পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি হাড়ক্ষয় রোগে আক্রান্ত

পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে অস্টিওপরোসিসে আক্রান্তের হার বেশি। এর কারণ মহিলাদের হাড়ের গঠন এমনিতেই পুরুষদের চেয়ে কিছুটা দুর্বল। বিশ্ব অস্টিওপরোসিস দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার (২১ অক্টোবর) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মিলন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা জানানো হয়।
এতে বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল-এই বিষয়টি মাথায় রেখে আপনি যখন দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন পরিবর্তন আনার কথা ভাবেন, অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করার জন্য হাড়কে সুস্থ রাখা সেই তালিকার শীর্ষে রাখা উচিত।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, অস্টিওপরোসিস এমন একটি রোগ যেখানে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়, ফলে ছোটখাটো আঘাত বা পতন, এমনকি গুরুতর ক্ষেত্রে হাঁচি দেয়ার মতো সহজাত কাজ থেকেও হাড় ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। এটি ধীরে ধীরে কয়েক বছর ধরে বিস্তৃত হয়, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পতন বা কোনো আঘাতের ফলে হাড় ভেঙে যায় এবং ব্যথা অনুভূত হলে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে আসেন। অথচ প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে জটিলতার অনেক আগেই এই রোগ নির্ণয় ও উপযুক্ত চিকিৎসা সম্ভব।
অস্টিওপরোসিসের কারণ সম্পর্কে অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, অস্টিওপরোসিস বয়স্ক পুরুষ ও নারীদের মাঝে বেশ সাধারণ একটি রোগ, কিন্তু হাড়ের ক্ষয় কম বয়স থেকেও শুরু হতে পারে। ৫০ বছর বয়সের পর থেকে নতুন হাড় গঠনের চেয়ে হাড়ের ক্ষয়ের মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে হাড়ের ঘনত্ব কমে গিয়ে হাড় ক্ষয় ত্বরান্বিত হয়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে অস্টিওপরোসিসে আক্রান্তের হার বেশি। এর কারণ মহিলাদের হাড়ের গঠন এমনিতেই পুরুষদের চেয়ে কিছুটা দুর্বল। এ ছাড়াও মেনোপজ পর্যায়ে (মাসিক সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাওয়া) পৌঁছানোর পর ইস্ট্রোজেনের অভাবে দ্রুত হাড় ক্ষয় হতে থাকে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রতি তিনজন নারীর একজন, এবং প্রতি পাঁচজন পুরুষের একজন অস্টিওপরোসিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বয়সের সাথে বর্ধনশীল হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি ছাড়াও আরো কিছু কারণ আছে, যেগুলোর জন্য অস্টিওপরোসিস ত্বরান্বিত হতে পারে। যেমন–নিত্যদিনের খাবারে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, প্রোটিন ইত্যাদি কম গ্রহণ করা, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, ধূমপান, মদ্যপান, শরীরে ইস্ট্রোজেন (নারীদের ক্ষেত্রে) এবং টেস্টোস্টেরনের (পুরুষদের ক্ষেত্রে) মাত্রা কমে যাওয়া ইত্যাদি।
হাড় ক্ষয়ের লক্ষণ ও উপসর্গ সম্পর্কে বক্তারা জানান, হাড় ক্ষয়ের প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে না। হাড় বেশি দুর্বল হয়ে গেলে যেসব লক্ষণ দেখা যায়-পিঠে ব্যথা অনুভব করা, উচ্চতা কমে যাওয়া (৪ সে.মি. বা তার চেয়েও বেশি কমে যাওয়া), হাঁটার সময় কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা (পাশের দিকে বেঁকে যাওয়া বা সামনের দিকে ঝুঁকে যাওয়া), শ্বাসকষ্ট অনুভব করা (সামনের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার কারে ফুসফুসের সক্ষমতা কমে যাওয়া)।
বক্তারা জানান, অস্টিওপরোসিস একটি নিরব ঘাতক রোগ। বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ করা সম্ভব। যার মধ্যে অন্যতম হলো ক্যালসিয়াম গ্রহণ। নারীদের ক্ষেত্রে ৫০ বছর বয়স হলে ১০০০ মিলিগ্রাম (মি.গ্রা.) এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে হলে প্রতিদিন ১২০০ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম গ্রহণ। ৭০ বছর বয়সের কম হলে প্রতিদিন ১০০ এবং ৭০ বছর বয়সের উর্দ্ধে হলে প্রতিদিন ১২০০ মি.গ্রা. সিয়াম গ্রহণ করা উচিৎ।
সভাপতির বক্তব্যে বিএসএমএমইউর ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের মোহাম্মদ সালেক বলেন, সুস্থ থাকার জন্য হাঁটার বিকল্প নেই। তাই সামান্য দূরত্বের গন্তব্যে সবাইকে হেঁটে যেতে হবে।