তরুণদের মাঝে স্ট্রোকের প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ

স্ট্রোক এমন এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য জটিলতা যেখানে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। কেবল বার্ধক্য পীড়িতদের মধ্যেই নয়, তরুণদের মধ্যেও রয়েছে স্ট্রোকের ঝুঁকি। আর এই প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।ক্রমবর্ধমান এই স্বাস্থ্য সংকট নিয়েই আজকের স্বাস্থ্য-বিষয়ক নিবন্ধ। কোন কোন বিষয়গুলো এর জন্য দায়ী, কিভাবে তা শনাক্ত করবেন, এ থেকে বাঁচার উপায়ই বা কি- চলুন তা বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
তরুণদের মাঝে স্ট্রোকের প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ
তৈলাক্ত বা ভাজা খাবারের প্রতি আসক্তি
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বহুগুণে বেড়েছে ভাজা-পোড়া খাবারের বিচিত্রতা। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত রেস্তোরাঁ পর্যন্ত সর্বত্র রীতিমত উৎসবমুখর আয়োজনে চলে নিত্য-নতুন পরিবেশনা। আর সেগুলোতেই হামলে পড়েন তরুণরা। এদের মধ্যে যাদের একটু বেশি ভোজনপ্রীতি রয়েছে, তারা কোনোরকম বাছ-বিচারের তোয়াক্কা করেন না। ফলে দেখা দিচ্ছে স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরল- যার প্রতিটিই স্ট্রোকের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
এই মুখরোচক খাবারগুলোতে থাকে ট্রান্স ফ্যাট, পরিশোধিত শর্করা এবং অত্যধিক সোডিয়াম। এই উপাদানগুলো ধমনীতে প্লাক তৈরি করে রক্তের প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটায়। কোনো নিয়ন্ত্রণ ব্যতীত এই ভোজ অভ্যাসে পরিণত হলে তা প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণ হয়। এর ফলে রক্তনালীগুলো সঙ্কুচিত হয় ও চরম পর্যায়ে পুরো নালীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়; পরিণতিতে স্ট্রোক হয়।
শরীরের দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থা
প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে কমে গেছে কায়িক শ্রমের কাজ। এর বদলে জায়গা করে নিয়েছে মানসিক শ্রমযুক্ত কাজ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অতিবাহিত হচ্ছে কম্পিউটারের সামনে বসে। এখানে দীর্ঘ সময় যাবত শরীরের পেশীগুলোর ন্যূনতম নড়াচড়া হয় না। একই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিক জীবনব্যবস্থা বিশাল তরুণ সমাজকে ঠেলে দিয়েছে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের দিকে। ফলে সবচেয়ে কর্মক্ষম শ্রেণিটির দিনের একটা বড় সময় কেটে যাচ্ছে বসে বা শুয়ে থাকা।
এই অচলাবস্থা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যকে দুর্বল করে তোলে। শারীরিক ক্রিয়াকলাপের অভাব রক্ত সঞ্চালনের দক্ষতা হ্রাস করে, যার ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ হয় না। আর এরই কারণে শরীরের ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগের উপক্রম হয়। এগুলো সবই স্ট্রোকের দিকে পরিচালিত করে। নিষ্ক্রিয় পেশীগুলো রক্তে শর্করা এবং কোলেস্টেরলকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে রক্তের ধমনীতে ক্লট তৈরি হয়ে স্ট্রোকের ঘটনা ঘটে।
ধূমপান এবং উদ্দীপক পানীয় গ্রহণ
তামাক ব্যবহারে ধমনীকে শক্ত করে দেয়, যার ফলে বাড়ে রক্তের চাপ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় রক্তনালী। নিকোটিন এবং কার্বন মনোক্সাইড মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমায়, যা ক্লট গঠনের অন্যতম প্রধান কারণ। উপরন্তু, উচ্চ ক্যাফেইন বা উদ্দীপক পানীয় হৃৎপিণ্ডের নিয়মিত ছন্দে ব্যাঘাত ঘটায় এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। এই পদার্থগুলোর অত্যধিক সেবন স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে। এতে দীর্ঘমেয়াদে রক্তনালী ধ্বংস হয়, যা স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ।
দুশ্চিন্তা ও মানসিক অসুস্থতা
বিগত দশকে শারীরিক সমস্যাগুলোর পাশাপাশি অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে মানসিক জটিলতাগুলো। অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা, হতাশা ও নিরাশার নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হওয়া জনগোষ্ঠির একটা বিশাল অংশ তরুণ সম্প্রদায়।
দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ কর্টিসলের মাত্রা বাড়িয়ে রক্তচাপ ও প্রদাহ বৃদ্ধিতে অংশ নেয়, যেগুলো স্ট্রোকের দিকে নিয়ে যায়। উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং ক্ষতিকারক পদার্থ সেবনের সঙ্গে জড়িত। উপরন্তু, রক্ত সঞ্চালনে চাপের তারতম্য ক্ষণস্থায়ী স্ট্রোকের সূত্রপাত ঘটায় যেটি ইস্কেমিক অ্যাটাক নামে পরিচিত। এর আরেক নাম মিনি-স্ট্রোক, যা সাধারণত বড় কোনও স্ট্রোকের আগে হয়ে থাকে।
স্ট্রোকের যে লক্ষণগুলো তরুণদের মধ্যে দেখা যায়
আকস্মিক দুর্বলতা
স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় লক্ষণগুলোর একটি হচ্ছে হঠাৎ দুর্বলতা বা অসাড়তা। এটি সাধারণত শরীরের যে কোনও একপাশ অসাড় হওয়া থেকে শুরু হয়। শরীরের আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের নেপথ্যে থাকে মূলত মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল। সেখানে রক্ত প্রবাহ না গেলেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় পর্যুদস্ত ব্যক্তিরা তাদের এক হাত বা পা তুলতে বেশ ভারী অনুভব করে। কারও ক্ষেত্রে তাদের মুখের একপাশ ঝুলে যায়। কোনও ক্ষেত্রে এই দুর্বলতা কয়েক মিনিট স্থায়ী হতে পারে, আবার কারও ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী হয়।
কথা বলার সময় শব্দ উচ্চারণে প্রতিবন্ধকতা
মস্তিষ্কের একটি অংশ রয়েছে যেটি কথা বলার সময় মুখের স্বাভাবিক পেশী সঞ্চালন অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে। স্ট্রোকের ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের এই অঞ্চলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে কথা বলার সময় সুসংগত বাক্য গঠনে অসুবিধা হয়। কিছু ব্যক্তি অ্যাফেসিয়া অনুভব করতে পারে। এটি এমন এক অবস্থা যেখানে সঠিক শব্দটি স্মরণে আসে না বা কথাগুলো অসংলগ্ন হয়। কেউ কেউ ডিসার্থ্রিয়ায় ভুগেন। এর ফলে মুখ এবং জিহ্বার পেশী দুর্বল হয়ে যায় বিধায় উচ্চারণ সমস্যা দেখা দেয় এবং শব্দগুলো অস্পষ্ট শোনায়। এই উপসর্গগুলো হঠাৎ ঘটতে পারে এবং পরবর্তীতে এর তীব্রতা ওঠানামা করতে পারে।
দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত
মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল প্রসেসিং এলাকাটি মানুষের দৃষ্টিশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। এখানে রক্ত প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে দৃষ্টিশক্তিতে অসঙ্গতি দেখা দেয়। আক্রান্ত ব্যক্তিরা এক বা উভয় চোখে অস্পষ্ট দেখে, কেউ কেউ সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে। সাধারণ লক্ষণের মধ্যে আরও রয়েছে ডিপ্লোপিয়া বা ডাবল ভিশন, যার ফলে ব্যক্তি যে কোনও জিনিস দুটো দেখতে পায়। এক চোখে অস্থায়ী অন্ধত্ব অ্যামাউরোসিস ফুগাক্স নামে পরিচিত। এটি আসন্ন স্ট্রোকের জন্য একটি সতর্ক সংকেত।
গুরুতর মাথাব্যথা
