গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার লক্ষণ কী?

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস অনেক নারীর ক্ষেত্রেই দেখা যায়। তবে সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪৬৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. শামিমা নার্গিস নীলা। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের গাইনি অবস বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে কোন কোন সমস্যা দেখে তিনি বুঝবেন?
উত্তর : যেহেতু সে গর্ভবতী, সেই লক্ষণগুলো তো তার থাকবেই। সে সঙ্গে যদি তার ডায়াবেটিস হয়ে গিয়ে থাকে, দেখা যাবে বারবার সংক্রমণ হচ্ছে, যে কোনো সাইটে। হয়তো দেখা যায়, তার বারবার প্রস্রাবে সংক্রমণ হচ্ছে। আমরা তখন একটি ধারণা করতে পারি যে হয়ত তার রক্তের সুগারের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে গেছে। অনেক সময় দেখা যায়, ভ্যাজাইনায় অনেক বেশি সাদাস্রাব বের হচ্ছে। সে জানে না, তার ডায়াবেটিস। এই লক্ষণগুলো নিয়ে সে আমাদের কাছে আসে। আবার অনেক সময় গর্ভাবস্থার সময় যখন বেড়ে যায়—তখন দেখা যায়, তার ওজন অনেক বেড়ে যাচ্ছে। সাধারণত আমরা জানি যে প্রতি মাসে একজন গর্ভবতী নারীর ওজন বাড়বে। দেখা যায়, এর থেকে বেশি তার ওজন বেড়ে যাচ্ছে। দেখা যায়, তার খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। যেহেতু বাচ্চাটা বড় থাকে এদের, তাই এমন হয়। এ ধরনের সমস্যা নিয়ে রোগী আমাদের কাছে আসে। তখন বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে সে ডায়াবেটিসে আছে।
প্রশ্ন : স্ক্রিনিংয়ের কি কোনো বিষয় রয়েছে, যাতে করে আগেভাগে বোঝা যায় যে এই সমস্যা তার হতে পারে?
উত্তর : আমরা প্রত্যেক গর্ভবতী নারীর একটি পরীক্ষা করি, ওজিটিটি—ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট। তাকে আমরা গ্লুকোজ খাইয়ে দেখি যে তার শরীর এটা কতটুকু বিপাক করে মাত্রাটা কতটুকু হয়। ফাস্টিং একটি করে নেয়। এর পর ১০০ গ্রাম খাওয়ার এক ঘণ্টা বা দুই ঘণ্টা পরে রক্তের সুগার আমরা দেখি। কোথায় কোথাও ৭৫ গ্রাম খাওয়ানোর দুই ঘণ্টা পর আমরা রক্তের সুগারটা দেখি। ফাস্টিং যদি পাঁচের নিচে থাকে, আর সুগার খাওয়ার পর যদি সাতের নিচে থাকে, তখন আমরা বলি যে স্বাভাবিক। ফাস্টিং যদি দেখা যায় পাঁচ থেকে সাত, তাহলে এদের বলি যে বর্ডার লাইন। আবার সাতের বেশি হলে, তাহলে তাদের বলব হয়ে গেছে।
৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরে দেখি যে সাত আছে, তাদের ঝুঁকি নেই। ৭ থেকে ১১ মধ্যে যারা রয়ে গেল, তারা আসল বর্ডার লাইনে। তাদের আমরা বারবার ফলোআপ করব। আর ১১-এর বেশি যারা, তাদের বলব তোমাদের ডায়াবেটিস হয়ে গেছে। চিকিৎসা প্রয়োজন।
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দলকে আমরা ফলোআপে রাখি। কারণ, গর্ভাবস্থার সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুগার বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এদের ক্ষেত্রে ২৪ সপ্তাহে আবার একটি স্ক্রিনিং করি। যদি স্বাভাবিক থাকে, এদের আমরা ফলোআপে রাখি। যারা স্বাভাবিক থাকে, তাদের ৩২ সপ্তাহে আবার একটি স্ক্রিনিং করি। তাতে আমাদের রোগীগুলোর জটিলতা তৈরি হয় না। এতে আমরা আগে আগে রোগ ধরে চিকিৎসা করতে পারি এবং একটি স্বাস্থ্যবান শিশু সমাজকে দিতে পারি।
প্রশ্ন : ঝুঁকিপূর্ণ যাঁরা আছেন,তাঁদের ফলোআপে আপনারা কী দেখেন?
উত্তর : যেসব রোগীর ডায়াবেটিস হয়ে যায়, তাদের আমরা বারবার ফলোআপ করি। স্বাভাবিক রোগীদের যেন বিরতি দিয়ে দিই, তাদের থেকে একটু বিরতি দিয়ে দিই। তাদের আমরা আসতে বলি—তখন কেবল স্ক্রিনিং নয়, নিয়মিত আমরা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা দেখি।
প্রশ্ন : কতদিন পরপর হয় এই ফলোআপ?
উত্তর : প্রথম দিকে আমরা প্রতি মাসে করি। ২৮ সপ্তাহের পরে দুই সপ্তাহ পরপর দেখতে থাকি। শেষের দিকে আমরা প্রতি সপ্তাহে রোগীদের ফলোআপে আসতে বলি। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আমরা রোগীদের প্রাথমিকভাবে ডায়েট কন্ট্রোল করতে বলি। সাধারণত তিনটি বিষয় মনে রেখে ব্যবস্থাপনা করি—ডায়েটিং (খাদ্যাভ্যাস), ডিসিপ্লিন (নিয়মানুবর্তিতা), ড্রাগ (ওষুধ)। সে যদি ডায়েটিং করে মোটামুটি সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাহলে ভালো। মাঝেমধ্যে রোগীদের আমরা ডায়েটেশিয়ানদের কাছেও পাঠাই। এটি একটি দলগত কাজ।
ডায়েটেশিয়ান আগে ডায়েট চার্ট দেবে। সে অনুযায়ী ডায়েট করে সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
আর নিয়মানুবর্তিতার ক্ষেত্রে ব্যায়াম তো আমরা গর্ভাবস্থায় করতে বলি না। তবে সে হাঁটবে। কিছু ঘরের কাজ করবে, যাতে তার ক্যালরি পোড়ে। এই উপদেশগুলো তাকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে।