কুকুর-বিড়ালের আক্রমণের শিকার দিনে ৩৭২ জন

ঢাকা ও আশেপাশে কুকুর-বিড়ালসহ বিষাক্ত প্রাণির আক্রমণের শিকার হচ্ছেন গড়ে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৬ জন মানুষ। আক্রান্ত এসব রোগীদের জলাতঙ্ক রোগের ঝুঁকি এড়াতে নিতে হচ্ছে প্রতিষেধক টিকা বা ভ্যাকসিন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা না নিলে হতে পারে ভয়াবহ জলাতঙ্ক। আক্রান্তদের মধ্যে সিংহভাগই কুকুরের কামড়ের শিকার, এরপরই রয়েছেন বিড়ালের আক্রমণের শিকার রোগীরা।
ঢাকা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত চার মাসে মোট ৪৪ হাজার ৬১৫ জন প্রাণির আক্রমণের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। যা প্রতি মাসে গড়ে ১১ হাজার ১৫৪ জন, দৈনিক গড়ে ৩৭৩ জন এবং প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৬ জন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আক্রান্তদের দুই-তৃতীয়াংশ কুকুরের ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক বিড়ালের কামড়ের শিকার। বেজি, বানর ও শিয়ালের আক্রমণের শিকার রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে খুব কম।
হাসপাতালের সূত্রে আরও জানা গেছে, গত বছর ২০২৪ সালে এই হাসপাতালে প্রাণির আক্রমণে চিকিৎসা নিয়েছিলেন এক লাখ ২২ হাজার ২৬৩ জন, যা মাসিক গড়ে ১০ হাজার ১৮৮ জন। অর্থাৎ, গত বছরের তুলনায় এ বছর রোগীর সংখ্যা গড়ে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে ৯৪ হাজার এবং ২০২২ সালে ৮৯ হাজার ৯২৮ জন চিকিৎসা নিয়েছিলেন। উদ্বেগের বিষয় হলো, গত বছর ২০২৪ সালে ৫২ জন রোগী জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এবং চারজন স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যান।

ঢাকা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আরিফুল বাসার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, কুকুর-বিড়ালসহ এই প্রাণিগুলো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে শখের বশে এদের লালন-পালন করলেও রাস্তাঘাটে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিনিয়ত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এই কারণে সরকারকে প্রচুর ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে হচ্ছে, যা ব্যয়বহুল।
ডা. আরিফুল বাসার মনে করেন, এসব প্রাণির সংখ্যা কমিয়ে আনা প্রয়োজন। যারা শখ করে প্রাণী পালন করেন, তাদের অবশ্যই টিকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মালিকানাবিহীন প্রাণিদের বংশবিস্তার রোধে কমিউনিটি ভিত্তিক টিকাদান কার্যক্রম জরুরি। উন্নত দেশে প্রাণি পালনের জন্য কর ধার্য করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেকে ১০ থেকে ১৫টি পর্যন্ত কুকুর-বিড়াল পালন করেন, যা প্রতিবেশীদের বিরক্তির কারণ হয়। তাই এসব প্রাণিকে করের আওতায় আনা গেলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যু শতভাগ হওয়ায় জলাতঙ্ক রোগ নির্মূলের লক্ষ্যে ২০১১ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচি চালু করে। সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) শাখা এই কর্মসূচি পরিচালনা করছে। সিডিসি বলছে, জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যু শতভাগ হওয়ায় ২০১১ সালে বিনা মূল্যে সারা দেশে টিকা দেওয়া শুরু করা হয়।
জলাতঙ্ক রোগের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে ডা. আরিফুল বাসার জানান, এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুহার শতভাগ। জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্যে সরকার ২০১১ সালে বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এশিয়া ও আফ্রিকায় জলাতঙ্কের প্রাদুর্ভাব বেশি। মৃতদের ৪০ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের কম। ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, জলাতঙ্কে মৃত্যুর হারে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয় ও ৯৬ শতাংশ ক্ষেত্রেই কুকুরের কামড় এর প্রধান কারণ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলাতঙ্কে আক্রান্ত ব্যক্তির এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যেই মৃত্যু হতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের উপব্যবস্থাপক ডা. এস এম গোলাম কায়সার জানান, ২০১০ সালের আগে জলাতঙ্কে বছরে দুই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হতো। টিকাদান কর্মসূচির ফলে সেই সংখ্যা কমে দুই অঙ্কে নেমে এসেছে।