শিশুদের ফাস্টফুড খাওয়ানো কেন ঠিক নয়?

শিশুদের খাবার দাবার নিয়ে বাবা মা বেশ উদ্বিগ্ন থাকে। তবে শিশু বয়স থেকেই খাবারের বিষয়ে খেয়াল না রাখলে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা হয়। আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৩০৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা.সাঈদা আনোয়ার। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : নবজাতকের জন্য আদর্শ খাবার কী?
উত্তর : নবজাতের জন্য আদর্শ খাবার হলো মায়ের দুধ। মায়ের দুধ, মায়ের দুধ এবং মায়ের দুধ। এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এটিই হলো শিশুদের আদর্শ খাবার প্রথম দিন থেকেই। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়ালেই চলবে। এ ছাড়া এক ফোঁটা পানিরও দরকার নেই। অনেক বাবা মা মনে করেন পানির দরকার আছে। আমরা বাচ্চা হয়তো পানির জন্য কাঁদছে। গলা বোধ হয় শুকিয়ে যাচ্ছে। এটির কোনো প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন : শিশু জন্মের পর পর অনেকেরই তার মুখে চিনির পানি, চিনির শরবত বা মধু দেওয়ার প্রবণতা থাকে। এটি আসলে কতখানি যুক্তিসংগত?
উত্তর : এটি আসলে যুক্তি সংগত নয়। বাচ্চা হওয়ার পর পরই মায়ের স্তন থেকে যেটি আসে একে শাল দুধ বলি। সেই শাল দুধই আমরা শিশুকে দিতে বলি। এই শাল দুধ একটু ঘন হয়, হলুদাভ হয়। এটিই প্রথম টিকা হিসেবে কাজ করে বাচ্চার জন্য।
প্রশ্ন : শিশুর যখন ছয় মাস হলো, ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে, ওই সময়ে বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুকে কী খাবার খাওয়ানো উচিত?
উত্তর : আসলে ছয় মাস বয়সের পর থেকে শিশুকে বাড়তি খাবার দিতে হবে এবং দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি খাবার দিতে হবে।urgentPhoto
প্রশ্ন : বাড়তি খাবার বলতে কী কী খাবার হতে পারে?
উত্তর : বাড়তি খাবার হিসেবে ফল দিতে পারে। কলা দিতে পারে, কমলার রস দিতে পারে। ডিম দিতে পারে। আমরা বলি ডিমটা হাফ বয়েল করে প্রথমে হলুদ অংশটা দেবে। এরপর সাদা অংশটা দেবে। আস্তে আস্তে এভাবে বাচ্চাকে খাবারটা দিতে হবে।
প্রশ্ন : আমরা দেখি মায়েরা সবজি, শাক এসব উপাদান মিশিয়ে বাচ্চাকে এক ধরনের খিচুরি খাওয়াচ্ছে। এই খিচুরিটা আসলে কতটুকু উপকারী?
উত্তর : এই খিচুরিটি খুবই উপকারী। এই চাল ডাল তেল নুন, শাক সবজি মিলিয়ে খিচুরি খুব উপকারী।
প্রশ্ন : খিচুরিটি কীভাবে তৈরি করলে বাচ্চা সঠিক পুষ্টি পাবে?
উত্তর : অনেক মা সব সবজি একসাথে দিয়ে দেয়। এটি করলে স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। বরং একেকদিন একেকটি সবজি দিতে হবে এবং সবকিছু আমরা একসথে দিতে মানা করি। কারণ বাচ্চাতো ছোট । সে তো এত দিন মায়ের দুধ খেয়েই অভ্যস্ত ছিল। হঠাৎ করে অনেক কিছু পড়লে বাচ্চার পেট খারাপ হতে পারে। সেটি নিতে পারে না অনেক সময়।
প্রশ্ন : তেল বাচ্চার জন্য কতখানি উপকারী?
উত্তর : সয়াবিন তেল শিশুর জন্য খুবই উপকারী। সয়াবিন সয়া প্রোটিন যেটা সেটা উপকারী।
প্রশ্ন : শিশুকে তেল খাওয়াতে অনেকে ভয় পান। ভাবেন শিশুর পেটে তেল সইবে কি না। এ বিষয়ে আপনার মত কী?
উত্তর : এ বিষয়ে একটি কথা বলি, অনেক সময় মায়েরা চালের গুঁড়ো বা চালের সুজি দিয়ে পানি দিয়ে খাওয়ায়। এটি খুবই একটি খারাপ জিনিস। উপকার তো করেই না অপকার করে। এখানে শুধু কার্বোহাইড্রেট যাচ্ছে এবং প্রোটিন একটুও যাচ্ছে না।
প্রশ্ন : দেড় থেকে দুই বছরের বাচ্চাদের বাবা মায়ের প্রধান অভিযোগ হলো বাচ্চাটি খেতে চায় না। আসলে এটি কতখানি যৌক্তিক?
