উৎক্ষেপণের ৩০ মিনিট পর ইলন মাস্কের রকেটের বিস্ফোরণ

মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের নবম স্টারশিপ টেস্ট ফ্লাইট উৎক্ষেপণের ৩০ মিনিট পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে রকেটটি মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। খবর আল জাজিরার।
রয়টার্স জানিয়েছে, মহাকাশে জ্বালানি লিকের কারণে রকেটটি ঘূর্ণায়মান অবস্থায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে। এরপর এটি “র্যাপিড আনসিডিউলড ডিসেম্বলি”-র শিকার হয়, যার অর্থ হলো — রকেটটি আকাশেই ভেঙে পড়ে বা বিস্ফোরিত হয়।
স্পেসএক্স সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে জানিয়েছে, “এ ধরনের পরীক্ষায় সফলতা মানে আমরা কী শিখলাম, আর আজকের এই পরীক্ষা স্টারশিপের নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করবে, যেহেতু স্পেসএক্স মানুষের গ্রহবাসের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে।”
বিস্ফোরণের আগে ৪০৩ ফুট বা ১২৩ মিটার উচ্চতার এই মেগা-রকেটটি আগের ব্যর্থ উৎক্ষেপণগুলোর চেয়ে অনেকটা দূর অতিক্রম করেছিল। তবে এটি মার্চ ৬ তারিখের আরেকটি টেস্ট ফ্লাইটের মতোই শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে, যেখানে উৎক্ষেপণের কিছুক্ষণ পরেই স্টারশিপ বিস্ফোরিত হয়েছিল।
মার্কিন ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছে, উৎক্ষেপণ ব্যর্থতার পর পড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষের কারণে ফ্লোরিডার মায়ামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ চারটি বিমানবন্দরে কিছু সময়ের জন্য ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত করা হয়েছে।
বিশাল আকৃতির স্টারশিপ রকেট এবং এর নিয়মিত ব্যর্থতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলোতে একাধিকবার ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়েছে।
স্পেসএক্স এখন পর্যন্ত আটটি সমন্বিত স্টারশিপ টেস্ট ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে। যার মধ্যে চারটি সফল হলেও, বাকি চারটিই বিস্ফোরণে শেষ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ‘ফেইল ফাস্ট, লার্ন ফাস্ট’ দৃষ্টিভঙ্গির ওপর আস্থা রাখছে, যদিও তারা স্বীকার করেছে যে, অগ্রগতি সব সময় লাফিয়ে আসে না।
এই টেস্টের জন্য এফএএ পূর্বের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ এয়ারস্পেস নিষিদ্ধ এলাকা নির্ধারণ করেছিল — উৎক্ষেপণ স্থল থেকে এক হাজার ৬০০ নটিক্যাল মাইল বা দুই হাজার ৯৬৩ কিলোমিটার পর্যন্ত। পরীক্ষা চালাতে যুক্তরাজ্য, তুর্কস অ্যান্ড কাইকোস, বাহামা, মেক্সিকো ও কিউবার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছিল।

সম্প্রতি এফএএ বছরে স্পেসএক্সের ২৫টি উৎক্ষেপণের অনুমতি দিয়েছে, যেখানে আগে ছিল মাত্র ৫টি। পরিবেশবাদীদের আপত্তি উপেক্ষা করে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ইলন মাস্ক বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি “শত শত কোটি ডলারের জালিয়াতি ও অপব্যবহার” তদন্তের কথা বলেছেন।
তবে মাস্কের বিশাল ব্যবসায়িক পরিসর ও তার সরকারি সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মার্চে ক্যাম্পেইন লিগেল সেন্টার (সিএলসি) পরিবহন বিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেলের কাছে অভিযোগ করেছে, স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্প ও এফএএ-এর লেনদেন সম্ভাব্য স্বার্থের সংঘাত তৈরি করেছে কি না তা তদন্তের আহ্বান জানিয়ে।