জলাতঙ্ক টিকার সংকট, দ্রুত সমাধানের কথা বলছে মন্ত্রণালয়

সারা দেশেই জলাতঙ্ক প্রতিরোধী সরকারি টিকা (র্যাবিস ভ্যাকসিন) ‘র্যাবিক্স-ভিসি’–এর সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে, রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, যেটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে, সেখানেও ৭ এপ্রিলের পর থেকে আর ‘র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (আরআইজি)’ পাওয়া যাচ্ছে না।
টিকার সংকটের সত্যতা স্বীকার করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারা জানিয়েছে, এ সংকট দ্রুত কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জলাতঙ্ক টিকার এই সংকটের প্রধান কারণ ‘স্বাস্থ্যখাতের কৌশলগত পরিকল্পনা বা অপারেশনাল প্ল্যান (ওপি)’ না থাকা। সূত্রগুলো জানায়, স্বাস্থ্যখাতের অবকাঠামো, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, হাসপাতালের সেবা ব্যবস্থাপনা, সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ, টিকা ও পুষ্টি কার্যক্রমসহ ৩০টিরও বেশি কর্মসূচি পরিচালিত হয় পাঁচ বছর মেয়াদি ওপির মাধ্যমে।
আরও পড়ুন : কুকুর-বিড়াল নিধন নয়, সাময়িক বন্ধ্যত্ব চান স্বেচ্ছাসেবীরা
সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুনে শেষ হয়েছে ‘চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (এইচপিএনএসপি)’। এরপর ১ লাখ ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকার পঞ্চম এইচপিএনএসপি শুরুর কথা থাকলেও, তা অনুমোদন দেয়নি তৎকালীন সরকার। বরং তখন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ওপি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. হালিমুর রশিদ বলেন, “টিকার কিছুটা ঘাটতি আছে, এটা ঠিক। তবে একেবারে নেই তা বলা যাবে না। আমরা হিসেব করে টিকা দিচ্ছি, তাই কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। টিকার চাহিদাও বেড়েছে। গত ৮ মে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছি। আশা করছি, সেটি অনুমোদন হবে।”
ডা. হালিমুর রশিদ বলেন, “কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালকের পদটি খালি আছে, সেটি পূরণ না হলে টেন্ডার আহ্বান করা সম্ভব হবে না। তাই আমরা অপেক্ষা করছি। প্রক্রিয়াটি শেষ হলেই টেন্ডার আবেদন করা হবে।”
প্রাণির আক্রমণে রক্তাক্ত আহতদের শুধুমাত্র টিকা নয়, অতিরিক্ত ‘র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (আরআইজি)’ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তবে বর্তমানে দেশের কোনো হাসপাতালেই এটি নেই। এ বিষয়ে ডা. হালিমুর রশিদ বলেন, “আমরা জানি এই সংকটের বিষয়টি। এটিও দ্রুত ক্রয় করা হবে।”
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আরিফুল বাসার বলেন, “আমাদের হাসপাতালে আরআইজি নেই কয়েক সপ্তাহ ধরে। যাদের প্রয়োজন, তারা নিজেরা সংগ্রহ করছেন। টিকা আমরা পাচ্ছি, তবে অন্যান্য হাসপাতালে না থাকায় অনেক রোগী এখানে পাঠানো হচ্ছে। রাজধানী ছাড়াও সারা দেশ থেকে রোগী আসছেন।”
র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (আরআইজি) টিকার বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা রোগিদের নিজের টাকায় এনে দিতে হয়, তখন আমরা পুশ করি।”
আরও পড়ুন : কুকুর-বিড়ালের আক্রমণের শিকার দিনে ৩৭২ জন
২০১১ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ‘জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচি’ চালু করে। এটি পরিচালনা করছে সিডিসি শাখা। সেই বছর থেকে বিনামূল্যে সারা দেশে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হচ্ছে। আগে সিডিসি নিজেই টিকা কিনত। বর্তমানে ওপি না থাকায় বিশেষ বরাদ্দে টিকা কিনছে সিএমএসডি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এশিয়া ও আফ্রিকায় জলাতঙ্কের প্রাদুর্ভাব বেশি এবং এতে মৃতদের ৪০ শতাংশই ১৫ বছরের কম বয়সী।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেট-এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জলাতঙ্কে মৃত্যুর হারে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে তৃতীয়। রোগটির ৯৬ শতাংশ কুকুরের কামড় থেকে ছড়ায়।