ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞার প্রক্রিয়া শুরু করল জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে একাধিক আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য (ই-থ্রি) বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) ইরানের ওপর পুনরায় জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই সিদ্ধান্ত ৩০ দিনের মধ্যে কার্যকর হবে। খবর আল জাজিরার।
ই-থ্রি বহুদিন ধরে সতর্ক করে আসছিল যে, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির মেয়াদ অক্টোবর মাসে শেষ হলে তেহরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আবার ফিরিয়ে আনা হতে পারে। ওই চুক্তিতে যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা (জেসিপিওএ) এর আওতায় ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে সম্মত হয়েছিল, বিনিময়ে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়।
তবে ইউরোপীয় তিন দেশ অভিযোগ করেছে, ইরান চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে। ফরাসি, জার্মান ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো এক চিঠিতে লিখেছেন, “২০১৯ সাল থেকে ইরান ধারাবাহিকভাবে তাদের জেসিপিওএ প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করছে। এর মধ্যে অত্যধিক সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে, যার কোনো বেসামরিক যৌক্তিকতা নেই এবং যা পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন কোনো রাষ্ট্রের জন্য নজিরবিহীন।”
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, তারা এখনও কূটনৈতিক সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে ইরান এখনও এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ইরানের বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী বিস্তৃত জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা ফিরে আসবে। এর মধ্যে প্রচলিত অস্ত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধতা এবং সম্পদ জব্দের মতো পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ই-থ্রি’র ঘোষণা প্রক্রিয়ার সূচনামাত্র। এখনই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে না, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেও কূটনৈতিক সমাধানের সুযোগ থাকতে পারে।
ইরান অবশ্য বলছে, ইউরোপের এই পদক্ষেপের কোনো অধিকার নেই। ইরানি উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম ঘারিবাবাদি এক পোস্টে লিখেছেন, “এখনই সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার। কূটনীতিকে যথেষ্ট সময় ও সুযোগ দিতে হবে।”

২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর ইরান ক্রমশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়ে দেয়। যদিও দেশটি সবসময় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এ বছরের জুনে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক, সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় ব্যাপক বিমান হামলা চালালে শত শত মানুষ নিহত হয়। যুক্তরাষ্ট্রও এতে যোগ দেয়। এরপর তেহরান সব কূটনৈতিক প্রচেষ্টা থেকে সরে দাঁড়ায়। যদিও জুলাইয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে আবার আলোচনা শুরু হয়েছিল, কিন্তু এখনও কোনো চুক্তি হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসি-এর সিনা তুসি মন্তব্য করেছেন, ই-থ্রি’র সর্বশেষ পদক্ষেপ সহযোগিতা পুনরুজ্জীবনের পথের চেয়ে বরং উত্তেজনা বাড়ানোর কৌশল বলে মনে হচ্ছে। “এটি আস্থা ফেরানোর পরিবর্তে উভয় পক্ষকে চাপ ও পাল্টা চাপের এক চক্রে ফেলে দিতে পারে, যেখান থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় থাকবে না।”