শিশু অটিজম আক্রান্ত, কীভাবে বুঝবেন?

শিশুদের অটিজম একটি বড় সমস্যা। কোনো শিশুর অটিজম হলে এ নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। শিশুর অটিজম হলে কীভাবে বোঝা যাবে, এ নিয়ে আলোচনা করেছেন অধ্যাপক ডা. মো. মিজানুর রহমান। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৩৪০তম পর্বে এসব বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়।
urgentPhoto
প্রশ্ন : অটিজম কী?
উত্তর : অটিজম মূলত শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশগত সমস্যা। এটি কোনো মানসিক রোগ নয়। মস্তিষ্কের বিকাশ মানে হলো—অন্যের সঙ্গে ভাব প্রকাশ করা, অন্যের ভাব বোঝা, সামাজিকতা বোঝা, সামজিকতা বজায় রাখা।
শিশুদের প্রধান বিষয় হলো খেলা করা। কল্পনাযুক্ত খেলা তারা করতে পারে না। যেমন, গাড়ি দিয়ে খেলা। সাধারণত শিশুরা কল্পনা করে গাড়িটা চালাবে। গাড়িটি হাতে দিলে সে গাড়ি না চালিয়ে চাকা ঘোরাতে থাকে। কল্পনায় তাদের একটি সমস্যা থাকে। স্বাভাবিকতা থাকে না।
মায়েরা যেটা বিশেষ করে খেয়াল করে থাকেন, সেটা হলো, কথা বলতে দেরি হওয়া। অথবা কিছু কথা বলত হয়তো, তবে সেটা আবার ভুলে যাওয়া। এই সমস্যাগুলো সাধারণত দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে প্রকাশ পেয়ে যায় এবং মায়েরা বুঝতে পারেন। তখন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসেন। কখনো কখনো শিশুরা খুব চঞ্চল থাকে।
প্রশ্ন : নির্দিষ্ট করে কোন বিষয়গুলো দেখলে বুঝতে পারব শিশু অটিজমে আক্রান্ত হয়েছে?
উত্তর : সাধারণত তিনটি বিষয় দেখতে হবে। একটি হলো, তাদের যোগাযোগের সমস্যা আছে কি না।
দ্বিতীয় হলো, সামাজিকতায় কোনো সমস্যা আছে কি না। তৃতীয় হলো, কল্পনাযুক্ত খেলায় কোনো সমস্যা আছে কি না। এগুলো প্রধান।
তবে এর সঙ্গে আরো কিছু সমস্যা থাকে। যেমন : এসব শিশু খুব চঞ্চল থাকে। অনেক সময় তাদের ভাঙচুর করার অভ্যাস থাকে। অনেক সময় তারা কিছু বিষয়ে খুব স্পর্শকাতর থাকে। যেমন : স্পর্শ, শব্দ, আলো—এগুলো সহ্য করতে পারে না।
আবার কিছু কিছু বাচ্চাদের বেলায় কোনো একটি বিশেষ ক্ষেত্রে খুব দক্ষতা দেখা যায়। যেমন, কেউ কেউ ভালো ছবি আঁকতে পারে, ভালো গান গাইতে পারে, অথবা মোবাইল বা কম্পিউটার খুব ভালো চালাতে পারে। এ রকম বিশেষ বিশেষ দক্ষতা দেখা যায়। একে আমরা ইতিবাচক দিকে নেব, তবে অন্যান্য বাচ্চাদের এদের পার্থক্য হলো—যাদের এই দক্ষতাগুলো থাকে, তাদের অন্যান্য বিষয়েও দক্ষতা থাকে। তবে অটিস্টিক বাচ্চাদের সমস্যা হলো, ওই একটি বিষয়ই সে খুব ভালো পারে। তবে অন্যগুলো সে ভালো পারে না। খুব ভালো অঙ্ক করতে পারে, কিন্তু ইংরেজি বাংলা বা অন্য কোনো ভাষায়, তাদের দক্ষতা থাকছে না। এটিই সমস্যা হয়ে যায়।
প্রশ্ন : অটিজম কেন হয়?
উত্তর : অটিজমের কারণ নির্দিষ্টভাবে এখনো বলা যাচ্ছে না। কোনো কারণে এটি হচ্ছে, সেটিও বলা যায় না। তবে অনেকগুলো কারণ চিহ্নিত করা গিয়েছে যার জন্য অটিজম হতে পারে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জেনেটিক প্রি-ডিসপোজিশন। এর সঙ্গে পরিবেশগত কিছু সমস্যা চলে আসে।
গর্ভাবস্থায় যদি কোনো সংক্রমণ হয় অথবা প্রসবজনিত সমস্যা, যেমন সময়ের আগে হয়ে গেল, অথবা শিশুর ওজন কম হলো, অথবা তখন কোনো খিঁচুনি হলো—এসব সমস্যা হলে অনেক সময় এগুলো থেকে হয়। পরবর্তীকালে বাচ্চাদের মস্তিষ্কে কোনো সংক্রমণ হলেও এটি হতে পারে। মস্তিষ্ক অনেক সময় আহত হলে সেখান থেকেও অনেক সময় হতে পারে।
ইদানীং আরো দেখা যাচ্ছে, বাবা-মায়ের কারো বয়স যদি বেশি থাকে, ৩৫ বছরের বেশি হলে তখন ঝুঁকিটা বেড়ে যায়।
আবার বুকের দুধ না খেয়ে কৃত্রিম দুধ খেলে অনেক সময় এই সমস্যা হয়। এ রকম অনেক কারণে হতে পারে। তবে কোনোটাই এখনো নির্দিষ্ট করে প্রমাণ করা যায়নি। সবগুলোকেই সন্দেহ করা যাচ্ছে যে এগুলো কারণ হতে পারে। তবে এটা বোঝা যায় যে পরিবেশগত কোনো একটি কারণ রয়েছে, যেটির সঙ্গে জেনেটিক কারণ এক হয়ে সমস্যা হচ্ছে।
প্রশ্ন : বাচ্চা গর্ভাবস্থায় থাকার সময়ই অটিজম চিহ্নিত করার কোনো উপায় আছে কি? বা সেই সময় আমাদের করার কিছু আছে কি?
উত্তর : এটা করা এখনো সম্ভব নয়। তবে, যে জেনেটিক কারণগুলো এখন মনে করা হচ্ছে, যদি ভবিষ্যতে ওই জিনটা একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে নির্ণয় করা যায়, তাহলে হয়তো জিনিসটিকে ঠিক করা যাবে। তবে এখন এটা করা যায় না।
প্রশ্ন : কোনো ভ্যাকসিনেশন দিয়ে কি এটি রোধ করা যায়?
উত্তর : প্রসবকালীন যেসব ঝুঁকিগুলোর কারণে বাচ্চার মস্তিষ্কে সমস্যা হয়, এগুলোকে এড়িয়ে যেতে হবে। বাচ্চাদের ঠিকমতো ভ্যাকসিন দিতে হবে। ভ্যাকসিন দিলে টিটেনাস থেকে বেঁচে গেল, রুবেলা থেকে বেঁচে গেল। এগুলো আমরা দিতে পারি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মায়েদের চেকআপে থাকা। অ্যান্টিনেটাল চেকআপ জরুরি।
আর যে কনজেনিটাল ইনফেকশনগুলো রয়েছে, এর জন্য গর্ভধারণের আগেই পরীক্ষা করা দরকার। পরীক্ষা করে, এগুলো আছে কি না বের করে চিকিৎসা করে গর্ভধারণ করা উচিত।