবাই চেনে, এফডিসির পাশে রেললাইনের পাশে আমার হোটেলের নাম ‘ভাই ভাই কেটারিং’। সাপ্লাই ছাড়াও ফিল্মের লোকজন এখানে এসে খান আবার অনেকে শখ করেও খেতে আসেন। তবে দুপুর ২টার পরে আর কোনো খাবার থাকে না।
প্রশ্ন : প্রতিদিন কী পরিমাণ খাবার সরবরাহ করতে হয়?
উত্তর : দেশের অবস্থা তো ভালো না। আগে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ জনের খাবার দিতে পারতাম। এখন আড়াইশ থেকে ৩০০ জনের খাবার দিতে পারি। আর বিভিন্ন লোকেশনে যখন শুটিং হয়, তখন সেখানে আমার লোক পাঠিয়ে দেই। ওরা স্পটে গিয়ে রান্না করে খাওয়ায়। আগে পাঁচটা ইউনিট পর্যন্ত রান্নার লোক সরবরাহ করতাম। এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে তিন-চারটায়।
প্রশ্ন : কোন খাবারের চাহিদা বেশি?
উত্তর : ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে মাংস, মাছ, সবজি, কয়েক রকমের ভর্তা, দুই ধরনের ডাল, ভাত এসব জিনিস মানুষ অর্ডার দেয়। আর কিছু লোক বিশেষ খাবার চায়, আড়াই শ-তিন শ টাকার ভেতর, সে খাবারও দিই। তবে ৮০ থেকে ১০০ টাকার সাধারণ খাবারটাই সবাই নেয়।
প্রশ্ন : খাবারের মান কেমন?
উত্তর : আমরা সকাল ১০টায় কারওয়ান বাজার থেকে বাজার করি, ১২টার মধ্যে রান্না করি, দেড়টার মধ্যে খাবার পৌঁছে দিই। আমাদের এখানে কোনো বাসি খাবার থাকে না। কারণ এখানে রান্না হয় অর্ডার অনুযায়ী। বেশি খাবার আমরা রান্না করি না। কারওয়ান বাজার পাশেই, টাটকা মাছ-মাংস-সবজি পাই। আমাদের বড় হোটেল না, তাই লাখ টাকা ভাড়া দিতে হয় না। খাবারের মানই আমাদের একমাত্র ভরসা। খাবার ভালো হলে আমাদের ব্যবসা টিকবে।
প্রশ্ন : শুধুই কি শুটিংয়ের খাবার দেন?
উত্তর : বাইরে থেকে তেমন কোনো অর্ডার আসে না, যদি আসে সেখানে খাবার দেওয়া সম্ভব। সাধারণত নাটক সিনেমার শুটিং, তারপর বিভিন্ন টিভিতে যখন অনুষ্ঠান থাকে, যেমন কয়েকদিন আগে এনটিভিতে একটা অনুষ্ঠানের জন্য পরপর তিনদিন ১১০টা করে খাবার দিয়েছি।
প্রশ্ন : আপনার কাছে খাবারের অর্ডার করার পদ্ধতি কী?
উত্তর : কেউ যদি দুপুরে খাবার খেতে চায় তবে সকাল ৯টার মধ্যে অর্ডার দিতে হয়। আর রাতে খেতে চাইলে বিকেল ৪টার মধ্যে বলতে হবে। এরপর বললে সরবরাহ করা সম্ভব না। খাবার আপনার ওখানে দিয়ে আসবে আমার লোক, প্লেট নিয়ে যাবে, সবাইকে খাইয়ে চলে আসবে। তবে সিএনজি ভাড়া দিয়ে দিতে হবে।
প্রশ্ন : ব্যবসা বড় করছেন না কেন?
উত্তর : যারা খাবার নেন, তারা সবাই জানেন আমাদের দোকান ছোট, আয়োজন বড়। আমি দোকান যদি বড় করি, তাহলে খরচ বাড়বে। তাহলে কম দামে খাবার দিতে পারব না। প্রতিদিন যাঁরা খেতে আসেন, তাঁরাও জানেন আমাদের পরিবেশ। আর খাবারের রেট বাড়ালে বিক্রি কমে যাবে। আমরা দোকানের সৌন্দর্য না বাড়িয়ে খাবারের মান বাড়ানোর চেষ্টা করি।