বাড়ছে নারীর স্থূলতা, আইসিডিডিআরবির গবেষণা

দেশে প্রতি পাঁচজন বিবাহিত নারীর মধ্যে একজন স্থূল অথবা অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী—আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ বা আইসিডিডিআরবির এক নতুন গবেষণায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি গবেষণাটির ফলাফল বিএমসি ওবেসিটি জার্নালে প্রকাশিত হয়। গবেষণায় স্থূলতার কারণ হিসেবে সম্পদের সূচক, শিক্ষার অবস্থা, টেলিভিশন দেখার সময়কালের মতো কিছু কারণকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ১৬ হাজার ৪৯৩ জন নারীর মধ্যে ১৮ শতাংশই বাড়তি ওজনের অধিকারী। শহরে বসবাসরত নারীদের মধ্যে শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে যুক্ত নারীদের চেয়ে পূর্ণ মাত্রার কর্মজীবী নয়, এমন নারীরা অধিক ওজন ও স্থূল হওয়ার দেড় গুণ (১.৪৪ গুণ) বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। আর শহর ও গ্রাম উভয় জায়গার ধনী ও খাদ্য সুরক্ষিত পরিবারের নারীরা বাড়তি ওজন ও স্থূল হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন।
২০১৬ সালে আইসিডিডিআরবির পুষ্টি প্রোগ্রামের প্রধান হরিবন্ধু শর্মা, আইসিডিডিআরবি ও আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের নিয়ে ১৮ থেকে ৪৯ বছরের নারীদের (যাঁরা বর্তমানে বিবাহিত বা পূর্বে ছিলেন) বেশি ওজন ও স্থূলতা-সংশ্লিষ্ট কারণগুলো চিহ্নিত করার জন্য বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১১-এর পুষ্টিসংক্রান্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করেন।
প্রধান গবেষক হরিবন্ধু শর্মার মতে, স্থূলতা সমস্যার ক্রমবর্ধমান অবস্থা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জনস্বাস্থ্য খাতের জন্য হুমকিস্বরূপ। ঐতিহ্যগতভাবে স্থূলতা ও অধিক ওজনের সমস্যা সাধারণত ধনী দেশগুলোর সমস্যা হিসেবে পরিচিত। তবে বর্তমান গবেষণাটিতে দেখা গেছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেও এর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এ দেশগুলোর স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সাধারণত অপুষ্টি ও সংক্রামক রোগ মোকাবিলায় সম্পদ ব্যয় করার প্রবণতা দেখা যায়। তবে যেহেতু তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়ছে, তাই তাদের অবশ্যই পুষ্টিসংশ্লিষ্ট অসংক্রামক রোগ ব্যবস্থাপনায়ও মনোনিবেশ করতে হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামীণ এলাকার চেয়ে শহুরে এলাকায় স্থূলতা ও অধিক ওজনের প্রাদুর্ভাব বেশি। তবে শর্মা মনে করেন, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে এ সমস্যার গভীরতা বোঝার জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে।
পরীক্ষামূলক এ গবেষণা ও অনুসন্ধান বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরের নারীদের স্থূলতা ও বেশি ওজন সমস্যা প্রতিরোধ কার্যক্রমের সঠিক কৌশল মূল্যায়নে সহায়তা করবে। শহর ও গ্রামের নারীদের স্থূলতা প্রাদুর্ভাব কমাতে জনস্বাস্থ্য কার্যক্রম অপরিহার্য বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
স্থূলতা মোকাবিলায় বিদ্যালয়ে, সমাজে ও কর্মক্ষেত্রে স্থূলতার পরিণতি, শারীরিক কর্মকাণ্ডকে উদ্বুদ্ধকরণ, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্থূলতা প্রতিরোধ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা দরকার। আর অধিক ওজনের সমস্যা মোকাবিলায়, বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় পুষ্টিগত অবস্থা প্রতিনিয়ত পদ্ধতিগত মূল্যায়ন ও নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসা গুরুত্বপূর্ণ বলেও শর্মা অভিমত ব্যক্ত করেন।
আইসিডিডিআরবির পুষ্টি ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক এবং এই গবেষণার জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘স্থূলতার এ উচ্চমাত্রা আমাদের দেশের চিকিৎসা বাজেটে প্রভাব ফেলবে। যদি এর মোকাবিলা করা না হয়, তবে অধিক ওজন এবং স্থূলতাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রোগ বাড়বে। যেমন : ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, হৃদরোগ ইত্যাদি।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে, প্রতিবছর কমপক্ষে ২৮ লাখ মানুষ বাড়তি ওজন ও স্থূলতার কারণে মারা যান। নারীদের জন্য স্থূলতা নানাভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। স্থূলতার কারণে তাঁরা ডায়াবেটিস ও এন্ডমেট্রিয়াল ক্যানসার, জরায়ুমুখ ক্যানসার, স্তন ক্যানসার, ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের মতো বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।