তীব্র মাথাব্যথা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পূর্বাভাস হতে পারে যার কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোকের উপক্রম হয়ে থাকে। সাধারণ মাথাব্যথার সঙ্গে এর পার্থক্য হলো এটি আকস্মিকভাবে বাড়তে থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বমি বমি ভাব, বমি; এমনকি ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। ব্যক্তি শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবেন না। কোনো কিছু না ধরে হাঁটা বা দাড়িয়ে থাকা তার জন্য বেশ কঠিন হয়ে উঠবে।
সাধারণ বোধের অবনতি ও স্মৃতিভ্রম
মূল সমস্যাটা যখন মস্তিষ্ক কেন্দ্রিক, তখন বোধগম্যতা ও স্মৃতিশক্তির বিলোপ ঘটাটা স্বাভাবিক। এর শুরুটা হয় আকস্মিকভাবে কোনো কিছু ভুলে যাওয়া থেকে। ব্যক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কিছুর প্রতি মনোযোগ দিতে পারেন না। কি কি বিষয়ে কথা বলা হচ্ছে তার মধ্যে সামঞ্জস্যতা বিধান করা এদের জন্য কঠিন হয়ে ওঠে। কেউ কেউ পরিচিত লোকেদের পরিপূর্ণভাবে চেনার জন্য বেশ সময় নিয়ে ফেলেন। এদের অনেকেই পারিপার্শ্বিক অবস্থা বুঝে প্রাসঙ্গিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এরা হতবাক বা নির্লিপ্ত হয়ে যান।
কারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন
তরুণদের মধ্যে যারা নিয়মিত ধূমপান ও উদ্দীপক পানীয় গ্রহণ করেন এবং দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপে রয়েছেন তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি সর্বাধিক। এছাড়াও অতিরিক্ত স্থূলতা, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস এবং দীর্ঘ সময় বসে থাকা সামগ্রিকভাবে স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ায়। উপরন্তু, পরিবারে পূর্বে কারও উচ্চ রক্তচাপ বা রক্ত জমাট বাঁধার ব্যাধি থাকলে তারাও এই ঝুঁকির আওতায় পড়েন।
তরুণদের স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়
সুষম খাদ্যাভ্যাস গঠন
নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে একটি পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা তৈরি করা উচিত। বিভিন্ন ধরনের বীজ জাতীয় খাবার, ফলমূল, শাকসবজি এবং চর্বিহীন প্রোটিন কোলেস্টেরল গঠন প্রতিরোধ করে ধমনী সুদৃঢ় রাখতে সাহায্য করে। মাছ এবং বাদামে পাওয়া ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদযন্ত্রে ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে। অপরদিকে, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। সম্মিলিতভাবে এই খাবারগুলো স্ট্রোকের বিরুদ্ধে শরীরকে রীতিমত দূর্গ বানিয়ে তুলতে পারে।
নিয়মিত শরীর চর্চা
সুষম খাবার গ্রহণ এবং উপযুক্ত শরীর চর্চা উভয়েরই যুগপৎভাবে চলতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে রক্তচাপ হ্রাস করে এবং স্থূলতা প্রতিরোধ করে। দ্রুত হাঁটা, জগিং এবং সাইকেল চালানোর মতো অ্যারোবিক ব্যায়াম হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। একই সঙ্গে ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায়, যা ধমনীকে শক্ত হয়ে যাওয়া থেকে দূরে রাখে। শরীর চর্চা বিপাকীয় স্বাস্থ্যকে সমুন্নত রেখে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও শারীরিক অনুশীলন প্রদাহ কমায়, যা রক্তে ক্লট তৈরির প্রধান প্রভাবক।
ক্ষতিকর অভ্যাস এড়িয়ে চলা
স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য তামাক, অ্যালকোহল ও অন্যান্য মাদক থেকে দূরে থাকা অত্যাবশ্যক। এমনকি সাধারণ ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত সেবনও রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। দীর্ঘদিনের অভ্যাস বদলানোর জন্য বিশেষজ্ঞ পরামর্শদাতার সরণাপন্ন হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবার ও আশেপাশে থাকা আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি ব্যক্তিরও পরম সদিচ্ছা ও প্রচেষ্টা থাকা জরুরি। তাৎক্ষণিক ভাবে পরিত্যাগের সুযোগ না থাকলেও প্রতিদিন একটু একটু করে চেষ্টা করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অন্যান্য ইতিবাচক কায়িক শ্রমযুক্ত কাজের মধ্য দিয়ে মনকে সার্বক্ষণিক ব্যতিব্যস্ত করে রাখতে হবে। একই সঙ্গে অবসরগুলো প্রিয় জনদের আন্তরিক আড্ডায় ভরিয়ে তুলতে হবে।
