সিরিয়াল কিলার নিয়ে সেরা ১০ ছবি

সিরিয়াল কিলার। একের পর এক যে খুন করে যায় নির্দিষ্ট কোনো কারণে, বিশ্বাসে এবং ভঙ্গিতে। বাস্তবের সিরিয়াল কিলাররা যেমন ভয়াবহ, বড়পর্দার সাজানো জগতের খুনিরাও কিন্তু কম নয়। সিরিয়াল কিলার কিংবা ক্রমিক খুনোখুনি নিয়ে তৈরি হয়েছে অজস্র ছবি, এর মধ্যে অনেকগুলো রীতিমতো চলচ্চিত্র ইতিহাসের সেরা ছবি হয়ে উঠেছে শিল্পমান এবং দর্শকপ্রিয়তায়। এই বিষয় নিয়ে তৈরি হওয়া সেরা ১০টি ছবির একঝলক পাওয়া গেছে ‘টেস্ট অব সিনেমা’য় ভর করে।
১০. ফ্রেইলটি (২০০১) : অভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ারজুড়ে পরিচিতি পাওয়ার পর বিল প্যাক্সটন পরিচালক হিসেবেও সফল। এই ছবিটি তাঁর প্রথম এবং সিরিয়াল কিলিং নিয়ে ছবি। হঠাৎ এক রাতে এক লোক এফবিআইর অফিসে ঢুকে অদ্ভুত এক স্বীকারোক্তি দেয়। এর পর বর্ণনা দিতে থাকে, কীভাবে তাঁর বাবার চিন্তাভাবনা জন্ম দিয়েছে এক ভয়ংকর সিরিয়াল কিলারকে। বাকিটুকু জানতে ছবি দেখুন।
৯. ম্যানহান্টার (১৯৮৬) : এই ছবিটিই সর্বপ্রথম হ্যানিবাল লেকটার চরিত্রটিকে পর্দায় নিয়ে আসে। থমাস হ্যারিসের ‘রেড ড্রাগন’ উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি বানিয়েছেন মাইকেল ম্যান। ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশনে ফরেনসিক সায়েন্সের ব্যবহারের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্রটি আরো অনেক ছবির অনুপ্রেরণা হয়ে থেকেছে পরবর্তী সময়ে।
৮. আমেরিকান সাইকো (২০০০) : সিরিয়াল কিলারের ওপর নির্মিত আরেকটি অসাধারণ ছবি, জিতেছিল ‘ইন্টারন্যাশনাল হরর গিল্ড’ অ্যাওয়ার্ড। ম্যানহাটনের একজন সফল ব্যাংক বিনিয়োগকারীর ভয়ংকর এক দ্বৈত জীবনের কাহিনী নিয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মিত। ধারণা করা হয়, এই ছবিতে ক্রিশ্চিয়ান বেলের পারফরম্যান্স ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। ব্রেট ইস্টন এলিসের লেখা উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে ছবিটি পরিচালনা করেন ম্যারি হ্যারন।
৭. ভেনজেন্স ইজ মাইন (১৯৭৯) : এই লিস্টে আসা একমাত্র জাপানি ছবি। বক্স অফিস কাঁপিয়ে শুধু ক্ষান্ত হয়নি, সে বছরের জাপানিজ একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে সেরা ছবি, পরিচালক, অভিনেত্রী, চিত্রনাট্যসহ ছয়টি ক্যাটাগরিতে সেরা হয়। এক কারাবন্দী আসামির দুর্ধর্ষ অতীত নিয়ে জমেছে ছবির ঘটনাপ্রবাহ। রিউজো সাকির উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি পরিচালনা করেন শোহেই ইমামুরা।
৬. মেমোরিস অব মার্ডার (২০০৩) : খুনোখুনি নিয়ে ছবি বানানো কোরিয়ানরা রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে বটে! চলচ্চিত্রটি গ্র্যান্ড বেল অ্যাওয়ার্ডে সেরা হয় ছবি, পরিচালক, অভিনেতার ক্যাটাগরিতে—মোট পুরস্কর চারটি। ব্লু ড্রাগন ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে দুটি ক্যাটাগরিতে। সত্য ঘটনা অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ করেছেন বং জুন হো। সিউল থেকে আসা এক গোয়েন্দা কীভাবে এক ভয়ংকর সিরিয়াল কিলারের রহস্য উন্মোচন করেছিল, তার ইতিহাস জানতেই দেখতে হবে ছবিটি।
৫. দ্য সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বস (১৯৯১) : চলচ্চিত্র ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারও বলা হয় এটিকে। অস্কারে জয় করেছিল প্রধান পাঁচটি পুরস্কার (সেরা ছবি, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা, সেরা অভিনেত্রী ও সেরা চিত্রনাট্য)। এ ছাড়া বাফটা আর গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড—কী নেই এই ছবির সাফল্যের ঝুড়িতে! বিখ্যাত চরিত্র ড. হ্যানিবাল লেকটারকে নিয়ে তৈরি সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র এটি। হ্যানিবাল লেকটার যে কী জিনিস, তা কখনোই না ভোলার মতো অভিনয়ই করেছেন অ্যান্থনি হপকিন্স। পুরো ছবিতে একবারও চোখের পাতা ফেলতে দেখা যায়নি তাঁকে। অসামান্য অভিনয় করেছেন জোডি ফস্টার। এফবিআইর এক তরুণী কর্মকর্তা খুঁজতে থাকে এক ভয়ংকর সিরিয়াল কিলারকে, যে কি না মেয়েদের হত্যা করে তাদের চামড়া কেটে নেয়। এই অনুসন্ধানে সে সাহায্য নেয় দুর্ধর্ষতম সিরিয়াল কিলার ড. হ্যানিবাল লেকটারের, যে কি না কারাবন্দী। থমাস হ্যারিসের একই নামের উপন্যাস থেকে ছবিটি বানিয়েছেন জোনাথান ডেম।
৪. জোডিয়াক (২০০৭) : বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়লেও চলচ্চিত্রবোদ্ধারা একে ডেভিড ফিঞ্চারের অনবদ্য কাজ মানেন। সানফ্রান্সিসকোর এক কার্টুনিস্ট ‘জোডিয়াক’ নামে এক সিরিয়াল কিলারকে খুঁজতে খুঁজতে হয়ে যায় এক অ্যামেচার গোয়েন্দা। রবার্ট গ্রেস্মিথের বাস্তব জীবনের সে ঘটনাই দেখা গেছে ছবিটিতে।
৩. হেনরি—পোর্ট্রেইট অব এ সিরিয়াল কিলার (১৯৮৬) : এই লিস্টে জায়গা করে নেওয়া একমাত্র চলচ্চিত্র, যেটি নিষিদ্ধ হয়েছিল। ছবিটি ১৯৮৬ সালে কাজ শেষ করলেও সেন্সরবোর্ড থেকে ছাড়া পেতে অপেক্ষা করতে হয় আরো চার বছর। পর্দাজুড়ে হিংস্র ও ভয়ানক সব দৃশ্যের জন্য ছবিটি আটকে থাকে ১৯৯০ পর্যন্ত। তবে মুক্তি পাওয়ার পর অপ্রত্যাশিতভাবে ছবিটি গ্রহণ করতে থাকে সর্বস্তরের দর্শক। হেনরি লি লুকাস নামের এক দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলারের বাস্তব অপরাধ জীবন নিয়ে তৈরি ছবিটি। পরিচালনা করেছেন জন ম্যাকনটন। স্বীকৃতি হিসেবে ছবিটি দেশ-বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার জয় করেছে।
২. সাইকো (১৯৬০) : আলফ্রেড হিচকক মানেই রহস্য। হিচকক মানেই আলাদা কিছু। ব্যতিক্রমধর্মী চিন্তাভাবনার জন্য বিখ্যাত এই পরিচালক সিরিয়াল কিলিং নিয়ে কাজ করা শুরু করেন সেই ষাটের দশক থেকেই। ‘সাইকো’ ছবিটির কাহিনী নেওয়া হয়েছে একই নামের রবার্ট ব্লকের উপন্যাস থেকে। তিনি উপন্যাসটি লিখেছিলেন এড গেইন নামের এক মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত সিরিয়াল কিলারের ঘটনা নিয়ে। এক মহিলা রিয়েল এস্টেট এজেন্ট বিপুল সংখ্যক ডলার নিয়ে পালাতে থাকেন। পথে ওঠেন এক মোটেলে। রহস্যময় সেই মোটেলে ঘটতে থাকা ঘটনা নিয়ে জমে ওঠে ছবির কাহিনী।
১. সেভেন (১৯৯৫) : ডেভিড ফিঞ্চারের নাম এ তালিকায় আবার না এনে উপায় নেই। সেভেন ছবিটি দর্শককে মুগ্ধ করেছে এর কাহিনী, অভিনয়নৈপুণ্য, রহস্য আর উত্তেজনা দিয়ে। ছবিটিতে অভিনয় করেছে মরগান ফ্রিম্যান, ব্র্যাড পিট আর কেভিন স্পেসির মতো অসাধারণ অভিনেতারা। ৩২ বছরের এক বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার শেষ করার এক সপ্তাহ আগে পুলিশ ফোর্সের এক গোয়েন্দাকে দেওয়া হয় ভয়ংকর এক খুনের রহস্য উদঘাটন করতে। তার সঙ্গী হয় তাকেই প্রতিস্থাপন করতে ফোর্সে যোগ দেওয়া এক তরুণ। কিন্তু পরে তারা কী খুঁজে পায়, তা জানতে হলে দেখতে হবে এই অসাধারণ ছবিটি।