এক যুগ পর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ভারতের

মঞ্চ প্রস্তুত ছিল। প্রস্তুত ছিলেন ক্রিকেটাররা। দুবাইয়ের আলো ঝলমলে সন্ধ্যা রাঙাতে চেষ্টা ও আগ্রহ, কোনোটারই কমতি ছিল না ভারতের। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররাও উজাড় করে দিয়েছেন নিজেদের। তবে, পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে শেষ পর্যন্ত তাদের হার মানতে হয়েছে। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা তাই জিতে নিয়েছে ভারত।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার (৯ মার্চ) নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শ্রেষ্ঠত্ব এখন ভারতের। অবসান ঘটেছে এক যুগের অপেক্ষার।
আগে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৫১ রানে থামে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ৪৯ ওভারে ৬ উইকেটে ২৫৪ রান করে ভারত।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল খেলেছে ভারত। ২০১৩ সালে শিরোপা জেতার পর ২০১৭ সালে পাকিস্তানের কাছে শ্রেষ্ঠত্ব হারায় তারা। ৮ বছর পর আবারও নতুন আসরে সেরাদের সেরার তকমা নিজেদের করে নিয়েছে ভারত। এবার অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দলটি।
দুবাইয়ের পিচে আড়াইশ রানকে চ্যালেঞ্জিং বলা চলে। কিন্তু রান তাড়ায় যখন ভারত, সেটি অনেকটাই কম হয়ে যায়। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ২৫২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বরাবরের মতোই অধিনায়ক রোহিত শর্মা শুরুটা করেন দ্রুতগতিতে। শুভমান গিলকে সঙ্গে নিয়ে ওপেনিংয়ে ভারতকে এনে দেন দুর্দান্ত শুরু।
উদ্বোধনী জুটিতে শুভমান গিলের সঙ্গে মিলে রোহিত তোলেন ১০৫ রান। এরপর খানিকটা ব্যাকফুটে চলে যায় ভারত। হারায় দ্রুত উইকেট। মিচেল স্যান্টনারের বলে গ্লেন ফিলিপসের আরেকটি দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন গিল। ৫০ বলে ৩১ করেন তিনি। ওয়ানডাউনে নেমে টিকতে পারেননি কোহলি।মাইকেল ব্রেসওয়েলের বলে লেগবিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। ইনিংসে মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলে আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নেন কোহলি। তবে, সেটি আউটই হওয়ায় তাকে ফিরতে হয় সাজঘরে। করেন ২ বলে ১ রান।
একপ্রান্তে ব্যক্তিগত শতকের দিকে ছুটছিলেন রোহিত। তবে, থামতে হয় ভারতীয় অধিনায়ককেও। ৮৩ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৬ রান করে রাচিন রবীন্দ্রের বলে টম লাথামের স্ট্যাম্পিং হয়ে বিদায় নেন রোহিত। বিনা উইকেটে ১০৫ রানে থেকে ১২২ রানে ৩ উইকেট হারায় ভারত। একপেশে হয়ে যাওয়া ম্যাচ জমিয়ে তোলেন কিউই বোলাররা। যদিও, হাতে উইকেট থাকায় ভারত খেলেছে নির্ভারভাবে। সাবধানের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে কিউই বোলারদের।
১২২ রানে ৩ উইকেট হারানো ভারত ফের দিশা খুঁজে পায় মিডল অর্ডারের ব্যাটে। চতুর্থ উইকেটে শ্রেয়াস আইয়ার ও অক্ষর প্যাটেলের করা ৬১ রানের জুটি ম্যাচে ফেরায় ব্লু আর্মিদের। শ্রেয়াস ৬২ বলে ৪৮ ও অক্ষর ৪০ বলে ২৯ করে ফিরলে ফের জমে ওঠে ম্যাচ। তবে, শেষটায় অঘটন ঘটতে দেননি লোকেশ রাহুল। ৩৩ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। হার্দিক পান্ডিয়ার ১৮ বলে ১৮ রান ভারতের পথ আরও সহজ করে দেয়। যে পথে হেঁটে ৪৯তম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করেন রবীন্দ্র জাদেজা।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে মিচেল স্যান্টনার ও মাইকেল ব্রেসওয়েল নেন ২টি করে উইকেট। ১টি করে উইকেট পান রাচিন রবীন্দ্র ও কাইল জেমিসন।
