মেনোপজের পর জটিলতা প্রতিরোধে করণীয়

মেনোপজের পর সাধারণত ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সে একজন নারীর মেনোপজ ঘটে। মেনোপজের পর হৃদরোগ, হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপরোসিস, প্রস্রাবের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
মেনোপজের পরে কষ্টদায়ক লক্ষণ ও দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা প্রতিরোধ করে স্বাচ্ছন্দ্য জীবনযাপনের জন্য কিছু চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। যেমন :
হরমোন প্রয়োগ : ডিম্বাশয় থেকে হরমোনের নিঃসরণ কমে যাওয়ায় মেনোপজের সমস্যাগুলো তৈরি হয়। তাই ওই সমস্যা ও জটিলতা থেকে মুক্ত থাকার জন্য চিকিৎসকরা ওই সব নারীকে হরমোন প্রয়োগ করে থাকেন। একে এইচআরটি (HORMONE REPLACEMENT THERAPY, HRT) বলা হয়। সাধারণ ইসট্রোজেন বা ইসট্রোজেন হরমোনের মতো রাসায়নিক পদার্থ দেওয়া হয়। এসব হরমোন ট্যাবলেট, চামড়ায় লাগানোর মলম, জিহ্বার নিচে নেওয়ার স্প্রে ইত্যাদি আকারে পাওয়া যায়।
হরমোন গ্রহণের উপকারিতা
হরমোন গ্রহণের কারণে একজন নারী অনেকটা মেনোপজের আগের মতো শারীরিক ও মানসিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারেন।
* হটফ্লাস বা গরম ঝলকানির মতো অনুভূতি কমে যায়। মানসিক দুর্বলতা কমে, স্বাভাবিকভাবে ঘুমাতে পারেন, প্রস্রাবের সমস্যা কমে, ভ্যাজাইনার স্বাভাবিক পিচ্ছিলতা বজায় থাকে।
* হরমোন গ্রহণের কারণে মেনোপজের পরে নারীদের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি, যেমন—উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়া ইত্যাদির আশঙ্কা কমে। তবে মেনোপজের পরবর্তী পাঁচ বছর হরমোন চিকিৎসা ভালো ফল দেয়। আর বয়স ৬০ বছর পার হলে তেমন কোনো কাজে আসে না।
হরমোনের ঝুঁকি
প্রতিটি ওষুধের কিছু না কিছু ক্ষতিকর দিক থাকে। তাই হরমোন গ্রহণেরও কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। দীর্ঘদিন, অর্থাৎ একটানা পাঁচ বছরের বেশি হরমোন গ্রহণ করলে স্তন ক্যানসার, জরায়ু ক্যানসারের ঝুঁকি সামান্য বাড়ে, যাঁরা হরমোন গ্রহণ করছেন না, তাঁদের তুলনায়। আর যাঁদের অধিক ওজন, সন্তান হয়নি, ধূমপান বা অ্যালকোহল পান করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ওই স্বাস্থ্যঝুঁকি আরো বেশি।
হরমোন গ্রহণের সতর্কতা
একমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শক্রমেই হরমোন গ্রহণ করা উচিত। শুধু তাই নয়, নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নিতে হবে হরমোন গ্রহণের কারণে শরীরে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে কি না।
প্রকৃতির নিয়মে একজন কিশোরী নির্দিষ্ট বয়সে পরিপূর্ণ নারীতে পরিণত হয়ে সন্তান ধারণের ক্ষমতা অর্জন করে। তেমনি বিশেষ বয়সে মেনোপজের মাধ্যমে সন্তান ধারণক্ষমতার ইতি ঘটে। চিকৎসাবিজ্ঞানের সেবা ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের মাধ্যমে মেনোপজের পরও তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্যময় ও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।