বিশ্ব শিশু দিবস
শিশুদের সাধারণ রোগ ব্যধি

আজ ১ জুন, বিশ্ব শিশু দিবস। দিবসটিকে উদ্দেশ্য করে আমাদের আলোচনার বিষয় শিশুদের সাধারণ রোগব্যাধি। এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৫৩তম পর্বে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন বিশিষ্ট শিশুরোগ এবং শিশু কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ, বঙ্গব্ন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান।
প্রশ্ন : আমাদের দেশের শিশুরা সাধারণত কোন কোন রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে?
উত্তর : আমাদের দেশের শিশুরা সাধারণত ডায়ারিয়া, মূত্রনালির প্রদাহ, নেফ্রোটিক সিনড্রম, পুষ্টিহীনতা , নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগে ভোগে।
প্রশ্ন : সবচেয়ে বেশি কোন রোগটি আপনারা দেখেন শিশুদের ক্ষেত্রে?
উত্তর : দেখা যায়, বহির্বিভাগ এবং হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া একটি অত্যন্ত প্রচলিত সমস্যা। শিশুরা এই রোগে বেশি ভোগে। তারপরে অন্যান্য রোগ।urgentPhoto
প্রশ্ন : এই যে ডায়রিয়ার কথা বলছিলেন বাংলাদেশে সর্বোচ্চসংখ্যক শিশুমৃত্যুর কারণ ডায়রিয়া। আসলে কী হয়? কেন এত শিশু মারা যাচ্ছে ডায়রিয়ার কারণে?
উত্তর : বিভিন্ন কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। আমাদের দেশে বিশেষ করে দুই বছরের নিচের শিশুদের ডায়রিয়ার সবচেয়ে প্রচলিত যে কারণ তা হলো এক ধরনের ভাইরাস। যাকে বলে রোটা ভাইরাস। আরেকটু বড় বয়সের বাচ্চাদের জীবাণুঘটিত ডায়রিয়া হতে পারে। সেগুলোকে বলা হয় ইনভেসিভ ডায়রিয়া। ইনভেসিভ ডায়রিয়ায় সাধারণত পায়খানার সাথে রক্ত এবং মিউকাস যায়। আর রোটা ভাইরাসজনিত যে ডায়রিয়া, সেখানে সাধারণত পানির মতো পাতলা পায়খানা হয়। শিশুদের ডায়রিয়া হওয়ার যতগুলো কারণ দেখা যায়, তার মধ্যে মা যদি বাচ্চাকে বুকের দুধ না খাওয়ায়, ঠিকমতো ভ্যাকসিন না দেয়, বিশেষ করে ভিটামিন এ ক্যাপসুল এবং অন্যান্য ভ্যাকসিন যদি না দেয় এবং যদি বোতলে দুধ খাওয়ায় তাহলে ডায়রিয়া হতে পারে।
প্রশ্ন : যখন একটি শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়, তখন আসলে কী করা উচিত?
উত্তর : ডায়রিয়া প্রতিরোধ করার জন্য মাকে বুকের দুধ খাওয়াতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। একজন মা যদি তার শিশুকে দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ায়, অধিকাংশ সময় দেখা যায় সেসব শিশুর হয়তো বছরে একবার ডায়রিয়া হয়। কিন্তু যারা বোতলের দুধ খাওয়ায় তাদের ২০ থেকে ২৪ গুণ বেশি ডায়রিয়া হয়। এ ছাড়া ছয় মাস বয়সের সময় পারিবারিক খাবার শুরু করতে হবে। পারিবারিক খাবার ভালোভাবে তৈরি করতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হাত দিয়ে তৈরি করতে হবে। প্রতিবার গরম করে বাচ্চাকে দিতে হবে। যে সমস্ত পানি ব্যবহার করা হয়, তা যেন জীবাণুমুক্ত থাকে মায়ের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এ ছাড়া শিশুর প্রস্রাব-পায়খানা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। মা-বাবার ধারণা বা আমাদের দেশে অনেকের ধারণা, শিশুদের পায়খানা এটা তেমন মারাত্মক কিছু না। কিন্তু এটা ভুল ধারণা।
প্রশ্ন : ডায়রিয়ার পাশাপাশি আরো কিছু বিষয় রয়েছে, যেমন পুষ্টিহীনতা, যেটি অত্যন্ত সাধারণ একটি সমস্যা। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই পুষ্টিহীনতার কারণগুলো কী?