এদিন টস জিতে আগে ব্যাটিং করে নিউজিল্যান্ড। ব্যাটিংয়ের শুরুটা অবশ্য ঠিকঠাকই করেছিল কিউইরা। প্রথম জুটিতে নির্বিঘ্নে দলীয় ফিফটি ছাড়িয়ে যান দুই ওপেনার উইল ইয়ং ও রাচিন রবীন্দ্র। এরপরই বিপদ নামে নিউজিল্যান্ড শিবিরে। ইনিংসের অষ্টম ওভারে উইলকে এলবির ফাঁদে ফেলে ওপেনিং জুটি ভাঙেন বারুন চক্রবর্তী। উইলের বিদায়ে ভাঙে ৫৭ রানের জুটি। ইয়াং ২৩ বলে দুই চারে করেন ১৫ রান।
উইলের পর ফিরে যান রাচিনও। কুলদীপ যাদবের দুর্দান্ত গুগলিতে পরাস্থ হয়ে বিদায় নেন রাচিন। সরাসরি বোল্ড হওয়া রাচিন বুঝতেই পারেননি। কুলদীপের গুগলি তার ব্যাটের ফাঁক দিয়ে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। ১ ছক্কা ও ৪ চারে ২৯ বলে ৩৭ রানে ফিরলেন রবীন্দ্র।
ওয়ানডাউনে নেমে টিকতে পারেননি নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং বিভাগের ভরসার নাম কেইন উইলিয়ামসন। ১৩তম ওভারের তৃতীয় বলে কুলদীপের শিকার হয়ে তিনিও বিদায় নেন। ১৪ বলে ১১ রানে ফিরলেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক এ অধিনায়ক।
দলীয় ৭৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর বিপদে পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড। সেই বিপদ কাটাতে লড়াইয়ের আভাস দেন ডেরিল মিচেল ও টম লাথাম। ৩৩ রানে এই জুটি ভেঙে নিউজিল্যান্ডের সেই আশা ভেস্তে দেন রবীন্দ্র জাদেজা। ভারতীয় অলরাউন্ডের এলবির ফাঁদে পড়ে ১৪ রানে বিদায় নেন লাথাম।
লাথামের বিদায়ের পর গ্লেন ফিলিপসের সঙ্গে জুটি বাধেন ডেরিল মিচেল। ৫৭ রানে এই জুটি ভাঙেন বরুন। বোল্ড হওয়ার আগে ৫২ বলে ৩৪ রান করে ফিরে যান গ্লেন ফিলিপস। একের পর এক উইকেট হারানোর ভীড়ে বেশিদূর যেতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। মিচেলের ব্যাট ও শেষে দিকে মিচেলে ব্রেসওয়েলের ব্যাটে চড়ে কোনো মতে ভারতকে ২৫২ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছে নিউজিল্যান্ড। শেষ দিকে নিউজিল্যান্ডকে লড়াইয়ের স্কোর এনে দিতে ৪০ বলে ৫৩ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেন ব্রেসওয়েল। অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার ৯ বলে করেন ৭ রান।
ভারতের হয়ে বল হাতে ৪৫ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন বরুন চক্রবর্তী। ৪০ রানের বিনিময়ে কুলদীপ যাদবের শিকারও দুটি। একটি করে উইকেট নেন রবীন্দ্র জাদেজা ও মোহাম্মদ শামি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড : ৫০ ওভারে ২৫১/৭ (ইয়ং ১৫, রাচিন ৩৭, উইলিয়ামসন ১১, মিচেল ৬৩, লাথাম ১৪, ফিলিপস ৩৪, ব্রেসওয়েল ৫৩*, স্যান্টনার ৮, স্মিথ ০*; শামি ৯-০-৭৪-১, পান্ডিয়া ৩-০-৩০-০, বরুণ ১০-০-৪৫-২, কুলদীপ ১০-০-৪০-২, অক্ষর ৮-০-২৯-০, জাদেজা ১০-০-৩০-১)
ভারত : ৪৯ ওভারে ২৫৪/৬ (রোহিত ৭৬, গিল ৩১, কোহলি ১, শ্রেয়াস ৪৮, অক্ষর ২৯, রাহুল ৩৪*, পান্ডিয়া ১৮, জাদেজা ৯*; জেমিসন ৫-০-২৪-১, ও’রোর্ক ৭-০-৫৬-০, স্মিথ ২-০-২২-০, স্যান্টনার ১০-০-৪৬-২, রাচিন ১০-১-৪৭-১, ব্রেসওয়েল ১০-১-২৮-২, ফিলিপস ৫-০-৩১-০)
ফলাফল : ভারত ৪ উইকেটে জয়ী।