শুচিবায়ুগ্রস্ততা কী?

ওসিডি বা অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার বা শুচিবায়ুগ্রস্ততা এক ধরনের মানসিক রোগ। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৭৯২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোরোগ বিদ্যা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) একটি জটিল নাম। এই রোগটি আসলে কী?
উত্তর : বাংলায় এর সহজ একটি পরিচিত রয়েছে। সেটি হলো শুচিবায়ুগ্রস্ততা। এটিই আসলে ওসিডি। আর আমাদের কাছে যেটি পরিচিত, সেটি হলো, খুঁতখুঁতে স্বভাব, ময়লা বিষয়টিকে নিয়ে। তবে রোগটি কিন্তু শুধু ময়লার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এর সঙ্গে আরো অনেক বিষয় রয়েছে।
যেকোনো চিন্তা, ধর্মীয় চিন্তা হোক বা পারিবারিক চিন্তাই হোক বা শারীরিক চিন্তাই হোক বা অন্য কোনো চিন্তা- সেটি বারবার মাথায় আসছে, বারবার চিন্তার মধ্যে আসছে- আমি চিন্তাটি করতে চাই না, তারপরও আবার আসছে। আমি জানি চিন্তাটির কোনো প্রয়োজন নেই। অপ্রয়োজনীয় একটি চিন্তা, আমার দরকার নেই, আমি সরাতে চাই। কিন্তু হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত এটি আমার কাজের ক্ষেত্রে অসুবিধা করছে। এতে দেখা যায়, একটি মানুষের প্রতিদিনের সব কাজেই এমনভাবে প্রভাব ফেলে যে মানুষ আর স্বাভাবিক থাকতে পারে না। তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক- এমনকি ঘুম থেকে শুরু করে সব জায়গায় সমস্যা হয়। এটি আসলে শুচিবায়ু। ইংরেজিতে আমরা একে অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার বলি।
আমাদের দেশে বারবার পরিষ্কারের বিষয়টিকে শুচিবায়ুগ্রস্ততা বলে। কেউ কেউ একে রোগ বলে। আবার কেউ কেউ একে রোগ হিসেবে ভাবতে রাজি নয়।
প্রতিটি আবেগ, উদ্বেগ ইতিবাচক। যতক্ষণ পর্যন্ত সেটি কাজের ক্ষেত্রে সাহায্য করে। তবে একটি পর্যায়ে গিয়ে সেটি আর ভালো থাকে না। আপনি যদি টেনশন না করেন, পড়াশোনা করবেন না। আর পড়াশোনা না করলে তো পরীক্ষায় পাস করবেন না। সুতরাং টেনশনও কিন্তু ইতিবাচক। তবে সেটা যখন বেশি হয়ে যায়, তখন কোনো কিছু আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। একটি চিন্তা বারে বারে না করলে আপনি তো কিছু আবিষ্কার করতে পারবেন না। আপনার যদি বারবার একই চিন্তা না আসে তাহলে তো কোনো লেখা লিখতে পারবেন না। বৈজ্ঞানিক কোনো কিছু আবিষ্কার করতে চান, করতে পারবেন না। এটা খুবই প্রয়োজনীয় জিনিস। তবে রোগের বেলায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় অপ্রয়োজনীয় একটি চিন্তা আসে। উদাহরণ হিসেবে বলি, আমি ধার্মিক, নামাজ পড়ি। নামাজে দাঁড়ানোর পর এমন সব কথাবার্তা আমার মাথায় আসা শুরু করে যে আমি জানি- এটা কোনোভাবে সত্যি নয়। আমি নামাজ থেকে বারবার ওই চিন্তা সরানোর চেষ্টা করি। পারি না। শেষ পর্যন্ত নামাজ ছাড়তে হয়। দেখা যায়, একজন মানুষ অনেকবার চেষ্টা করেও নামাজ পড়তে পারছে না। আমি জানি এটি অপ্রয়োজনীয় চিন্তা, এরপরও বারবার আসে।
আরেকটি ছেলেকে আমি পেয়েছিলাম, এসএসসি পরীক্ষায় ফার্স্ট বা সেকেন্ড স্টেন্ড করা। পরে শেষ পর্যন্ত ইন্টার মিডিয়েট পরীক্ষা দিতে পারল না। এজন্য যে একটি পৃষ্ঠা পড়ার পর পরের পৃষ্ঠায় যখন যায় তখন তার মনে হয় যে আমি আগের পৃষ্ঠাটি পড়তে পারিনি। এই যে চিন্তাটি বারবার আসে যে আমি আগের পৃষ্ঠা পড়িনি – এই যে চিন্তাটা বারবার আসা- এটা সমস্যা করে। সে জানে যে সে এটি পড়েছে। তবে বাধ্য হয়ে আবার আগের পৃষ্ঠা পড়ে। শেষ পর্যন্ত এই বইটাই কিন্তু তার পড়া হলো না। এটা খুব কষ্টের তার জন্য। একটি হলো যে রোগটি নিজেই তার জন্য কষ্টকর। আমি জানি এই চিন্তা যৌক্তিক নয়, এরপর বারবার করছি। আর পরিবারের অন্য মানুষজন এটা বুঝতে চায় না। অনেকে বকা দেয়, তুমি এটি করো কেন?
আবার এই যে হাত ধোয়া। আমি জানি ময়লা নেই তবে হাত ধুতে ধুতে অনেক সময় ঘা হয়ে যায়। হাতে পায়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘা হয়ে যায়। এসব বিষয়ে নিজে যেমন কষ্ট পায়, একই সঙ্গে আশপাশের মানুষজন আমরা যেহেতু বুঝতে পারি না,এর জন্য বকা বা তীর্যকভাবে আমরা তার দিকে তাকাই। অনেকে খোঁচা দিয়েও কথা বলে। সামাজিকভাবেও সে নিগৃহীত থাকে।