মেনোপজ শরীর ও মনে কী প্রভাব ফেলে?

দীর্ঘমেয়াদে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াকে মেনোপজ বলে। ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সে সাধারণত নারী শরীরে এই পরিবর্তন হয়। মেনোপজ শরীর ও মনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৭৯৬তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. নাঈমা শারমিন হক। বর্তমানে তিনি জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স মেডিকেল কলেজের অবসটেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : মেনোপজ নারীদের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। সাধারণত শারীরিক বা মানসিক কী কী ধরনের প্রভাব তখন পড়ে?
উত্তর : প্রভাব তো পড়েই। কারণ, সম্পূর্ণ বিষয়টি হলো হরমোনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একটি রিপ্রোডাকটিভ এইজের (প্রজনন বয়স) মেয়ের রূপ, গুণ, চাকচিক্য সবকিছু হরমোনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই হরমোন যখন শরীর থেকে হঠাৎ চলে যায় অথবা ধীরে ধীরে চলে যাওয়ার সময় হয়, তখন শরীরে আসলে ব্যাপক পরিবর্তন হয়। দেখা যায় যে মেজাজ খিঁটখিঁটে হয়ে যায়।কোনো কিছু ভালো লাগে না। হঠাৎ করে কান মাথা গরম হয়ে যায়। রোগীর অভিযোগ থাকে, হাতের তালু জ্বলে, পায়ের তালু জ্বলে, চিকন ঘাম হয়।
প্রশ্ন : এই লক্ষণগুলো কি মেনোপজ হওয়ার আগে থেকে শুরু হতে পারে?
উত্তর : মেনোপজের আগে একটি সময় থাকে, যাকে আমরা বলি পেরিমেনোপজাল পিরিয়ড। মেনোপজাল ট্রানজিশন। মানে আস্তে আস্তে ঋতুস্রাব কমে যাচ্ছে। আগে যেটি মাসে মাসে হতো সেটি দুই মাস তিন মাস পরে হচ্ছে। অথবা অনিয়মিত হচ্ছে বা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এই সময় থেকে শরীরের এই পরিবর্তনগুলো শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত যখন ঋতুস্রাব পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, ডিম্বাশয় থেকে যখন হরমোন আসে না, ফলিকলের সহযোগিতা থাকে না, তখন লক্ষণগুলো অনেক বেশি দেখা দেয়। এর মধ্যে আরো পরে ইরিটিবিলিটি সিনড্রম থাকে, জেনিটিইউরিনারি সিনড্রম থাকে-এগুলো পরে দেখা যায়।
প্রশ্ন : জেনেটিইউরিনারি সিনড্রম বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : এটি বলতে বোঝা যাচ্ছে যে, ইউরিনে সমস্যা হচ্ছে। দেখা যায় যে খুব ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হতে পারে। অথবা প্রস্রাব ঠিকমতো হচ্ছে না, এটি হতে পারে। হাঁচি কাশির সঙ্গে প্রস্রাব ঝড়ে যাচ্ছে, এমন হতে পারে। অথবা রোগীরা অনেক সময় আমাদের কাছে এসে বলে যে, ‘শরীর শুকনো লাগে’। ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস হয়। এতে তাদের দাম্পত্য জীবন ব্যহত হয়। এ ধরনের অনেক সমস্যা নিয়ে রোগীরা আমাদের কাছে এসে থাকে।
মেন্টাল ইরিটেশন থাকে। বিরক্তি থাকে। দেখা যায়, ছেলেমেয়ের হয়তো অভিযোগ থাকে, ‘মাকে কিছু বললেই মা রেগে যায়।’ স্বামীর অভিযোগ থাকে, ‘বউকে কিছু বলাই যায় না, রেগে যায়।’ সবচেয়ে বড় বিষয় হলো যেহেতু হট ফ্লাস হয়, তাই ঘরে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে একজন হয়তো ফ্যান ছাড়ছে, এসি ছাড়ছে। আর স্বামীর হয়তো শীত লাগছে। সে এসি বন্ধ করতে বলছে। এ নিয়ে মনোমালিন্য হয়। তখন দেখা যায় যে মানসিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায়। আর সন্তানদের সঙ্গে এই সময়ে কেন যেন একটু মানসিক দূরত্বও হয়ে যায়। কারণ, যেহেতু একটু বিরক্তি কাজ করে, অল্প কথাতেই রাগ হয়ে যায়, কান্না পায়, অস্থিরতা করে- তাই ছেলেমেয়েরাও একটু দূরে চলে যায়। মানসিক সহযোগিতাটা এই সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।