বিষণ্ণতা কী?

বিষণ্ণতা একটি মানসিক সমস্যা। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৭৫০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন সেলিনা ফাতেমা বিনতে শহিদ। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : বিষণ্ণতা বলতে কী বোঝানো হয়?
উত্তর : আসলে তো হতাশা একটি প্রচলিত শব্দ। তবে ক্লিনিক্যালই যদি বিষণ্ণতা বলতে যাই, তাহলে কতগুলো বিষয় দেখতে হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় আছে, সেই সময় পর্যন্ত একনাগাড়ে তার মন খুব খারাপ থাকবে। বিষণ্ণ থাকবে, হতাশ থাকবে। তার কোনো কিছুই ভালো লাগবে না। আগে যে বিষয়গুলোতে আনন্দ লাগত, সেগুলোতে আনন্দ পাবে না। আরো অনেক লক্ষণ আছে। তার অতিরিক্ত ঘুম হবে কিংবা একেবারেই ঘুম হবে না। কখনো দেখা যাবে, খুবই রুচি বেড়ে গেছে কিংবা একেবারেই রুচি কমে গেছে। আবার অনেক সময় বিশ্রামহীনতা লাগতে পারে। আবার কেউ হয়তো একদম ঝিমিয়ে আছে, এ রকম হতে পারে। উঠতেই পারে না, দুর্বল লাগছে এমন সমস্যা হয়।
আবার অনেক সময় খুব একাকিত্বে ভোগে। নিজেকে খুব নিঃসঙ্গ লাগে। আবার কারো কারো মনোযোগে সমস্যা হয়। স্মৃতিতে সমস্যা হয়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে আত্মহত্যার চিন্তা আসতে থাকে। ভাবেন, মরে গেলেই ভালো হতো। অনেকে ধর্মীয় কারণে হয়তো করেন না। তবে খুব ইচ্ছা করে। বেঁচে থাকার আগ্রহটা একদম কমে যায়। পাশাপাশি তার সবকিছুতেই নেতিবাচক চিন্তা হয়। আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। আমি অপদার্থ। আবার অন্যদের সম্পর্কেও নেতিবাচক চিন্তা আসে। সবাই ভালো করছে, সবাই স্বার্থপর। আবার ভবিষ্যৎ নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা হয়, আমার ভবিষ্যৎ দিন দিন আরো খারাপ হবে। ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এ ধরনের অনেক লক্ষণ যদি একত্র হয়, কমপক্ষে পাঁচটি লক্ষণ যদি দেখা দেয়, কমপক্ষে দুই সপ্তাহ যদি একনাগাড়ে চলতে থাকে, তাহলে তাকে বিষণ্ণতা বলা হয়।
অনেক সময় দেখা যায়, অনেক শারীরিক পরিবর্তনের কারণেও বিষণ্ণতা হয়ে যায় অনেক দিন ভুগতে ভুগতে। অনেকে হয়তো পারসোনালিটি ডিজঅর্ডারে ভুগছেন। তার পারসোনালিটির কারণে সমাজের সঙ্গে মিশতে পারছেন না। তখন দেখা যায়, পারসোনালিটির কারণে জীবন থেকে অনেক কিছু হারাচ্ছেন। এর জন্য বিষণ্ণতায় ভুগতে পারেন। সেগুলো হলো সিগনিফিকেন্ট ক্লিনিক্যাল মেজর ডিপ্রেশন ডিজঅর্ডার। অন্যান্য রোগের সঙ্গেও বিষণ্ণতা থাকতে পারে।
বিষণ্ণতা হলে তার পেশাগত দিক, একাডেমিক কাজের ক্ষেত্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সামাজিক ক্ষেত্রে, পারিবারিক ক্ষেত্রে, লেখাপড়ার ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব বিষয় যখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তখন আমরা বুঝব যে তিনি বিষণ্ণতায় ভুগছেন এবং তার প্রফেশনাল সাহায্য দরকার।