কর্মক্ষেত্রে মানসিক সমস্যা হওয়ার কারণ কী?

কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে মানসিক সমস্যা হতে পারে। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৮৭২তম পর্বে কথা বলেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক মো. আজিজুল ইসলাম এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সেলিনা ফাতেমা বিনতে শহিদ।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক মো. আজিজুল ইসলাম বর্তমানে আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজে মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সেলিনা ফাতেমা বিনতে শহিদ বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : কিছু কিছু মানসিক রোগের উৎস কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ হতে পারে?
উত্তর : রোগ বলব না আমি সেভাবে। কারো মধ্যে যদি আগে থেকে অস্থিতিশীলতা থাকে, তখন কর্মক্ষেত্রের চাপটা রোগটাকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে বা উদ্দীপ্ত করতে পারে। আবার অনেকে অনেকদিন ধরে বিভিন্ন চাপে ভুগতে ভুগতেও রোগী হতে পারে।
কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তবে কর্মক্ষেত্রকেই কেন প্রতিপাদ্য করা হলো? এর কারণ, কর্মক্ষেত্র যেন বন্ধুসুলভ হয়,সেখান থেকে আমরা যেন কোনো মানসিক অসুস্থতা নিয়ে না বের হই। আসলে অনেক কারণ কর্মক্ষেত্রে ঘটে যেটি মানসিক অসুস্থতার জন্য দায়ী থাকতে পারে। যেমন ধরুন, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ।
অনেক সময় আমরা দেখি সারাক্ষণ খুব কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে কাজ করছে। কিংবা আমার বসার জায়গা নেই, আলো বাতাস নেই- এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।
তার যে পজিশনে ( জায়গা) থাকার কথা দীর্ঘদিন সে সেরকম পজিশনে থাকছে না। কারো কারো এমন হচ্ছে তার যারা নিচে আছেন তাদের আগে প্রমোশন হয়ে যাচ্ছে। এটা দেখে,কেউ কেউ হতাশ হচ্ছে। আবার দেখা যাচ্ছে, কর্মক্ষেত্রের চাহিদাটা অনেক বেশি। কাজের চাপ অনেক বেশি। যেই কাজটা তিনদিনে করার কথা,সেটা হয়তো একজন কর্মকর্তা একদিনে করে দিতে বলছেন। তখন তার ওপর অনেক চাপ পড়ে যাচ্ছে।
আবার অনেক সময় দেখা যাচ্ছে সহকর্মীদের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না। যারা নতুন তারা অনেক সময় বাজে কথার শিকার হচ্ছে। যেমন : ‘এই ছেলে তো বেশি জানে, বা এই মেয়ে তো বেশি জানে, অনেক পাকামি করছে।’ আবার নতুন মানুষ কম জানবে এটাই স্বাভাবিক। এতে সবাই একটু তার ওপরে পাওয়ার ( ক্ষমতা) খাটাতে চায়,যারা একটু স্পর্শকাতর তারা এটা নিতে পারে না, অনেক সময়।
আবার অনেক সময় দেখা যায় ব্যক্তির নিজস্ব কারণে, তার সামাজিক দক্ষতার সমস্যার কারণে যোগাযোগ সঠিকভাবে করে না। কার সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করতে হবে, সেটা জানে না। সে দিনের পর দিন হয়তো অনেক ভালো কাজ করে যাচ্ছে, কিন্তু তার কাজটা কেমন হচ্ছে এই বিষয়ে সে যোগাযোগ করছে না অন্যদের সঙ্গে। দেখা যাচ্ছে অন্যজন তার চেয়ে কম কাজ করে যোগাযোগ রক্ষা করার মাধ্যমে তার চেয়ে ভালো করছে। তখন সে হতাশ হচ্ছে। আবার অনেক সময় দেখা যায় তার কাজের পরিমাণে স্যালারি অনেক কম পাচ্ছে। এইসব কারণে কর্মক্ষেত্রে তার অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। এটি তার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে।
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দেখি, একটি চাকরি পাওয়াটাই অনেক কঠিন হয়ে যায় অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে। তাই দেখা যাচ্ছে, আর কোনো অপশন নেই সে জন্য বাধ্য হয়ে মানুষ চাকরিতে থাকছে। সন্তুষ্টির অভাবে তার সমস্যা হচ্ছে। ছেড়েও যেতে পারছে না, আবার এতেই নিয়মিত হচ্ছে
অধ্যাপক মো. আজিজুল ইসলাম : এটাকে এভাবে বলা যায় যে কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ। আপনি যেখানে কাজ করেন সেটি যত মানসিক চাপ মুক্ত হবে, তত উন্নতি হবে। উন্নয়ন যদি বাড়ে সে কোম্পানি হোক, রাষ্ট্রীয় সংস্থা হোক, তার উন্নতি হবে। উন্নয়ন যদি বাড়ে আমার মনের মাঝেও সুখ আসবে। আমি কিছু করতে পারছি, কিছু দিতে পারছি।
আমাদের দেশে বসিংয়ের একটি অশুভ প্রতিযোগিতা থাকে। অধঃস্তন কর্মচারীদের ওপর আমাদের একটি প্রভাব খাটানোর বিষয় থাকে। এটি সাংঘাতিকভাবে মানসিক স্বাস্থ্য বা মনের কষ্টের কারণ হতে পারে। ‘বুলিং’ খুব গুরুত্বপূর্ণ। অধঃস্তনদের যেনতেন ভাবে ‘বুলিং’ করে। অথচ তাকে যদি আপনি একটি সুন্দর কথা বলতেন, উৎসাহমূলক কথা তাকে বলতেন, যদি বাহবা দিতেন, তার কর্মস্পৃহা দ্বিগুণ বেড়ে যেত। বাজে কথা বললে মনটা নষ্ট হয়ে যায়। মানসিক রোগের এগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
দেখা গেছে, শারীরিক রোগের জন্য যতটুকু সময় কাজের সময় নষ্ট না হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি সময় নষ্ট হয় মানসিক রোগের কারণে।
সেলিনা ফাতেমা বিনতে শহিদ : ডাব্লিউ এইচওর একটি গবেষণা ছিল, কর্মক্ষেত্রে শারীরিক কারণে সমস্যা হয়ে সাত ভাগ উৎপাদন ব্যহত হয়। আর মানসিক কারণে হয় ৩৫ ভাগ।
অধ্যাপক মো. আজিজুল ইসলাম : প্রতি বছর ৩৭ দিন বিষণ্ণতায় নষ্ট করে একজন মানুষ।