উত্তর : অনেকগুলো কারণে একটি বাচ্চা পুষ্টিহীনতায় ভোগে। যদি দেখা যায় যে ছোট বাচ্চা জন্ম হয়েছে সে যদি বুকের দুধ না খাওয়ায়, বোতলে দুধ খাওয়ায় এবং সেই দুধ যদি ঠিকমতো তৈরি না করে। বাচ্চার যদি ঘন ঘন ইনফেকশন হয়। এ ছাড়া দারিদ্র্যও একটি বড় কারণ। দরিদ্র পরিবারগুলোতে পুষ্টিহীন বাচ্চার সংখ্যা বেশি।
প্রশ্ন : এ ছাড়া কৃমির বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে বাচ্চাদের পুষ্টিহীনতার সমস্যা হয়। সেটি কেন হচ্ছে?
উত্তর : প্রতিটি বাচ্চাকে চার মাস পরপর কৃমির ওষুধ দেওয়া উচিত। যে সমস্ত বাচ্চা কৃমিতে আক্রান্ত হয়, এসকাইলিসটোমা ডোডোনা নামে এক ধরনের কৃমি আছে, তারা বাচ্চার শরীর থেকে রক্ত চুষে খায়। এর ফলে বাচ্চাটি রক্তশূন্যতায় ভোগে। বদ হজম, পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা ইত্যাদি রোগে ভোগে। শিশু যে সমস্ত খাবার খায় সে পুষ্টিটা কৃমি নিয়ে খেয়ে ফেলে। তখন বাচ্চাটা শেষ পর্যন্ত পুষ্টিহীনতায় ভোগে।
প্রশ্ন : এ থেকে মুক্তির উপায় কী?
উত্তর : পুষ্টিহীনতা প্রতিরোধে আমরা মায়েদের বলব প্রতি মাসে বাচ্চাটার সঠিক বৃদ্ধি হচ্ছে কি না সেটি দেখা এবং পাতলা পায়খানা যদি কখনো হয় ঠিকমতো খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর পাশাপাশি বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রাম এলাকায় একটি প্রবণতা আছে ঘন ঘন বাচ্চা নেওয়ার। এ জন্য প্রথম বাচ্চা থেকে দ্বিতীয় বাচ্চার ক্ষেত্রে সময় নিতে হবে, কমপক্ষে তিন বছর হতে হবে। আর রোগ প্রতিরোধক টিকা দিতে হবে। এভাবে আমরা অনেক বাচ্চার পুষ্টিহীনতা দূর করতে পারি।
প্রশ্ন : একটু যদি ডায়রিয়ার দিকে ফিরে যাই আমরা। ডায়রিয়ার জটিলতা কী হতে পারে যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হয়?
উত্তর : ডায়রিয়ার যদি চিকিৎসা না করা হয়, মারাত্মক জটিলতা তৈরি হতে পারে। কিডনি হঠাৎ করে খারাপ হয়ে যেতে পারে। আরেক ধরনের রোগ আছে ইমোলাইটিক ইউরিমিক সিনড্রম, এটি হতে পারে। এখানে শরীরের যে রক্তকণিকা, সেটা ভেঙে যায়। বাচ্চা রক্তশূন্যতায় ভোগে এবং তার কিডনি খারাপ হয়ে যায়।
প্রশ্ন : ডায়রিয়া যে জটিলতার দিকে যাচ্ছে সেটি বোঝার কী উপায় আছে?
উত্তর : ডায়রিয়ার ফলে বাচ্চা পানিশূন্যতায় ভুগতে পারে। পানিশূনত্যার বিভিন্ন ধরনের জটিলতাকে আমরা পর্যায়ক্রমে ভাগ করতে পারি। একটা বাচ্চার যদি মারাত্মক পানিশূন্যতা দেখা দেয়, তখন বাচ্চার কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ ছাড়া শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান যাকে বলা হয় ইলেকট্রোলাইট, সোডিয়াম, পটাশিয়াম এগুলো কমে যেতে পারে। এ ছাড়া শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। শরীরের বাইকার্বোনেট নামে একটি পদার্থ আছে, যেটি ডায়রিয়ার ফলে কমে যায়।