ইন্দোনেশিয়ায় বোর্ডিং স্কুল ধস
অলৌকিকভাবে বেঁচে গেল ১৩ বছরের সেলেন্দ্র হাইকাল

ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভার প্রোবোলিংগো শহরের বাসিন্দা দেউই আজেং তাঁর ১৩ বছরের ছেলে সেলেন্দ্র হাইকাল রাকাদিত্যর স্কুলের গ্রুপ চ্যাটে একটি খারাপ খবর পান। যেখানে লেখা ছিল- একটি ঘটনা ঘটেছে। তিনি জানতে পারেন, সিদোআরজোর আল-খোজিনি ইসলামিক বোর্ডিং স্কুলের একটি অংশ ভেঙে পড়েছে। এই দুর্ঘটনার ফলে হাইকালসহ ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী অনেক ছাত্র ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে যায়। খবর আলজাজিরার।
দেউই তার স্বামীর কাছ থেকে খবরটি নিশ্চিত হওয়ার পর সিদোআরজোর উদ্দেশে রওনা হন। দুপুরের নামাজের সময় ধসের প্রায় দুই ঘণ্টা পরে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সেখানে এসে তিনি বিভিন্ন হাসপাতালে উদ্ধারকৃত শিশুদের নামের তালিকা খুঁজে দেখতে থাকেন। তালিকায় ছয়জন ‘হাইকাল’ থাকায় তিনি প্রতিটি হাসপাতালে যান। এরপর কেউ তাকে ঘটনাস্থল থেকে একটি ভিডিও পাঠায়, যেখানে তিনি তার ছেলের কণ্ঠ শুনতে পান। হাইকাল বারবার ‘মা, মা, মা’ বলে ডাকছিল। এই কণ্ঠ শুনেই দেউই নিশ্চিত হন যে হাইকাল ভেতরে জীবিত আছে, এরপর তিনি উদ্ধারকারী দলকে তাকে উদ্ধার করার জন্য অনুরোধ করেন।
ধ্বংসস্তূপের নিচে ৭২ ঘণ্টা
তরুণ হাইকাল আরও পাঁচজন ছাত্রের সঙ্গে ধ্বংসস্তূপের নিচে একটি এয়ার পকেটের মধ্যে আটকা পড়েছিল। তাদের পালানোর সবচেয়ে কাছের পথটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল হাইকালের এক বন্ধুর মৃতদেহের কারণে, যে ভবন ধসের তীব্রতায় মারা যায়। হাইকালের হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসার বা উদ্ধারকারীদের কাছে পৌঁছানোর কোনো উপায় ছিল না।
দেউই তিন দিন ধরে কঠিন উদ্ধার প্রচেষ্টার সময়টি ভয়াবহ আতঙ্কে কাটিয়েছেন। তিনি জানান, তিনি কেবল কাঁদছিলেন, চিৎকার করছিলেন ও প্রার্থনা করে যাচ্ছিলেন। উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের ফাঁক দিয়ে খাদ তৈরি করে আটকা পড়া শিক্ষার্থীদের কাছে রুটি ও পানি পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছিল।
বোর্ডিং স্কুল ধসের প্রায় ৭২ ঘণ্টা পরে উদ্ধারকারীরা হাইকালকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে স্ট্রেচারে রাখেন। হাসপাতালে যখন দেউই তার ছেলেকে দেখতে পান, তখন তিনি আবেগ সামলাতে পারেননি। তিনি বলেন, তিনি ৭২ ঘণ্টা ধরে সবকিছু সহ্য করেছিলেন। তিনি সব ঠিক করে ফেলেছিলেন।
ধীরে ধীরে হাইকাল তার মাকে জানায়, সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরের নামাজ শেষ করার সময় ছাদের টুকরোগুলো তাদের ওপর পড়তে শুরু করে ও ভবনটি সম্পূর্ণ ধসে পড়ে। হাইকাল অনুভব করেছিল যেন তাকে বিভিন্ন দিকে টেনে নেওয়া হচ্ছে। পরে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, নির্মাণের দায়িত্বে থাকা শ্রমিকরা বোর্ডিং স্কুলের উপরের তলায় কংক্রিট ঢালছিল, যার অতিরিক্ত ওজনের কারণে ভবনটি ধসে পড়েছিল।

হাইকাল তার মাকে জানায়, ধ্বংসস্তূপের অন্ধকারে আটকা পড়েও সে চিৎকার করেনি। স্কুলের বিজ্ঞান ক্লাস ও জরুরি পরিস্থিতিতে শক্তি সংরক্ষণের শিক্ষা মনে করে সে শান্ত থাকার এবং আতঙ্কিত না হওয়ার চেষ্টা করেছিল। হাইকালের পা ছাদের একটি টুকরোয় আটকে গিয়েছিল, কিন্তু সে তখনও প্রার্থনা করত এবং বন্ধুদেরও একই কাজ করতে উৎসাহিত করত।
দেউই মনে করেন, তার ছেলের বেঁচে থাকার ক্ষমতার কৃতিত্ব তার সৃজনশীল দক্ষতা। তিনি ছোটবেলা থেকেই মোবাইল বা ডিজিটাল গ্যাজেট ব্যবহার না করে বাইরে খেলা ও বাগানের প্রাণী পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসত। ধংসস্তূপের নিচে বদ্ধ জায়গায় আটকে থাকার ভীতিকর অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনটি দিন ও দুটি অন্ধকার রাত কাটানোর পর হাইকাল এখনও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন আছে। ডাক্তাররা তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।