মাদকাসক্ত মানুষের বৈশিষ্ট কী?

পরিবারের কেউ যদি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে তাহলে তার আচরণে কিছু পরিবর্তন আসে। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫১৩তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. ফারজানা রহমান। বর্তমানে তিনি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : পরিবারের একজন কেউ যদি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, তবে কী কী বিষয় দেখলে পরিবারের সদস্যরা তা বুঝতে পারবে?
উত্তর : কোনো একটি সন্তান ক্রমাগতভাবে তার পরীক্ষার ফলাফল খারাপ করছে, তারপরে তার নতুন বন্ধুর একটি চক্র গড়ে উঠছে। আগের বন্ধুদের সাথে সে এখন মিশছে না এবং তার ঘুমের চক্রটা পরিবর্তন হয়েছে। সে অনেক বেলা করে ওঠে বা অনেক রাতে ঘুমায় এবং দরজা বন্ধ করে থাকে, আরেকটি বিষয় হলো সে ক্রমাগত মিথ্যা কথা বলে। হয়তো প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে অনেক বেশি সে হাত খরচ দাবি করে। আরেকটি বিষয় যে তার মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেছে, তার চোখটা বিশেষ করে লালচে থাকে, এই বিষয়গুলো সতর্ক সংকেত।
যদি কোনো মা বা বাবা ছেলের বা মেয়ের ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে সরাসরি কাগজের আংটা বা কোনো চকচকে রূপালি কাগজ অথবা কোনো ছাই, বা কোনো তারের টুকরো পেয়ে থাকেন, সরাসরি কোনো টেবলেট পেয়ে থাকেন, বিশেষ করে লাল বা নীল অনেক রকমের হয়, এটি কিন্তু সরাসরি সতর্ক সংকেত সেই ছেলেটি কিন্তু অস্বীকার করবে বারবার। এগুলো তো মোটামুটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। দেখা যায় প্রায়ই ছেলেটা হয়তো ছোটখাটো দুর্ঘটনা করে থাকে। প্রায় মাথায় ব্যথা পাচ্ছে। কারণ, সে তো খুব নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে, ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, মাথায় আঘাত থাকতে পারে। মা-বাবাকে সবসময় খেয়াল রাখতে বলি যে চোখটা খুব লালচে থাকে, বিশেষ করে ইয়াবা খেলে যেটা হয়, হঠাৎ করে স্ট্রাকচারটা শুকিয়ে আসে। বিশেষ করে পিছনের দিকে দেখা যায় যে তার প্যান্টটা খুব ঢিলা হয়ে যাচ্ছে। ত্বক ঝুলে যাচ্ছে। ত্বক হয়তো ঢেকে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সূচের চিহ্ন বা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ এগুলো কিন্তু থাকে।
প্রশ্ন : সন্দেহ হলে যখন সন্তানটি অস্বীকার করে, ওই অভিভাবকের করণীয় কী?
উত্তর : প্রথমে বলি, যখন কোনো মা-বাবা বুঝতে পারেন বা সন্দেহ করেন তার সন্তান মাদকাসক্ত তারা কিন্তু পরস্পরকে দোষারোপ করেন। অথবা বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন রাখেন, অথবা বিষয়টি নিয়ে নিজেরাই খুব মন খারাপ করেন, বিষণ্ণতায় ভোগেন। এ ক্ষেত্রে যেটি পরামর্শ, সেই ছেলেটির প্রিয়জন কাউকে দিয়ে বা ছেলেটিকে সরাসরি বলা যে তোমার শরীরের মধ্যে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে আমরা মনে করি। এজন্য একটু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তখন যদি কিছু পরীক্ষা করা যায়, তাহলে শুধু সে কোন মাদকে আক্রান্ত তা নয়, সেই মাদকটা তার কতটুকু জটিলতা তৈরি করবে, শরীরে কতটুকু জটিলতা তৈরি করেছে, সেটাও বেরিয়ে আসবে।
আর অনেক সময় ছেলেরা অস্বীকার করে, মাদকগ্রহণ করে তারা অস্বীকার করে, আসতে চায় না, এ ক্ষেত্রে কিন্তু মা-বাবার ওই ছেলেটির খুব কাছের একজন হয়তো তার বড় বোন, বড় ভাই, পাড়ার কেউ একজন যার সাথে তার খুব সুন্দর সম্পর্ক তার সাথে কথা বলে অবশ্যই মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসবে। এ ক্ষেত্রে আরেকটি কাজ আমরা অনেক সময় করে ফেলি অনেক মা-বাবা মাদকাসক্ত সন্তানকে বিয়ে দিয়ে দেন। আমি এ বিষয়ে বিনীতভাবে না করব। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি মানসিক রোগ, আমরা ডায়াবেটিস হলে যেমন তার চিকিৎসা করি, ঠিক তেমনি মাদকাশক্তি এক ধরনের মানসিক রোগ, যেই রোগটির চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসায় মাদকাশক্তি সম্পূর্ণ ভালো হয়।
প্রশ্ন : এ ক্ষেত্রে মা-বাবা বা পরিবারের লোকজনের তার সাথে আরেকটু স্বাভাবিকভাবে মিশে যাওয়ার বিষয়টি কাজে দিতে পারে?
উত্তর : মা-বাবা কিন্তু একটি পর্যায়ে খুব দোষারোপ করেন। যারা মাদকাসক্ত হয়, তারা ভাঙচুর করে, সহিংসতা করে, আইনি জটিলতা হয়। সে পরিবারে অর্থনৈতিক যে বিষয়টি ছিল অনেক নাজুক হয়ে পড়ে। মানসম্মানও অনেক বাধাগ্রস্ত হয়। এই জন্য অনেক মা-বাবা কিন্তু সেই ছেলেটিকে ভীষণ দোষারোপ করে। মা-বাবা গালমন্দ করে, বাড়ি থেকে বের করে দেয়, পাশের বাসায় সবার সঙ্গে তুলনা করে, অপমান করে। তো এই বিষয়টি না করে মা-বাবারও একটু সময় দিয়ে কোথায় ফাঁকটা ছিল, কখন শূন্যতাটা তৈরি হলো, এটা দেখা দরকার। এই যে তার পড়াশোনা খারাপ হচ্ছে, তার বন্ধুরা বদলে গেছে, এই বিষয়ে সতর্ক হলে হয়তো এত দূর যেত না।