শিশুর চোখে গ্লুকোমা, কীভাবে বুঝবেন?

কেবল বড়দেরই নয়, শিশুদের চোখেও হতে পারে গ্লুকোমা। সঠিক সময়ে গ্লুকোমার চিকিৎসা না নিলে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
আজ ২৭ জানুয়ারি এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৭৯তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. মো. ফারহাদ হোসেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক অফথালমোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : অনেকেই মনে করেন কেবল চল্লিশের পরেই গ্লুকোমা হয়। তবে শিশুদেরও জন্মগতভাবে গ্লুকোমা হয়। শিশুদের জন্মগত গ্লুকোমার কারণগুলো কী?
উত্তর : আসলে এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের সবাইকে একটু সচেতন হতে হবে। চোখের প্রেসার (চাপ) বৃদ্ধিজনিত কারণকে গ্লুকোমা বলে। শরীরে প্রেসার বৃদ্ধি হলে তাকে যেমন বলি হাইপার টেনশন, তেমনি চোখের প্রেসার বৃদ্ধিকে আমরা বলি গ্লুকোমা। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি হয়। এই বিষয়টি আমাদের সবাইকে জানতে হবে।
একজন বাচ্চা যদি গ্লুকোমার কারণে অন্ধত্ববরণ করে, সে সমাজের বোঝা হয়ে যাবে। তাই গ্লুকোমার কারণ কী? কীভাবে এটাকে চিনব?- এটি বুঝতে হবে।urgentPhoto
যেকোনো কারণেই হোক, মায়ের গর্ভকালীন শিশুর চোখের যে বৃদ্ধি হওয়ার কথা, যদি কোনো কারণে সেই বৃদ্ধি না হয়, কোনো কারণে চোখের পানির যদি পরিবহন না হয়, অর্থাৎ পানি যদি বেরিয়ে না যেতে পারে, সেটি জমা থাকলেই প্রেসার বৃদ্ধি পাবে। আর ছোটবেলায় যেহেতু সবকিছু থাকে নরম, তখন এটি বড় হয়ে যায়। আর বড় হতে থাকলে তার দৃষ্টিতে তো বিষয়টি অবশ্যই প্রভাব ফেলবে।
সাধারণত এঙ্গেল দিয়ে চোখের পানিটি পরিবহন করতে পারে না। এতে গ্লুকোমা হয়।
প্রশ্ন : চোখের জন্মগত ত্রুটি নিয়ে যখন একটি শিশু জন্ম নেয়, তখন বাবা-মা বিষয়টি কীভাবে বুঝবেন?
উত্তর : বাচ্চার চোখ দিয়ে পানি পড়ে, বাচ্চা আলোর দিকে তাকাতে পারে না। চোখের মণি ঘোলা হয়ে যায়। প্রথম দিকে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। এবং তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
এটি বাড়তে থাকলে অনেক সময় দেখা যায় চোখের মণিটা বড় হয়ে গেছে, চোখ অনেক বড় হয়ে গেছে। চোখের যখন প্রেসার বাড়ে, চোখের যে নালিটা মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযুক্ত, সেই নালিতে চাপ পড়ে, সেটিও তখন নষ্ট হয়ে যায়। নষ্ট হলে স্থায়ীভাবে অন্ধত্বের দিকে চলে যায়। যখনই কোনো বাচ্চার চোখ দিয়ে পানি পড়বে, কালো মণি ঘোলা হবে- তখন ধারণা করতে হবে, বাচ্চার চোখের প্রেসার বৃদ্ধি পেতে পারে। তখন দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
প্রশ্ন : যখন এ জাতীয় সমস্যা নিয়ে বাবা-মা চিকিৎসকের কাছে আসে তখন আপনাদের পরামর্শ কী থাকে?
উত্তর : অনেকে মনে করেন, বাচ্চাকে আমরা যদি দেরিতে সার্জারি করি, তাহলে হয়তো সমস্যা হবে না। তবে এর একমাত্র চিকিৎসাই হলো অস্ত্রোপচার করে নেওয়া। যেহেতু রাস্তা তার পুরো বন্ধ, তাই একে অস্ত্রোপচার অবশ্যই করতে হবে। অস্ত্রোপচার করলে ভয়ের কিছু নেই। আমরা যখন অস্ত্রোপচার করি, পানি যখন বের করে দেওয়া হয়, সঙ্গে সঙ্গে মণিটা স্বচ্ছ হয়ে যায়। এরপর আমরা এর জন্য অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করে থাকি। এর ফলোআপও খুব জরুরি।
অস্ত্রোপচার করল, এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ মতে, তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে, চিকিৎসককে দেখাবে। তাহলে দৃষ্টির কোনো সমস্যা হবে না।
অনেকে অস্ত্রোপচারকে ভয় পেয়ে যায়। আমি অনুরোধ করছি, শিশুদের গ্লুকোমা হলে, দেরি না করে ছোটবেলাতেই অস্ত্রোপচার করে নেবেন। দেরি করা মানে স্থায়ীভাবে তার দৃষ্টিহানি হওয়া।
প্রশ্ন : কখন আপনাদের কাছে গেলে আর কিছুই করার থাকবে না, সেটি যদি আমাদের বলতেন?
উত্তর : যেহেতু প্রেসার বেশি থাকার কারণে কালো মণিটা ঘোলা হয়ে যায়, যদি সঠিক সময়ে এই প্রেসারটি নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, অস্ত্রোপচার না করা হয়, মণিতে সমস্যা হবে। এতে আলো ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। চোখ বড় হয়ে গিয়ে তার পাওয়ার মাইনাস হয়ে যাবে; মায়োপিয়া হয়ে যাবে। এরপর তার লেন্সে সমস্যা দেখা দেবে। তার রেটিনাতে সমস্যা দেখা দেবে। যে স্নায়ু দিয়ে পানি যায় সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি করতে হবে।
ঝুঁকির ভেতর এটিই যে, বাচ্চাকে অজ্ঞান করে অস্ত্রোপচার করতে হয়। তবে এখন বাংলাদেশের অনেক জায়গাতেই, শিশু চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞরা শুধুমাত্র শিশুদের এই রোগের জন্যই সার্জারি করে থাকেন। আমরা এখন সফলভাবে অস্ত্রোপচার করছি। এবং যারা অজ্ঞান করছেন তারাও অনেক দক্ষ। তারাও বাইরে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসছেন।
আমাদের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রামের সিআইসিটি, ময়মনসিংহের বিএনএসবি, মৌলভীবাজার বিএনএসবি- বাংলাদেশের এই সমস্ত বিএনএসবি হাসপাতালগুলোতে এই সমস্ত অস্ত্রোপচারগুলো হচ্ছে। এবং সফলভাবে হচ্ছে।
প্রশ্ন : সার্জারির কতদিন পরপর ফলোআপের জন্য আসতে বলেন এবং কী দেখেন আপনারা?
উত্তর : প্রথমে যে কাজটি করি আমরা, অস্ত্রোপচারের আগে আমরা বাচ্চার কর্নিয়ার ডায়েমিটারটা চেক করি। তারপর আবার চোখের প্রেসার মাপি। প্রেসার মেপে আমরা দেখি যে এটি কত রয়েছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করি। অস্ত্রোপচারের এক সপ্তাহ পরে, এক মাস পরে, তিন মাস পরে আমরা ফলোআপের সময় নির্ধারণ করি। প্রতি ফলোআপেই আমরা চোখের প্রেসার মাপি এবং কর্নিয়াল ডায়েমিটারটি চেক করি।