বিষণ্ণতা বাড়ছে কেন?

বর্তমানে আমাদের দেশে বিষণ্ণতার সমস্যা বাড়ছে। এর কারণ নিয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪৮০তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. ফারজানা রহমান। বর্তমানে তিনি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকিয়াট্রি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : একসময় তো আমরা এত বিষণ্ণতার কথা শুনতাম না, এখন অনেককেই আমরা দেখছি চিকিৎসা নিচ্ছেন বা কাউন্সিলরের কাছে যাচ্ছেন বা তিনি অনুভব করছেন যে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত। আগে এত শোনা যেত না। এটি কি আগে এত প্রচার ছিল না বা জানা ছিল না বিষয়টি ওই রকম, না কি বিষণ্ণতায় আক্রান্তের হার বেড়েছে?
উত্তর : আমার যেটা মনে হচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরনের গবেষণায় যেটা দেখা গেছে, ডব্লিউএইচও এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালিত যে গবেষণা—সেগুলো অনুযায়ী বিষণ্ণতার হার বাড়ছে।
প্রশ্ন : কেন?
উত্তর : বাংলাদেশ কিন্তু ক্রমাগত বিশ্বায়নের পথে যাচ্ছে, দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে, আর আমাদের জীবনে কিন্তু আকাশ-সংস্কৃতি একটি অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। এর পাশাপাশি যৌথ পরিবার ভেঙে অণু পরিবার হচ্ছে, বাবা-মায়ের মধ্যেও সন্তানদের নিয়ে প্রতিযোগিতা, ভালো ফলাফল করতে হবে, অথবা খুব ভালো চাকরি করতে হবে। তাদের অপূর্ণ ইচ্ছাগুলো আমরা সন্তানদের ওপর চাপিয়ে দিই। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে জটিলতা, দাম্পত্য জীবনে জটিলতা, সম্পর্ক স্থাপনে জটিলতা, সামাজিক অস্থিরতা। আবার কখনো কখনো মাদকাসক্তিও কিন্তু ক্রমাগতভাবে এই মিথস্ক্রিয়ার উর্বর জায়গা হিসেবে কাজ করছে। এই জন্য বিষণ্ণতার হারটা বাড়ছে বলে সমাজবিজ্ঞানী বা মনোরোগ চিকিৎসকরা মনে করছেন।
প্রশ্ন : বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হলে ক্ষতিটা কী? এই বিষয়টিকে আমরা এত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি কেন?
উত্তর : আপনি যদি পুরো বিশ্বে বিষয়টি পর্যালোচনা করেন, তাহলে দেখবেন বিষণ্ণতা পরোক্ষ মৃত্যুর কারণ হিসেবে তৃতীয় বৃহত্তম। মানুষের যে কার্যক্রম, মানুষের যে গুণগত মান, কাজের যে উৎপাদন শক্তি সব মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আর শুধু তাই নয়, বিষণ্ণতার সর্বশেষ যে লক্ষণ থাকে, সেটা কিন্তু আত্মহত্যা। শুধু আত্মহত্যাও নয় অন্যকে হত্যা করে আত্মহত্যা করা বিষণ্ণতার একটি সর্বশেষ লক্ষণ। এ জন্য বিষণ্ণতা প্রতিরোধে বা বিষণ্ণতার চিকিৎসায় খুব গুরুত্ব দিতে হবে।