দেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশ অসংক্রামক রোগে, নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ

বাংলাদেশের মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ দায়ী। তবে এ জাতীয় রোগ মোকাবিলায় সরকারের অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র চার দশমিক দুই শতাংশ, যা খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার (৯ এপ্রিল) বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস-২০২৫ উপলক্ষে অ্যাডভোকেসি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব তথ্য জানান। ওয়েবিনারটি আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করেছে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)।
বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ খাতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোসহ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে টেকসই অর্থায়ন জরুরি।
ওয়েবিনারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৪ সালের একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে জানানো হয়, অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে ৮০ ভাগ স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে (সরকারি এবং বেসরকারি উভয়ই) অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা।
প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার অংশ হিসেবে অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও এ খাতে অর্থ বরাদ্দ এবং বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারে সাফল্য দেখাতে পারেনি।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ মোকাবিলায় ইতিমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে বিনামূল্যে এ রোগের ওষুধ প্রদানের কাজ শুরু হলেও উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিশ্চিত করা জরুরি এবং এজন্য টেকসই অর্থায়ন প্রয়োজন।
এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ারের (সিবিএইচসি) লাইন ডিরেক্টর ডা. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, সরকার উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের পাশাপাশি কমিউনিটি ক্লিনিকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। এই মুহূর্তে ওষুধের কিছুটা ঘাটতি আছে। তবে আমরা দ্রুতই তা কাটিয়ে উঠতে পারবো।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ যেন না বাড়ে সে জন্য খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনাচরণে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি বাজেট বৃদ্ধির বিষয়ে বিশেষভাবে জোর দিতে হবে।
এ ছাড়া ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অধ্যাপক ডা. মলয় কান্তি মৃধা বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে অঞ্চল, বয়স, শিক্ষা এবং লিঙ্গভেদে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপের পার্থক্য আছে। গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রতিকার এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এ সময় জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক জনাব এবিএম জুবায়ের। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন প্রজ্ঞার কোঅর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই ওয়েবিনারে অংশ নেন।