‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় হুমকিতে ইউরোপ’

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সতর্ক করে বলেছেন, ইউরোপ বর্তমানে এমন এক ভয়াবহ হুমকির মুখোমুখি, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর দেখা যায়নি। তিনি বলেছেন, ইউরোপীয় স্বাধীনতা রক্ষায় এখন একটি "বৃহৎ প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির মুহূর্ত" চলছে এবং ফ্রান্সকে আরও শক্তিশালী সামরিক সক্ষমতার দিকে এগোতে হবে। খবর বিবিসির।
প্যারিসে ফরাসি সশস্ত্র বাহিনীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে ম্যাক্রোঁ জানান, আগামী বছর ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় ৩.৫ বিলিয়ন ইউরো বৃদ্ধি করা হবে এবং ২০২৭ সাল নাগাদ আরও ৩ বিলিয়ন ইউরো যুক্ত করা হবে।
তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২০২৭ সালের মধ্যেই ফ্রান্সের সামরিক বাজেট দ্বিগুণ করে ৬৪ বিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত করা হবে— যা পূর্ব পরিকল্পনার চেয়ে তিন বছর আগেই বাস্তবায়ন হবে। ২০১৭ সালে ফরাসি প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ৩২ বিলিয়ন ইউরো।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এখনও সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে।
রাশিয়ার আগ্রাসনের ইঙ্গিত করে ম্যাক্রোঁ বলেন, “আমরা একটি মোড় পরিবর্তনের সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আজ বিশ্বে মুক্ত থাকতে হলে, ভয় ধরাতে জানতে হবে। ভয় ধরাতে হলে, শক্তিশালী হতে হবে।”
তিনি "সাম্রাজ্যবাদী নীতি" এবং "ভূমি দখলকারী শক্তি"-র কড়া সমালোচনা করেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর থেকেই ইউরোপে নিরাপত্তা পরিস্থিতি চরমভাবে উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।
ম্যাক্রোঁ আরও বলেন, আজকের বিশ্ব "পারমাণবিক শক্তির পুনঃউত্থান" এবং "বৃহৎ সংঘাতের বিস্তার" দেখছে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরান বোমার আক্রমণ, ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষ এবং "ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন সমর্থনের উত্থান-পতন" প্রসঙ্গেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ন্যাটো সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, সদস্য রাষ্ট্রগুলো এখন থেকে তাদের বার্ষিক জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করবে, যা পূর্বে ২ শতাংশ ছিল।
যুক্তরাজ্যও সম্প্রতি প্রতিরক্ষা পর্যালোচনা ঘোষণা করেছে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সচিব জন হেলি একে "মস্কোর প্রতি বার্তা" বলে উল্লেখ করেছেন।
ফরাসি সেনাবাহিনীর প্রধান থিয়েরি বুরখার্ড বলেন, রাশিয়া এখন ইউরোপে ফ্রান্সকে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। তিনি বলেন, ইউরোপের জন্য রাশিয়া একটি “দীর্ঘস্থায়ী হুমকি” এবং ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধই নির্ধারণ করছে “আগামীকালের বিশ্বে ইউরোপীয় দেশগুলোর অবস্থান”।

আগামী বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বায়রু আগামী অর্থবছরের বাজেট পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন, যেখানে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের নতুন অঙ্ক ঘোষণা করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই মন্তব্যগুলো ম্যাক্রোঁর বাসটিল দিবসের আগের দিন দেওয়া বক্তৃতায় আসে— যা ফ্রান্সের জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয় এবং ফরাসি বিপ্লবের একটি ঐতিহাসিক প্রতীক।