উত্তর : আসলে আমাদের মা-বাবা বাচ্চাকে নিয়মিত খাওয়ার জন্য তাগাদা দেন। এ রকম করলে বাচ্চারা খাওয়াটাকে ওষুধ মনে করে। তখন বাচ্চাদের মধ্যে খাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে যায়। এতে বাচ্চাদের সময় দিয়ে দিয়ে খাওয়াতে হবে। খাওয়ার সময় শিশুকে শুধু খাওয়াতেই বলি। নিষেধ করি, টিভি দেখে, খেলা দেখে কোনো কিছু যেন না খাওয়ায়। খাওয়ার সময় খাওটাই যেন সে উপভোগ করে। এই বয়সের শিশুদের পাঁচ ছয় ঘণ্টা পর পর খাওয়াবে। একবারে তো আর বেশি খাওয়ানো যায় না। আসলে তিন বেলা খাবার খাওয়ালেই হয়। আর দুই বেলা স্ন্যাকস খাওয়ালেই হয়। শিশুদের মধ্যে ক্ষুধার যেই বিষটি সেটি আগে বুঝতে হবে।
প্রশ্ন : যখন বাচ্চারা বড় হচ্ছে তাদের বৃদ্ধিটা ঠিকমতো হচ্ছে কি না বোঝা যাবে কী করে?
উত্তর : অনেক সময় আমরা মায়েদের ওজনের চার্ট দিয়ে দেই। স্বাভাবিক বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ওজনটা এক সপ্তাহ পরপর মাপতে পারে। ছোট বেলায় প্রতিদিন পয়েন্ট পাঁচ গ্রাম করে হয়তো ওজন বাড়ে। তবে আস্তে আস্তে এটা হয়তো কমে কমে যায়। বাচ্চা যদি খুব উৎফুল্ল থাকে। খেলা ধুলা করে, বাচ্চা যদি অসুস্থ না হয়ে যায় তাহলে আমরা বুঝব বাচ্চা স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।
প্রশ্ন : শিশুদের ওজনাধিক্য কতখানি ক্ষতিকর? সেটি রোধ করার উপায় কী?
উত্তর : একে তো আসলে অতিরিক্ত ক্ষতিকর বলব আমি।বাচ্চারা যখন ঘরের তৈরি খাবার খেতে চায় না, তখন মা-বাবারা বাইরের ফাস্টফুড, জাঙ্ক ফুড ও চিপস খাওয়ান। এগুলো শিশুর শরীরের জন্য অতিরিক্ত ক্ষতিকর। এই ফাস্টফুডের মধ্যে ট্রান্সফ্যাট আছে। এটি খেলে বাচ্চারা মুটিয়ে যায় এবং বাচ্চাদেরকে এগুলোই বেশি খাওয়ানো হয়। আমরা নিষেধ করি, তবে ওরা মনে করে হয়তো খেলে অসুবিধা কোথায়? তবে সেটি একটি সময় ক্ষতির কারণ হয়।
প্রশ্ন : আমরা আসলে বেশি হৃষ্টপুষ্ট বাচ্চা দেখতে চাই। তবে এটি একটি সময় ঝুঁকির কারণ হয়ে যায়। সেটি কখন? কখন বাচ্চাটির বৃদ্ধি দেখে বুঝবো সে ওজনাধিক্য?
উত্তর : বাচ্চার বয়স অনুযায়ী কতগুলো ওজন কিন্তু নির্দিষ্ট করা রয়েছে। যেমন এক বছর বয়সে ১০ কেজি ওজন হলেই যথেষ্ট। দুই বছর বয়সে ১২ থেকে ১৩ কেজি ওজন হলেই চলবে। এই যে দুই দশমিক পাঁচ কিলো করে আমরা বাড়াচ্ছি। এটাই যথেষ্ট। তবে একটি বাচ্চার যদি,তিন বছর বয়সে ৩০ কেজি ওজন হয়, তাহলে এটি তো বেশি ওজন। এই বাড়তি ওজন কিন্তু উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা করে,ডায়াবেটিসের সমস্যা তৈরি করে। অপরিণত বয়সেই সমস্যা করে ফেলে।
প্রশ্ন : বাবা মায়ের উদ্দেশে আপনার কী পরামর্শ থাকবে?
উত্তর : শিশুদের জন্য উপকারী হলো ঘরের তৈরি হাঁড়ির খাবার। মাছ, ডাল, ভাত এগুলোই উপকারী। এগুলোই শিশুর জন্য যথেষ্ট এবং এক সাথে বসে পরিবারের সাথে খেতে হবে।