স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা
স্ট্রোকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার জন্য স্বাস্থ্যকর ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। রাত জেগে কাজ করে দিনে ঘুমানো মোটেই উৎপাদনশীলতার সহায়ক নয়। বরং তা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য বিনষ্টের পটভূমি তৈরি করে। রাতে ঘুমানোর ক্ষেত্রেও দেরি করা অনুচিত। কারণ এর ধারাবাহিকতায় এক সময় পুরো রাত অনিদ্রায় কেটে যায়। এর জন্য বিশেষ করে ডিজিটাল ডিভাইসগুলোতে স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আনা আবশ্যক। কেননা স্মার্টফোনে অতিবাহিত সময়ের বিস্তৃতি গভীর রাত ছাড়িয়ে যায়। এই কারণে স্মার্টফোন ব্যবহারকারিদের সিংহভাগ তরুণ সমাজকে প্রায় অনিদ্রায় ভুগতে দেখা যায়।
এই সমস্যার নিরসণকল্পে যত দ্রুত সম্ভব ঘুমিয়ে পড়ে ভোরে সূর্যের আলো ফোটার আগেই উঠে যাওয়া উত্তম। এটি মুক্ত বাতাসে শারীরিক অনুশীলনের জন্য শ্রেষ্ঠ সময়। ঘুমাতে যাওয়া এবং জেগে ওঠার সময়টিও প্রতিটি একই ভাবে অনুসরণ করতে হবে। ঘুমের ভিন্ন রুটিন মন-মেজাজের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যা পরিণতিতে স্বাস্থ্যহানির অবতারণা ঘটায়।
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটানো
হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ফাংশনের জন্য খাওয়া, ঘুম, ও ব্যায়ামের পাশাপাশি মানসিক চাপমুক্তিও দরকারি। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও বদমেজাজ সম্পন্ন ব্যক্তিদের রক্তচাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা বেশি থাকে। এর বিপরীতে ধ্যান, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং নিয়মিত শরীর চর্চা মানসিক ভারসাম্যের ক্ষেত্র তৈরি করে।
এর সঙ্গে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে যুক্ত হতে পারে যে কোনও কাজ-কর্মে ইতিবাচকতা এবং স্বল্পতুষ্টি। এই দৃষ্টিভঙ্গি উদ্বেগ, বিষণ্নতা বা মানসিক আঘাতকে লাঘব করার শক্তি দেয়। নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনাগুলোর প্রতিক্রিয়া কিভাবে করা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে পরিচালিত হয় একজন ব্যক্তির জীবন-ব্যবস্থা। ভালো-মন্দ নির্বিশেষে প্রতিটি ঘটনায় ইতিবাচক ও গঠনমূলক সাড়া প্রদানের মাধ্যমে সুস্থ মনের বিকাশ ঘটানো সম্ভব।
সবশেষ, তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের ক্রমবর্ধমান ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন এবং মানসিক অসুস্থতা। কায়িক শ্রম না করা ও ক্ষতিকর খাদ্যাভ্যাস এই প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করে। এর ফলে আকস্মিক দূর্বলতা, উচ্চারণগত অস্বাভাবিকতা, দৃষ্টি, বোধ ও স্মৃতি শক্তির অবনতির মতো উপসর্গ দেখা দেয়। রুটিন মাফিক সুষম আহার, ঘুম ও শরীর চর্চার মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারণ পদ্ধতি বাঁচাতে পারে এই মরণঘাতী স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে। পাশাপাশি মনের সুস্থতার লক্ষ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটানোও জরুরি। এই পদক্ষেপগুলোর দৌলতে দীর্ঘমেয়াদে স্ট্রোকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব।