কিডনি রোগের অন্যতম কারণ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ

কিডনি রোগ প্রতিরোধে সারা দেশে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান।
আজ সোমবার কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ১১তম জাতীয় সম্মেলন ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারের দুদিনব্যাপী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘যাঁরা যে জেলায় বসবাস করেন, সেখান থেকেই সচেতনতামূলক মানবিক কর্মসূচি গ্রহণ করুন। কিডনি রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই।’
কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশীদের সভাপতিত্বে মিরপুরে হাসপাতাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন হয়।
অনুষ্ঠানে বিএমএ সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান বলেন, কিডনি রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করলে নিরাময় করা সম্ভব। এ জন্য কিডনি রোগ হওয়ার আগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, কিডনি রোগের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো- প্রথম দিকে এর কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে যখন উপসর্গ ধরা পড়ে ততক্ষণে কিডনির প্রায় ৭৫ শতাংশই বিকল হয়ে পড়ে।
অধ্যাপক রশিদ আরো বলেন, ‘কিডনি রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করলে ৬০ ভাগ ক্ষেতে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। এ জন্য কিডনি রোগ হওয়ার আগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’ এই রোগ প্রতিরোধে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা, অতিরিক্ত লবণ পরিত্যাগ, ফাস্টফুড, চর্বিজাতীয় ও ভেজাল খাবারসহ ধূমপান বর্জন করার পরামর্শ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সারা বিশ্বেই কিডনি রোগের অন্যতম কারণ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। দেশের দুই কোটি লোক উচ্চ রক্তচাপে এবং ৮০ লাখ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অথচ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ৪০ থেকে ৬০ ভাগ এবং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের ৫০ থেকে ৬০ ভাগই জানেন না যে তাঁদের এসব রোগ হয়েছে। যাঁদের উচ্চরক্তচাপ ধরা পড়েছে অথচ নিয়ন্ত্রণে নেই তাঁদের ১৫ থেকে ২০ ভাগ এবং যাঁদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই তাঁদের ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ক্রমান্বয়ে আক্রান্ত হয় কিডনি রোগে।
বক্তারা আরো বলেন, বিভিন্ন রোগে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদেরও ২০ থেকে ২৫ ভাগের একুইট কিডনি ফেইলর ধরা পড়ে। সব মিলিয়ে দেশে দুই কোটি লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত। এতে বছরে মারা যাচ্ছে ৪০-৫০ হাজারের মতো মানুষ। কিডনি রোগের চিকিৎসা ডায়ালাইসিস বা ট্রান্সপ্ল্যান্ট ব্যয়বহুল এবং তা মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ বহন করতে পারে। ৭৫ শতাংশ টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারে না। অথচ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত চিকিৎসা নিলে, এসব বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করা গেলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ অনেকাংশেই সম্ভব।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কিডনি ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ ওয়াহাব, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মুহিবুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিনি ফেরদৌস রশিদ প্রমুখ।
সম্মেলনে দেশ-বিদেশের প্রায় ২৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিডনি রোগ ও প্রতিরোধ, হেমোডায়ালাইসিস ও পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস, কিডনি সংযোজন প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করেন। এতে দেশের প্রায় তিন শতাধিক চিকিৎসক অংশ নেন।