১৮ দিনে গাজায় সহস্রাধিক ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েল

চলতি মাসের ৬ আগস্ট থেকে ইসরায়েলি সেনারা গাজায় তীব্র মাত্রায় অভিযান শুরুর পর জেইতুন ও সাবরা এলাকায় অন্তত এক হাজারের বেশি ভবন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও শত শত মানুষ আটকা পড়ে আছে।
ফিলিস্তিনের সিভিল ডিফেন্সের বরাত দিয়ে রোববার (২৪ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সাংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
রোববার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, চলমান গোলাবর্ষণ ও প্রবেশপথ অবরুদ্ধ থাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অসংখ্য নিখোঁজ সংক্রান্ত খবর পেলেও সাড়া দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, আর হাসপাতালগুলো হতাহতদের দিয়ে ভরে গেছে।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স বলছে, “ইসরায়েলি আগ্রাসন এত তীব্র যে আমাদের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা তা মোকাবিলা করার সক্ষমতা রাখে না। গাজার উত্তর কিংবা দক্ষিণ—কোথাও নিরাপদ আশ্রয় নেই। ঘরবাড়ি, আশ্রয়কেন্দ্র এমনকি বাস্তুচ্যুত শিবিরও ইসরায়েলি গোলাবর্ষণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে।”
ইসরায়েলি ট্যাংক ইতোমধ্যেই সাবরা এলাকায় প্রবেশ করেছে। প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণে ঠেলে দিচ্ছে তারা। মানবাধিকারকর্মীদের আশঙ্কা, রাফাহর মতো এবার গাজা সিটিকেও সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল।
রোববার আল-জালা সড়কের একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হন, যাদের একজন শিশু। একই দিনে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মোট ৫১ জন প্রাণ হারান। এর মধ্যে ২৭ জন গাজা সিটিতে ও ২৪ জন ত্রাণ প্রত্যাশী ছিলেন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আরও ৮ জন অনাহারে মারা গেছেন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৯ জনে, যার মধ্যে ১১৫ শিশু।
ইসরায়েলি বাহিনী নিয়মিতভাবে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, “গাজায় দুর্ভিক্ষ এখন শেষতম বিপর্যয়। এখানে মানুষ নরক ভোগ করছে।”
তিনি আরও বলেন, “‘নেভার এগেইন’ (কখনো আর নয়) স্লোগানটি ইচ্ছাকৃতভাবে ‘আবার’ হয়ে গেছে। এই অমানবিকতাকে অস্বীকার করা মানবতাবিরোধী কাজ।”
তিনি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোকে প্রবেশের অনুমতি ও বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় ঢুকতে দেওয়ার আহ্বান জানান।
গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সতর্ক করে জানিয়েছে, মানুষ যেন ঘর না ছাড়ে। তাদের বক্তব্য, “গাজা উপত্যকার কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়। ইসরায়েল প্রতিদিন সর্বোচ্চ নৃশংসতা চালাচ্ছে, এমনকি আশ্রয়শিবিরের তাঁবুও বোমা মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে।”

আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খুদারি দেইর আল-বালাহ থেকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বিমান হামলা ও ড্রোন হামলার মুখে অনেক পরিবার ঘর ছেড়ে পালাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা এমন কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি যারা বলছিল, বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ড্রোন যেকোনো নড়াচড়ায় গুলি চালাচ্ছিল।”।