বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার চালু হলে রক্ত-রোগীদের বিদেশে যেতে হবে না

দেশে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট (বিএমটি) সেন্টার চালুর কার্যক্রম অনেকদূর এগিয়েছে। এটি চালু করার জন্য একনেকে পাস হয়েছে। এটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে রক্তরোগ সংক্রান্ত অনেক রোগীর চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।
আজ বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শেষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান এসব কথা বলেন।
এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘সকলের সম্মলিত প্রচেষ্টা, থ্যালাসেমিয়া রোগীর সু-চিকিৎসা’।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) বলেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে গণমানুষকে সচেতন করাসহ প্রতিরোধের পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এই রোগ প্রতিরোধে স্কুল পর্যায়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তরোগ সংক্রান্ত গবেষণাকে তরান্বিত করা হয়েছে। বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট (বিএমটি) সেন্টার চালুর কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে। ইতোমধ্যে এই বিষয়টি একনেকে পাস হয়েছে। পূর্ণাঙ্গভাবে বিএমটি চালু হলে রক্তরোগ সংক্রান্ত অনেক রোগীর চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি জেনেটিক ডিজিজ। এই রোগ প্রতিরোধে থ্যালাসেমিয়ার দুই বাহকের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করা প্রয়োজন। স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক চিহ্নিত করা সম্ভব। আবার গর্ভাবস্থায়ও অনাগত শিশুটি থ্যালাসেমিয়ার রোগী কিনা তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সর্বোপরি যে সকল থ্যালাসেমিয়া রোগী রয়েছে তাদের সঠিক, উন্নত ও সহজ চিকিৎসাসেবাকে নিশ্চিত করতে হবে।
শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল করিম বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসার নতুন আশার আলো হলো রক্তের পাশাপাশি ওষুধ দিয়েও রোগীদের চিকিৎসাসেবা শুরু হয়েছে। ওষুধ দিয়েও এই রোগীদের চিকিৎসা করা সম্ভব এবং প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাচ্ছে। থ্যালাসেমিয়া একটি জন্মগত রোগ। রোগীরা রক্তশূন্যতায় ভোগে। অনেক সময় রক্তের অভাবে মারা যায়। এই ধরনের রোগীদেরকে সুস্থ করার জন্য বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন করা প্রয়োজন। যা বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে সঠিক দাতার অভাব, চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতা ও চিকিৎসাসেবা ব্যয়বহুল হওয়ায় (বিএমটি) করা সম্ভব হয় না। তাই রোগীদেরকে সমগ্রজীবন রক্তের ওপর নির্ভর করেই বেঁচে থাকতে হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন। কিন্তু নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন জটিলতায় রোগী পুরোপুরি সুস্থ জীবন পায় না।
বাংলাদেশে ৬০ থেকে ৮০ হাজার থ্যালাসেমিয়ার রোগী আছে। ৬ থেকে ৮ হাজার শিশু প্রতিবছর জন্ম নিচ্ছে। দেশে থ্যালাসেমিয়া বাহকের সংখ্যা দেড় থেকে দুই কোটি। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে দুই বাহকের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করতে প্রয়োজনে সরকারকে আইন করতে হবে। তাহলে থ্যালাসেমিয়ার অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব। একজন থ্যালসেমিয়ার রোগী পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ঝঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যায়ের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের বহির্বিভাগে প্রতি মাসে প্রায় ৫ শত শিশু রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। আজকের দিবসের বিশেষত্ব হলো বিএমইউতে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ ঐক্যবদ্ধভাবে চিকিৎসাসেবা দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল করিম। র্যালিতে শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্ট ও নার্সরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও র্যালিতে হেমাটোলজি সোসাইটি অফ বাংলাদেশের নেতারা অংশ নেন।