আর কবে ‘শিখবেন’ বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা?

‘ব্যর্থতার মুখোমুখি হও। ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ ব্যর্থতা তোমার মুখোমুখি হতে ভয় পায়’—মহেন্দ্র সিং ধোনি বলেছিলেন কথাটা। ক্রিকেটের সবচেয়ে ঠান্ডা মাথার অধিনায়ক ব্যর্থতাকে সঙ্গে নিয়ে ছুটেছেন সফলতার দিকে। সফল তিনি হয়েছেনও। ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক চোখের সামনে দেখেছেন ভাঙা-গড়ার খেলা। খেয়াল করলে দেখবেন, ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়ে হারানোর চ্যালেঞ্জটা ধোনি নিয়েছেন। সফল যারা, তারা সবাই নেন। কিন্তু, বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারা আর কত ব্যর্থ হলে সাফল্যের চ্যালেঞ্জ নেবেন?
‘আমাদের শিখতে হবে, আরও বেশি শিখতে হবে’—সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজ হারের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক এভাবেই বলছিলেন। ২৫ বছর ধরে ক্রিকেট খেলে যাওয়া দেশের অধিনায়ক নবীন এক দেশের কাছে হেরে এমন কথা বলেন। যা আদৌ মানানসই নয়। লিটন বলেছিলেন, হার জীবনেরই অংশ। তা সত্যি। কিন্তু, তাকে অভ্যাস বানানো কতটা যৌক্তিক? তারচেয়ে বড় প্রশ্ন, চোখের সামনে নিজেদের ক্রমাগত অধঃপতন দেখেও ঘুম ভাঙছে না বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের।
আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজটি ছিল বাংলাদেশের কাছে গা গরমের অনুষঙ্গ। যাদের সঙ্গে আগের তিন দেখায় শতভাগ জয়, টি-টোয়েন্টির র্যাঙ্কিংয়ে যাদের অবস্থান ১৫তম, তাদের তো হেসেখেলেই হারানোর কথা। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ হেসেখেলে না হলেও জিতেছে। দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় আরব আমিরাত। দাঁড়াতেই পারে। তাই বলে ২০৫ রান তাড়া করে জয় তুলে নেওয়া! শেষের ওভারগুলোতে বাংলাদেশের বোলারদের দেখে মনে হয়েছে, বড় কোনো দলের বিপক্ষে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে স্নায়ুর চাপ সামলাতে পারছে না তারা। অথচ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রত্যেকেই অভিজ্ঞ।
ইতিহাস রোজ রোজ হয় না। অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে আরব আমিরাত না হয় জিতল। শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ কী করেছে? আগের দুই ম্যাচের চেয়েও খারাপ, ম্যাচ ও সিরিজ দুটোই হাতছাড়া হয়েছে। বাঙালির চিরায়ত অজুহাতে এবার লিটন দোষ দিলেন পরে বল করাকে। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচেই বাংলাদেশ পরে বোলিং করেছে, রাতে বোলিংটা সেখানে কষ্টসাধ্য। অজুহাত চাইলে দেওয়া যায়। তার আগে ভাবতে হয়, আমি কে? কাদের অজুহাত দিচ্ছি? কাদের কাছে হেরে দিচ্ছি?
পেশাদার জগতে সবকিছুর জ্ঞান থাকা চাই। সব মুহূর্তে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার যোগ্যতা প্রয়োজন। প্রতিপক্ষের তুলনায় আপনি যখন বড় দল, তারা উল্টো চাপে থাকার কথা। অজুহাত দেওয়ার কথা। এখানে ঘটেছে উল্টোটা। যা বাংলাদেশ ক্রিকেটে নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। লজ্জা নামক শব্দটি এখানে এসে বেশ অসহায় হয়ে পড়ে।
শচীন টেন্ডুলকার বলেছিলেন, ‘সাফল্য ও সুখের চেয়ে বড় শিক্ষক হচ্ছে ব্যর্থতা ও দুঃখ।’ আমরা তাই ব্যর্থতা থেকে শিখে যাচ্ছি। শিক্ষানবিশ কাল আর শেষ হয় না। প্রতিটি ম্যাচ, সিরিজে হারের পর মুখস্ত বুলি আউরে দায় সারার গুণ বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের খুব ভালোভাবে রপ্ত করা। আখেরে ক্রিকেটের ক্ষতি তাই চোখে পড়ে না। উন্নতির চেষ্টাও শুধু মুখে মুখে। ম্যাচ শুরুর আগে ও পরে কথা শুনলে যে কারও মনে হবে, বাংলাদেশ এবার বুঝি কাঁপিয়েই দেবে!
তা আর হয় না। হতে হলে নিজেদের ভাঙতে হবে। বিশ্লেষণ করতে হবে। ছাঁটাই করতে হবে একগাদা ক্রিকেটারকে। শূন্যস্থান পূরণে আনতে হবে নতুনদের। পাইপলাইনে বিকল্প থাকলে তবেই তো বিলাসিতার সুযোগ আসবে। তা নিয়ে ভাবতে বয়ে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। তারা জানেন, মরচে ধরা ইঞ্জিন সারানো নয়, বদলাতে হয়। আর তা বদলাতে গেলে পুরো গাড়িতে চলবে ছুরি-কাঁচি। ড্রাইভিং সিটে বসে থাকাদের কথাও তো ভাবতে হবে, না কি!