সঞ্জীবনী
ঢাকা মনোরোগ ক্লিনিকের এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন

বাংলাদেশের মনোরোগের চিকিৎসায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা মনোরোগ ক্লিনিক। ১৯৮৪ সালের ২৩ মে ক্লিনিকটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রেশন লাভ করে। বর্তমানে মিরপুর ১১-তে অবস্থিত এই হাসপাতালে মনোরোগের প্রায় সব ধরনের চিকিৎসা করা হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. হেদায়েতুল ইসলাম। ক্লিনিকটির মূল উদ্দেশ্য মানসিক রোগীদের বিজ্ঞানভিত্তিক সুচিকিৎসার মাধ্যমে সমাজে প্রচলিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন অপচিকিৎসা দূর করা। পাশাপাশি মানসিক রোগ চিকিৎসায় সামাজিক সচেতনতা বাড়িয়ে রোগীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
প্রেক্ষাপট
প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ধানমণ্ডির ৮ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে ছিল। তখন সেখানে ১০ শয্যা ছিল। বহির্বিভাগেও রোগী দেখার ব্যবস্থা ছিল সেখানে। এরপর ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে ১২ নম্বর রোডে ২০ শয্যা নিয়ে হাসপাতালটি নতুন করে শুরু হয়, সেখানেও বহির্বিভাগে রোগী দেখার ব্যবস্থা ছিল। এরপর ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত লালমাটিয়া ডি ব্লকে ভাড়া করা আরেকটি বাড়িতে ৩০ শয্যার ব্যবস্থাসহ হাসপাতাল ও বহির্বিভাগে রোগী দেখার ব্যবস্থা করা হয়।
১৯৯৭ সাল থেকে মিরপুরের বর্তমান ঠিকানায় নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয় হাসপাতালটি। বর্তমানে ৭০ শয্যার সুবিধাসহ রোগীদের বিজ্ঞানভিত্তিক সুচিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
মনোরোগ ক্লিনিকটি নিয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. হেদায়েতুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে সুলভে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত রোগীরা যাতে যথাযথ মানসম্পন্ন চিকিৎসা নিতে পারেন, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হয়। এখানে গরিব রোগীদের বিনামূল্যে দেখার ব্যবস্থা রয়েছে।’
চিকিৎসাসেবা
হাসপাতালের চিকিৎসা সম্পর্কে ডা. হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘মানসিক রোগীদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে রোগ সম্বন্ধে সঠিক তথ্যবিনিময়ের মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হয়। এ ছাড়া একজন মানসিক রোগী যেন পরিবারে বোঝা না হয় এবং সমাজে নিজেদের ভূমিকা রাখতে পারেন তার জন্য আর্থিক সহযোগিতাও করা হয়।’
প্রতিবছর এখানে গড়ে ৭৫০ জনের মতো রোগী ভর্তি করা হয় এবং ১০ হাজারের অধিক রোগীকে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। কেবিন ভাড়া ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। ওয়ার্ডের শয্যার ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আউটডোরে চিকিৎসা করা হয়। ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক নিয়োজিত থাকেন। এসি, নন-এসিসহ ১০টি কেবিন রয়েছে। ওয়ার্ড রয়েছে মোট পাঁচটি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছেন ডা. তারিকুল ইসলাম ও ডা. নুরুননাহার চৌধুরী। প্রয়োজনে মানসিক রোগ ছাড়াও অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হয়।
মেডিকেল চিকিৎসার পাশাপাশি ক্লিনিকে সাইকোথেরাপি, গ্রুপ থেরাপি, মিউজিক থেরাপি, রিক্রিয়েশনাল থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্প্রিচুয়াল থেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে।
বর্তমানে ক্লিনিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মেডিকেল অফিসার, নার্স, সাইকোলজিস্ট ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ৭৫ জন কর্মী রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন।
কথা হয়, কেরানীগঞ্জ থেকে আসা মরিয়মের (ছদ্মনাম) সঙ্গে। শুচিবায়ু রোগে আক্রান্ত তিনি। বহির্বিভাগে চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন তিনি। জানালেন, অনেকদিন ধরেই এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা যত্ন নিয়ে রোগী দেখেন। ভিজিটও খুব বেশি না।
বিষণ্ণতা রোগে আক্রান্ত মিনহাজুর রহমান (ছদ্মনাম) এসেছেন ঢাকার শ্যামলী থেকে। তিনি জানান, দুই সপ্তাহ ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকটাই ভালো অনুভব করছেন তিনি। চিকিৎসকরা বেশ আন্তরিক বলেও জানান এই রোগী।
শিক্ষা কার্যক্রম
প্রতিষ্ঠানটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজের সমাজকল্যাণ বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের মানসিক রোগ সম্বন্ধে ৬০ কর্মদিবসের বাস্তব প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
ডা. হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘মানসিক রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসা দেওয়ার লক্ষ্যেই আমাদের কাজ করা। ভবিষ্যতেও যেন ভালো মানের কাজ করতে পারি সেটিই আমাদের স্বপ্ন।’
ঠিকানা
ঢাকা মনোরোগ ক্লিনিক (প্রা.) লি.
বাড়ি ১৩, রোড ১, ব্লক-এ, সেকশন ১১, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬
ফোন : ৮০৫৯২৭৪, ৯০১৬৩৭১, ৯০০৫০৫০, ০১৮৪১৪৪৮৮৮৯