রক্তরোগ থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ কী

আজকাল অনেকেই থ্যালাসেমিয়া রোগে ভুগে থাকেন। এই রোগের ফলে শরীরের রক্তের কণিকা ভেঙে যায়। যার ফলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। আজ ২০ এপ্রিল এনটিভির ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২০১১ তম পর্বে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ঢাকা সিটি হাসপাতাল লিমিটেডের হেমাটোলোজি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মো. মোস্তফা আবেদীন।
প্রশ্ন : থ্যালাসেমিয়া রোগটা কী এবং এই রোগে কেন আক্রান্ত হয়?
উত্তর : থ্যালাসেমিয়া শব্দটি এসেছে মূলত থ্যালাস থেকে। যার মানে হলো সি বা সমুদ্র। এটা এক সময় বেশি হত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দিকে। কিন্তু আমাদের দেশেও এর প্রাদুর্ভাব আছে। একটা গবেষণা থেকে জানা গেছে, প্রায় ১৮ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। তারা কিন্তু ভালো মানুষ, তারা আপনার পাশেই আছে, রাস্তায় সুস্থ মানুষ হেঁটে যাচ্ছে। দেখলে বোঝার উপায় নেই যে তারা আসলে এই রোগটি বহন করছে। আমরা সাধারণত এটাকে দুই ভাগে ভাগ করি। একটা হলো ট্রেইট আর অন্যটা রোগ। আমি এটাকে রোগই বলব। কারণ এরা রোগে তেমন ভোগে না। কিন্তু এই রোগটা তারা বহন করে এবং তারা অনেক সময় এই রোগে ভুগতেও পারে। যেমন : বিভিন্ন ভাইরাল ইনফেকশন, ইলেকট্রোলাইটিন ব্যালেন্স, তার যদি এসিডিটি বেশি হয় তাহলে সে এই রোগে ভুগতে পারে এবং তাদের রক্তশূন্যতাও দেখা দিতে পারে।
প্রশ্ন : অনেকের থ্যালাসেমিয়া রোগের কোনো লক্ষণ থাকে না, আবার কারো পরবর্তীতে কিছু লক্ষণ দেখা দেয় আবার কারো কারো জন্মের পর পরই এই লক্ষণ দেখা যায় এবং চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হয়। এই বিষয়গুলো কোনটি কখন ঘটে?
উত্তর : থ্যালাসেমিয়া একটি জেনেটিক রোগ। বাবা অথবা মায়ের যদি কোনো একটি জিন অ্যাবনরমাল হয় তাহলে সন্তান ট্রেইট অবস্থায় থাকবে। আর বাবা এবং মায়ের যদি দুটি জিনই অ্যাবনরমাল হয় তাহলে সেই সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হবে। তার শরীরের রক্ত কমে যাবে এবং আস্তে আস্তে যখন সে বড় হবে তখন আরো অবনতি ঘটবে। এ ক্ষেত্রে মুখের আকৃতি বদলে যেতে পারে। কারো কারো মুখের চোয়াল সামনের দিকে বেরিয়ে আসতে পারে। তার বেড়ে ওঠাও বাধাগ্রস্ত হবে। এরা অন্যান্য রোগেও ভোগে বেশি। যেমন : লাঙ ইনফেকশন বেশি হয়, তাদের ইউরিন ইনফেকশন বেশি হয়।urgentPhoto
প্রশ্ন : এই রোগের সমাধান কী?
উত্তর : এই রোগের কারণে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। এ কারণে আমরা এই ধরনের রোগীর শরীরে রক্ত দিয়ে থাকি। সাধারণত একমাস পরপর এই রোগীকে রক্ত দিতে হয়।
প্রশ্ন : ছোট শিশুদের বারবার রক্ত দেওয়ার কোনো ক্ষতিকর দিক আছে কি?
উত্তর : যাদের এই রোগ আছে তাদের শরীরের রক্ত তো এমনিতেই ভেঙে যাচ্ছে। আবার আমরা বাইরে থেকেও তার শরীরে রক্ত দিচ্ছি। এর ফলে তার শরীরে আয়রন বেড়ে যায়। শরীরে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে গেলে তার ডায়াবেটিস হতে পারে, হাইপোথাইরোডিজম হতে পারে, হাইপোগোনাডিজম হতে পারে এবং ইনদোক্রাইন রোগ বেশি হতে পারে।
প্রশ্ন : শরীরে রক্ত দেওয়ার পর যেন এ ধরনের সমস্যা না হয় সে ক্ষেত্রে কী করা প্রয়োজন?
উত্তর : আমরা এ ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের চিকিৎসা দেই। কিছু ওষুধও আছে, সেগুলোও খেতে দেই। তবে কিছু চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। কিন্তু এ ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হলে কিছুটা হলেও তাদের অন্য সমস্যা কম হবে।
প্রশ্ন : এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা যেন না বাড়ে এ ক্ষেত্রে বৈবাহিক ব্যবস্থার কি কোনো ভূমিকা আছে?
উত্তর : এই রোগ যেহেতু মা-বাবার কারণেই হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে সন্তান গর্ভে আসার পরই আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে সন্তানের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ হয়েছে কি না। যদি দেখি সন্তানের মধ্যেও এই রোগের আশঙ্কা রয়েছে সে ক্ষেত্রে সেই সন্তান পৃথিবীতে না আনারই পরামর্শ দিয়ে থাকি। সম্ভব হলে বিয়ের আগেই পরীক্ষা করে নিন যে, ছেলে বা মেয়ে কারো শরীরে এই রোগের জিন আছে কি না। যদিও আমাদের সমাজব্যবস্থায় বিষয়টি যায় না। তবুও আমি বলব, যদি সুযোগ থাকে তাহলে বিয়ের আগেই পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো। তাহলে হয়তো এই রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।