সঞ্জীবনী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগ

১৬ তলার জানালা ঠিকরে ঘরে পড়ছে আলো।চারিদিকে রোগী আর চিকিৎসকদের ভিড়।রোগী দেখায় ব্যস্ত চিকিৎসকরা।নার্সদের সহানুভূতিশীল আচরণে সন্তুষ্ট রোগীরা। এমন পরিবেশই দেখা গেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালের ডি ব্লকের মেডিসিন বিভাগে।
পেটে টিউমার নিয়ে ১৬ দিন ধরে ভর্তি রয়েছেন মো. সমশেদ (৮৫)। বললেন, ‘এখানে চিকিৎসা ভালো। আর সরকারি হাসপাতালে কিছু অসুবিধা তো থাকবে,সেগুলো মেনে নেই। এরপরও এখানকার চিকিৎসক, নার্সরা অনেক আন্তরিক।’
কথা হয় সোমা মণ্ডলের সঙ্গে। পেটের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ১০ দিন ধরে ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালে। জানালেন, ‘বেড ভাড়া ফ্রি। তবে অনেক এক্সরে বাইরে থেকে করতে হয়।’ তবে ডাক্তারদের চিকিৎসায় বেশ সন্তুষ্ট তিনি।
১৯৬৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে সীমিত পরিসরে চালু হয় সাবেক পিজি বা আইপিজিএমআর হাসপাতাল। তখনই সেখানে চালু হয় মেডিসিন বিভাগ। স্বাধীনতার পর শাহবাগ হোটেলে স্থানান্তরিত হয় হাসপাতালটি। তখন পুরোপুরি মেডিসিন বিভাগ চালু হয়।
জাতীয় অধ্যাপক নুরুল ইলসাম তখন পিজির পরিচালক ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই বিভাগটি চালু হয়। কয়েকজন অধ্যাপক ছিলেন তখন।
বিভাগটি নিয়ে কথা হয় এর ডিন অধ্যাপক ডা.এ বি এম আবদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আশির দশকে এসে হাসপাতালের সি ব্লকে শুরু হয় মেডিসিন বিভাগ। পরে এটি আরো বাড়ে। এখন কেবল ডি ব্লকে মেডিসিন বিভাগ রয়েছে। ৯৮ সালে এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হয়।’
ডা. আবদুল্লাহ জানান, ‘বর্তমানে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক রয়েছেন ১৭ জন। মেডিকেল অফিসার রয়েছেন ২৫ থেকে ৩০ জন। এ ছাড়া এমডি কোর্সের রেসিডেন্স প্রোগ্রাম যাঁরা করছেন, তাঁরাও অনেক সময় মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করেন। তাঁরাও রোগী দেখেন, রোগীর পরিচর্যা করেন।’
চাহিদার তুলনায় শয্যা বাড়ানো যাচ্ছে না বলেও জানালেন ডা. আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ডি ব্লকের ১৬ ও ১৭ তলায় এখন মেডিসিন বিভাগ। বেড বাড়ছে, মানুষ বাড়ছে, তবুও এটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।’
সেবা
সকাল ৮টা থেকে রোগী দেখার কাজ শুরু হয়। শিফটিং থাকে। কিছু দিন ধরে বিকেলে বিশেষ আউটডোর চালু হয়েছে। ছুটির দিন ছাড়া সব দিনই এখানে এটি চালু থাকে। এখানে ২০০ টাকা ভিজিট দিয়ে রোগী দেখাতে হয়। এ ছাড়া সকালের শিফটে দেখাতে ৩০ টাকা দিয়ে টিকেট কাটতে হয়।
ওয়ার্ডে ৯০ থেকে ৯৫টি শয্যা রয়েছে। অধিকাংশ শয্যা বিনা ভাড়ায়। তবে কিছু শয্যা ভাড়া দেওয়া হয়। ২৩০ টাকা ভাড়া। এ ছাড়া কেবিনগুলো ভাড়ায় চলে।
দরিদ্র রোগীদের জন্য বিশেষ তহবিল রয়েছে। এখান থেকে দরিদ্র রোগীদের সাহায্য করা হয়।
শিক্ষা কার্যক্রম
বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রমে দেশি ছাত্রদের পাশাপাশি রয়েছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরাও। নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান ও ভারত থেকেও শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসেন।
প্রতিদিন আউট ডোরে পাঁচ হাজারের বেশি রোগী দেখা হয়। তবে চিকিৎসকদের বেশ হিমশিম খেতে হয় রোগীদের নিয়ে। এ বিষয়ে ডা.এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘প্রায় ২০ কোটি মানুষের দেশ এটি। যত রোগী আসে কুলানো যায় না তাদের চিকিৎসা দিয়ে। অসম্ভব চাপ রোগীদের। রুম কম। ডাক্তাররা চাপ সামলাতে হিমশিম খেয়ে যান।’
তবে আশাবাদী ডা.আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতিটি বিভাগে যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যায়ের মতো হাসপাতাল করা যেত তাহলে হয়তো চাপ কমত। বর্তমানে সরকার এ রকম বড় হাসপাতাল করার উদ্যোগ নিচ্ছে। রাজশাহী ও চট্টগ্রামে এরকম হাসপাতাল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আশার করছি ধীরে ধীরে বিষয়টির সমাধান হবে।’